ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামে কর্মস্থল ॥ প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 গ্রামে কর্মস্থল ॥ প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন

শিশু অবস্থায় আমরা দেখেছি গুটিবসন্ত ও কলেরায় গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। সেই ভয়ঙ্কর অতীত আমরা অনেকে আগেই অতিক্রম করেছি। এখন সেই দুর্বিসহ গ্রাম নেই। আমাদের গ্রামের জীবন-মানের দারুণ অগ্রগতি ঘটেছে। এখন মাটির ঘরেও বিদ্যুত। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা, ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র আছে গ্রামে। যাতায়াত যোগাযোগ বেড়েছে। কিন্তু সবরকম সুবিধা থাকলেও আমরা গ্রামকে পছন্দ করি না। কোন কারণে শহরমুখী হয়ে গেলে গ্রামীণ জীবনকে পিছনে ফেলার প্রতিযোগিতা তৈরি করি। সমাজে প্রচলিত ধারণা রয়েছে, মেধার দিক বিবেচনায় এখনও এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসকদের আমরা সর্বোচ্চ মেধাবী হিসেবে স্থান দিয়ে থাকি। কিন্তু সেই চিকিৎসকরা গ্রামে যেতে চান না এবং গ্রামে না যাওয়া, না থাকার পক্ষে তারা গণমাধ্যমেও যুক্তি উপস্থাপন করে থাকেন। নানা ঘটনা ও অভিজ্ঞতায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরক্ত। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কিছুদিন আগে চিকিৎসকদের উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থান না করায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনন্য রেকর্ড অর্জনকারী ও আমাদের চারবারের প্রধানমন্ত্রী এমনও বলেছেন ‘সঠিকভাবে (চিকিৎসক ও নার্সদের) দায়িত্ব পালন না করলে চাকরি ছেড়ে দিন।’ ‘এমবিবিএস’ পড়তে হলে তো শহরে আসতে হবেই। কিন্তু শিক্ষা শেষ করে পরবর্তী দায়িত্বের কথা ভাবনায় থাকা দরকার। শুধু চিকিৎসাক্ষেত্র নয়, সকল ক্ষেত্রেই। সম্প্রতি গণমাধ্যমে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান যথার্থই বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিতে একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার আছে। সেটি হলো, যারা শ্রমবাজারে নতুন আসছেন, তাঁরা বাছবিচার করে কাজ করতে চান। তাঁরা গ্রামে যাবেন না। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে। গ্রামের স্কুল-কলেজে শত শত ইংরেজী, গণিত, বিজ্ঞান শিক্ষকের পদ খালি আছে। কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েরা ঢাকায় পড়ে থাকবে, টিউশনি করবে, কিন্তু গ্রামে যাবে না।’ মন্ত্রী একথাও বলেছেন, ‘এটি সত্য যে, আমাদের মতো অর্থনীতিতে পছন্দমতো কাজ পাওয়ার সুযোগ কম। আমাদের অর্থনীতি যখন পরিপক্ব, টেকসই হবে তখন তরুণ-তরুণীদের পছন্দমতো কাজ পাওয়ার স্বাধীনতা বাড়বে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পছন্দমতো কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে তরুণদের মধ্যে অসন্তুষ্টি থাকবে। যেসব দেশ আমাদের মতো অর্থনীতির পর্যায়গুলো পেরিয়ে উন্নত হয়েছে, তাদেরও একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।’ এম এ মান্নান এর আগের আমলে অর্থ এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এবার তিনি পরিকল্পনায় পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। কথা বলে দেখেছি, কর্মসংস্থান ও বাস্তবতা, উন্নয়ন প্রকল্প, সংস্কার কার্যক্রমসহ নানা বিষয় মাথায় আছে তাঁর। মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি সমন্বয়ের ব্যাপারে আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন সময়ে যা খুবই দরকার। যাই হোক, বলছিলাম তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান ও গ্রামের কথা। একটি দুঃখজনক খবর শুনলাম সম্প্রতি। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে শ্বশুরবাড়িতে এক যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। উপজেলা সদরের বংশাই রোডে অবস্থিত শ্বশুরের বাসার তৃতীয় তলার একটি কক্ষে তিনি আত্মহত্যা করেন। নিহত ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নেয়া বেকার যুবক ছিলেন। জানা যায়, তিনি চাকরি নিয়ে গ্রামে যেতে মোটেই আগ্রহী নন। অথচ যশোরের এক অজপাড়া গ্রামের সাধারণ মানুষের সন্তান ছিলেন তিনি। তার স্ত্রী একটি কলেজের প্রভাষক। তাদের সংসারে পাঁচ বছরের ছেলে ও পাঁচ মাস বয়সী কন্যা রয়েছে। প্রশ্ন থেকেই যায়, তার এই আত্মহত্যা কী সমস্যার সমাধান দিতে পারবে? গ্রামকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষা গ্রহণ শেষে গ্রামমুখী হতে হবে আমাদের। আস্থা রাখতে চাই, মেঠো পথকে আলো জে¦লে আলোকিত করার আনন্দকে সমৃদ্ধ করবেন টানা তৃতীয়বার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কী নেই সেখানে এখন। সবকিছুই টাটকা। তাজা মাছ, শাক-সবিজ, নানা প্রকারের তরকারি। মানসিকতা পরিবর্তনের দরকার। গ্রামই হোক প্রাণ। লেখক : সাংবাদিক
×