ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব কমবে ২শ’ কিমি

কালনা সেতুর কাজ চলছে, স্থাপিত হবে নতুন ‘আঞ্চলিক যোগাযোগ’

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কালনা সেতুর কাজ চলছে, স্থাপিত হবে নতুন ‘আঞ্চলিক যোগাযোগ’

রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল থেকে ॥ প্রমত্তা মধুমতি নদীর ওপর দেশের গুরুত্বপূর্ণ নড়াইল-গোপালগঞ্জের কালনা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে গত নবেম্বরে। ফলে পূরণ হতে চলেছে নড়াইল, যশোর, খুলনা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২০ জেলার মানুষের স্বপ্ন। সেতুটি নির্মিত হলে ঢাকার সঙ্গে এ অঞ্চলের দূরত্ব কমবে প্রায় ২শ কিলোমিটার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কালনা ফেরিঘাটের দুপাড়ে আর বসে থেকে জনগণের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। সময় বাঁচবে। কৃষি পরিবহন ও বিপণন সহজ হবে। এক কথায় বৃদ্ধি পাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড; পাল্টে যাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর এর কাজ উদ্বোধন করেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯শ’ ৬০ কোটি টাকা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির (জাইকা) সহযোগিতায় ও দেশীয় অর্থে এএনএল-টেকেন-ওয়াই ডিসি জেভি কোম্পানি যৌথভাবে নড়াইল জেলার শেষ সীমানা লোহাগড়া উপজেলার কালনা এবং অপরপ্রান্ত গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় মধুমতি নদীর ওপর ৬ লেন বিশিষ্ট ৬শ’ ৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৮ দশমিক ৫ মিটার এ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে। এ সেতুর দুই অংশে ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এপ্রোচ সড়কের জন্য ৭০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। কালনা সেতু নির্মিত হলে যশোরের বেনাপোল স্থল বন্দর-নড়াইলের কালনা সেতু-পদ্মা সেতু-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কের মাধ্যমে ‘আঞ্চলিক যোগাযোগ’ স্থাপিত হবে। বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে আমদানি-রফতানিকৃত পণ্য সরাসরি কালনা এবং পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনে সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া খুলনা, ঢাকা এবং বরিশাল বিভাগের ২০টি জেলার সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যাতায়াত সহজ হবে এবং জ্বালানি খরচ কমবে। নড়াইল ও সড়ক জনপথ এবং বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কালনা সেতু নির্মিত হলে নড়াইল থেকে ঢাকা ১২৭ কিলোমিটার, যশোর থেকে ঢাকা ১৬১ কিলোমিটার, বেনাপোল বন্দর থেকে ঢাকা ২০১ কিলোমিটার, খুলনা থেকে যশোরের বসুন্দিয়া হয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে ১৯০ কিলোমিটার। অর্থাৎ সেতুটি নির্মিত হলে ঢাকার সঙ্গে এ অঞ্চলের দূরত্ব কমবে প্রায় ২শ কিলোমিটার। উল্লেখ্য, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকা যেতে এসব সড়কে ৩০০ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে হয়। কালনা সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন কনস্টাকশনের হাইওয়ে প্রকৌশলী মোহাম্মদ জোনায়েদ রাহবার বলেন, আশা করা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হবে। সেতু বাস্তবায়নকারী প্রকল্প ‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট বাংলাদেশ’-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুমন সিংহ জানান, ৬ লেন বিশিষ্ট ৬শ ৯০ মিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণের কাজ পুরোপুরিভাবে শুরু করেছে। কোথাও কোন সমস্যা নেই। এ সেতুর দুই অংশে ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হবে। সংযোগ সড়কের জন্য ৭০ একর জমি অধিগ্রহণের মধ্যে ১২ এশর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৫৮ একর জমির অধিগ্রহণ এ মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।
×