ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিও বলছে জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া উচিত

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

  বিএনপিও বলছে জামায়াতের ক্ষমা  চাওয়া উচিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এতদিন প্রকাশ্যে না বললেও এখন বিএনপিও ১৯৭১ সালের ভূমিকার জন্য জামায়াতকে ক্ষমা চাওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলছে। জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ’৭১-এর ভূমিকার জন্য তার দলকে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে পদত্যাগ করার পর অনানুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপির কোন কোন নেতা জামায়াতকে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেন। তবে বুধবার আনুষ্ঠানিক ও প্রকাশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৯৭১ সালের ভূমিকার জন্য জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া উচিত। এ দাবি এখন সকলের। দুপুরে তাঁতি দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলানগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার বিরোধিতা যারা করেছে আমরা অবশ্যই তাদের শাস্তি ও বিচার চাই। ১৯৭১ সালের ভূমিকা নিয়ে জামায়াতের ক্ষমা চাওয়ার দাবি যুক্তিসংগত। তবে যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, তারাও আজ পর্যন্ত জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি। তাই জামায়াতের পাশাপাশি তাদেরও জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। নজরুল ইসলাম বলেন, যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে তারাও তো আজ পর্যন্ত জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। সুতরাং আমরা মনে করি, যারা অপরাধ করেছে, তাদের সবারই ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। আর আমরা যদি কোন দোষ করি তাহলে আমাদেরও উচিত জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। কিন্তু আমাদের দেশে সেই রীতির প্রচলন নেই। জামায়াত স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। এ জন্য তাদের দুঃখ, লজ্জা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। জামায়াত বিলুপ্ত করে আলাদা দল গঠন করার বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এটা জামায়াতের নিজস্ব ব্যাপার। অপর এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, জামায়াত এখনও বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটে আছে। আমার জানা মতে ২০-দলীয় জোটে কোন পরিবর্তন ঘটেনি। জামায়াতের পক্ষ থেকে কখনো বলা হয়নি যে, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে থাকবে না। তবে জামায়াত একটি আলাদা রাজনৈতিক দল। সেই দলের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ, অধিকার ও ক্ষমতা তাদের আছে। জামায়াতের কাঠামোগত সংস্কার, নাম বদল বা নতুন দল গড়ার পরিকল্পনার বিষয়ে যেসব খবর সংবাদ মাধ্যমে এসেছে সে বিষয়েও নজরুল ইসলাম খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এগুলো তাদের নিজস্ব ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমার মন্তব্য করার সুযোগ নাই। উল্লেখ্য, একাত্তরের ভূমিকার জন্য দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা না চাওয়ায় ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের আইনজীবী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগিতায় হত্যা ও ধর্ষণের মতো অপরাধের দায়ে জামায়াতের সাত শীর্ষ নেতার সাজা হয়েছে আদালতে, তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। একাত্তরের সেই ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বানে কখনই সাড়া দেননি জামায়াত নেতারা। রাজ্জাকের আগে আর কেউ দলের সেই অবস্থানের জন্য অনুতাপও প্রকাশ করেননি। বিএনপি নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল বলে দাবি করে এলেও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করে আসছে সব সমালোচনা উপেক্ষা করে। যুদ্ধাপরাধে দ-িত এক জামায়াত নেতার ছেলেসহ দলটির দুই ডজন নেতাকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছে। তবে জামায়াত নেতা রাজ্জাকের পর এক এক করে এখন বিএনপি নেতারাও ’৭১-এর ভূমিকার জন্য জামায়াতকে ক্ষমা চাইতে বলছে। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে ছিলেন তাঁতি দলের সভাপতি হুমায়ুন ইসলাম খান, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান, আবদুল মতিন চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক গোলাপ মঞ্জু প্রমুখ। কর্মীদের তোপের মুখে ফখরুল -মওদুদ ॥ ২১ ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপির আলোচনা সভায় কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তারা বার বার জনতে চান খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পাবে? আপনারা ব্যর্থ। বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্য চলাকালে দর্শক সারিতে বসা এক কর্মী হঠাৎ করেই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই বলে চিৎকার করতে থাকেন। এবং বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গী প্রদর্শন করে ব্যারিস্টার মওদুদের বক্তব্যে বাধা প্রদানের চেষ্টা করেন। এ সময় মওদুদ বলেন, কী হয়েছে? তখন আরেক কর্মী বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কোন কর্মসূচী নেই কেন? আর হল খালি কেন? নেতাকর্মীরা আসেনি কেন? এভাবে মওদুদ ও ফখরুলের দিকে তাকিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বেশকিছু নেতাকর্মী স্লোগান দিতে থাকেন। ফলে ব্যারিস্টার মওদুদের বক্তব্য বাধাগ্রস্ত হয়। পরে নেতাকর্মীদের স্লোগান থামলে মওদুদ তার অবশিষ্ট বক্তব্য দেন। এভাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য চলাকালেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের সান্ত¡না দিতে গিয়ে বলেন, আমরা ব্যর্থ হয়েছি এটা মনে করছেন কেন? আমরা ব্যর্থ হইনি। মহাসচিবের কথায় কর্ণপাত না করে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে কর্মীরা। তারা বার বার প্রশ্ন করে মওদুদ ও ফখরুলের কাছে জানতে চান আগে জবাব দেন খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পাবে? মহাসচিবকে উদ্দেশ করে তারা বলেন, বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দেন। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
×