ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘের তিন সংস্থার সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক

খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে দীর্ঘমেয়াদী সহায়তার আশ্বাস

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে দীর্ঘমেয়াদী সহায়তার আশ্বাস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে জাতিসংঘের তিনটি রোম ভিত্তিক সংস্থা বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদী সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। সংস্থা তিনটি হচ্ছে-ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি), ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (আইএফএডি)। আইএফএডিয়ের গবর্নিং কাউন্সিলের সভার ৪২তম অধিবেশনে যোগ দিতে ইতালির রোমে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। (১৪-১৫ ফেব্রুয়ারি) দুদিনব্যাপী এই অধিবেশন হওয়ার কথা রয়েছে। অধিবেশনের বাইরেও পৃথকভাবে এই তিন সংগঠনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুস্তফা কামাল। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নয়নের প্রশংসা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, তৃতীয় বারের মতো নিরঙ্কুশ বিজয় পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে জাতিসংঘের এই তিন সংগঠন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলেও সংগঠনের প্রধানরা আশা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তাসহ আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা গড়তে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। গত দশকে বাংলাদেশের জিডিপিতে ৬ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। দারিদ্র্য নিরসন ও ক্ষুধা মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ফলে বাংলাদেশে দ্রুত দরিদ্র মানুষের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পুরো কৃতিত্ব শেখ হাসিনা সরকারের। তিনটি সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয় মিয়ানমারের দমনপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। মানবিক বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেবে জাতিসংঘ। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেসলি বাংলাদেশে তার সাম্প্রতিক সফরকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জোরপূর্বক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। মিয়ানমারের এই ঘটনায় পুরো বিশ্ব হতবাক। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণের পক্ষে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে জাতিসংঘ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, সম্প্রতি, ডব্লিউএফপি জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য সহায়তা হিসেবে ৫৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৯৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি করেছে। ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও) এর মহাপরিচালক জসি গ্রাজিয়ানো ড. সিলভা বলেন, দ্রুত সময়ে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অগ্রগতি আসলেই বিস্ময়। তিনি বলেন, শুরু থেকে বাংলাদেশকে এফএও’র ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মূল্যের ৩২৬টি জাতীয় প্রকল্পের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমানে এফএও ৩৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্য ব্যবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে ৯৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি খরচ হবে। এফএও প্রধান জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য ডব্লিউএফপির অবিলম্বে দীর্ঘমেয়াদী সমর্থন দেয়ার বিষয়টির কথা জানান। আইএফএডির সভাপতি জিলবার্ট এফ হাউংবো বলেন, ১৯৭৪ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে অনুদান এবং কম সুদের ঋণ হিসেবে আইএফএডি ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করেছে। যা প্রকল্পের প্রায় ৪৬৪ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, অধিকন্তু ১১ দশমিক ১ মিলিয়ন পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ৩৩টি গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আইএফএডি ঋণ এবং অনুদান হিসেবে ৭১৭ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তিনি গ্রামীণ জনগণের জন্য সম্পদের বিতরণ ও সদ্ব্যবহারে চরম দক্ষতার পরিচয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশের কৃষি খাতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন স্থানান্তর করার জন্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার জন্য এফএও-এর প্রধানকে অনুরোধ করেন। তিনি এফএওকে তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, আনারস, লিচুর মতো উন্নত ফলের জন্য ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করার আহ্বান জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে নানামুখী কর্মসূচী গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করেছে। তবে ক্রমাগত সহায়তার জন্য জাতিসংঘের তিন সংগঠন প্রধানদের তিনি ধন্যবাদ জানান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশকে এফএওর উল্লেখযোগ্য সহায়তা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের সহায়তার বিষয়টিও মন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ অর্জন করেছে। যা গত দশকে এ অর্জন ছিল সবসময় ৬ এর উপরে। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ একটি প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ইতোমধ্যে রূপকল্প-২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশের স্থিতি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সম্বলিত এসডিজি মূলধারার দিকে অগ্রসর হয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে। তিনি বলেন, বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সহযোগিতা বাড়াবে এটাই প্রত্যাশা করছি।
×