ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভবিষ্যতে তরুণদের সুযোগ করে দিতে চাই

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ভবিষ্যতে তরুণদের সুযোগ করে দিতে চাই

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি ভবিষ্যতে তরুণদের সুযোগ করে দিতে চান। তাই তিনি চান বর্তমান ও টানা তৃতীয় মেয়াদটিই যেন হয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শেষ মেয়াদ। বৃহস্পতিবার জার্মান রেডিও ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এক মাস আগেই চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দল আওয়ামী লীগ ও এর জোটের দলগুলো মিলে এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসন জিতেছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম কোন আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি এটা নিশ্চিত করেছেন যে, পরবর্তী মেয়াদে আর প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য চেষ্টা করতে চান না। তিনি বলেন, ‘এটা আমার তৃতীয় মেয়াদ। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী হয়েছি (১৯৯৬-২০০১)। সব মিলিয়ে চতুর্থবার। আমি আর চাই না। একটা সময়ে এসে সবারই বিরতি নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি তরুণ প্রজন্মের জন্য জায়গা করে দিয়ে যেতে পেরে।’ উন্নয়নের এক দশক ॥ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গত এক দশকে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বছরে গড়ে ৬ থেকে ৭ ভাগ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাণিজ্য বেড়েছে। বিদেশী বিনিয়োগও এসেছে। এই উন্নয়নের পরও বিশ্বব্যাংকের হিসাব বলছে, এখনও বাংলাদেশের প্রতি চার জনে একজন দরিদ্র। শেখ হাসিনা তার সম্ভাব্য শেষ মেয়াদে এই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইকেই অগ্রাধিকার দিতে চান। ‘খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান– এসব মৌলিক চাহিদা,’ বলেন তিনি। ‘প্রত্যেক মানুষই তার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে চায়। আমাদের সেটাই নিশ্চিত করতে হবে।’ উন্নয়ন বনাম বাক স্বাধীনতা ॥ তবে এই উন্নয়ন দিয়ে সেসব সমালোচকের মুখ বন্ধ করতে পারেননি শেখ হাসিনা, যাদের অভিযোগ, তিনি বা তার সরকার বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন এবং মুক্তচিন্তা ও মুক্তচিন্তকদের ওপর আঘাত থামাতে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি। কিন্তু হাসিনা তা অস্বীকার করে বলেন, মুক্তচিন্তাকে শতভাগ সমর্থন করেন তিনি। সমালোচনাও তাই স্বাভাবিক। ‘যত কাজ করবেন, তত সমালোচনা শুনবেন,’ তার যুক্তি? আপনি আমার দেশের মানুষকে প্রশ্ন করুন, তারা সন্তুষ্ট কিনা; তাদের যা যা প্রয়োজন, সব পাচ্ছে কিনা, কিংবা আমি সব দিতে পারছি কিনা।’ শেখ হাসিনা তার আওয়ামী লীগবিরোধীদের জন্য রাজনীতির মাঠ সংকুচিত করে রেখেছেন এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছেন – এমন অভিযোগও আছে জোরালোভাবে? কিন্তু তা মানতে রাজি নন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। জনগণের ভোটের মাধ্যমেই তো ক্ষমতায় আসা, সেটা একদলীয় হয় কী করে? আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, ২০০৮-এ যে নির্বাচন হয়েছিল সে নির্বাচনেও ৮৪ ভাগ (আসলে ৮৬.৩৪%) ভোট পড়েছিল। এবার তো ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে। তখন বিএনপি-জামায়াত জোট পেয়েছিল মাত্র ২৮টি সিট। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৬০টি সিট (৩০০টির মধ্যে)। বাকি অন্য দলগুলো পেয়েছে। সেখানে দল তো আছেই, বলেন তিনি। বিরোধী দলকে দুর্বল মনে করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন কোন দল যদি তাদের কর্মসূচী নিয়ে জনগণের কাছে না যেতে পারে, জনগণের বিশ্বাস, আস্থা অর্জন করতে না পারে, আর যদি ভোট না পায়, সে দায়-দায়িত্ব কার? সে তো ঐ দলগুলোর দুর্বলতা। মৌলবাদের উত্থান ও নারী অধিকার ॥ মৌলবাদীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নিবিড় সম্পর্ক আছে বলেও সমালোচনা আছে। বাংলাদেশের ‘উদারপন্থীরা’ হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সুসম্পর্কের সমালোচনা করেন। তাদের অভিযোগ, এই গোষ্ঠী মৌলবাদী ও তারা নারীর বিকাশের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এই গোষ্ঠীর নেতা মাওলানা শাহ আহমেদ শফী মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠানোর জন্য সমর্থকদের ওয়াদা করিয়েছেন। তার এই বক্তব্যের দায়দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ‘আমি বলেছি যে, এখানে বাক স্বাধীনতা আছে। তাই যে কেউ যে কোন কিছুই বলতে পারেন।’ নারীর বিকাশে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেননি দাবি করে হাসিনা বলেন, আমি দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নারী শিক্ষা পুরোপুরি অবৈতনিক করে দিয়েছি। তাদের বৃত্তিও দিচ্ছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, তার নীতি নারী শিক্ষার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের চিন্তাও বদলে দিয়েছে। আগে বাবা-মায়েরা চিন্তা করতেন যে, মেয়েকে পড়িয়ে লাভ কী, সে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। এখন সেভাবে চিন্তা করেন না তারা। এখন ভাবেন যে, মেয়েকে শিক্ষিত করা উচিত যেন সে নিজে উপার্জন করতে পারে। এরপর সে বিয়ে করবে। খুব ধীরে ধীরে আমরা পরিবর্তন আনছি। বাল্যবিয়ে এখন অনেক কমে গেছে। যে লক্ষ্য অর্জনে শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন, তাতে কি মৌলবাদীরা বাধা হবে? অবশ্যই না। আমি যা করেছি, তা করেছি এবং এটা চলবে, বলেন তিনি। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ ॥ জীবনমান উন্নয়ন এবং উদারপন্থী ও মৌলবাদীদের মাঝখানে একটি রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়াও শেখ হাসিনার সরকারকে নতুন করে সাত লাখ রোহিঙ্গার দায়িত্ব নিতে হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ‘জঙ্গীবাদের’ বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের বলি হয়ে এরা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে কক্সবাজারের দু’টি ক্যাম্পে বেশিরভাগই খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই মানুষের স্রোত এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলেছে। এদের অনেকেই স্থানীয়দের কাজ, থাকার জায়গা ও ব্যবসায় ভাগ বসিয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার হাজার হাজার শিশু-কিশোর-তরুণ যারা বেড়ে উঠছে, তাদের জন্য মধ্যবর্তী বিকল্প উপায় ভাবার চেষ্টা করছে। আমরা একটা দ্বীপ বেছে নিয়েছি। সেখানে আমরা বাঁধ দিয়েছি। সাইক্লোন শেল্টার ও ঘরবাড়ি তৈরি করেছি। আমরা তাদের সেখানে নিয়ে যেতে চাই এবং কাজ দিতে চাই। তাহলে তরুণ ও নারীরা অর্থ উপার্জন করতে পারবে। তবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়াকে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই এই দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে যেতে চায় বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে ভারত ও চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না। আমাদের সঙ্গে একটা চুক্তিও হয়েছে যে, তারা ফেরত নিয়ে যাবে। চীন ও ভারতের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি এবং মিয়ানমারের সঙ্গে যে পাঁচটি দেশের বর্ডার আছেÑ চীন, বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড ও লাওস, আমরা সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি যে, কীভাবে এই সমস্যা সমাধানে তাদের কাজ করা উচিত। তিনি যোগ করেন, এটাই চাই যে, তারা মিয়ানমারকে এ কথাটি বোঝাক যে, এরা যখন মিয়ানমারে চলে যাবে তখন তাদের যা যা সাহায্য দরকার, থাকার বাড়িঘর, তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা, এখানে যা যা দিচ্ছে, তা ওখানেই দেবে এবং তাদের একটা নিরাপত্তার ব্যবস্থাও তারা করবে? জাতিসংঘ এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে।
×