ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচন দাবি

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচন দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীকে রাজনৈতিক শক্তি ও জনশক্তিতে রূপান্তর করতে সংবিধান সংশোধন করে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এই ব্যবস্থা অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও কমপক্ষে দুই থেকে তিন মেয়াদের জন্য চালুর দাবি জানায় সংস্থাটি। একইসঙ্গে দেশব্যাপী অব্যাহত নারী ও কন্যা নির্যাতন, ধর্ষণের প্রতিবাদে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারকে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি (জিরো টলারেন্স) গ্রহণ করার জন্য দাবি জানায় নারীর অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংস্থাটি। রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে সহ-সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ ও সীমা মোসলেম, সহ-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগমসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে সংস্থাটির সভাপতি আয়শা খানম বলেন, সরাসরি নারী আসনে নির্বাচন দিলে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারীরা রাষ্ট্র পরিচালনায় জনশক্তি হিসেবে এগিয়ে আসতে পারেন ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে পারেন। এই ব্যবস্থা নির্দিষ্ট দুই বা তিন মেয়াদের জন্য চালু করা যেতে পারে। তিনি বলেন, সরাসরি নির্বাচনের বিষয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দই আমাদের অঙ্গীকার করেছেন কিন্তু পরবর্তীতে সংসদে গিয়ে তারা এই বিষয়ে কোন কথা বলেননি। দেশে সকল পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব শক্তিশালী করা এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর পূর্ণ এবং সম অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করার লক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালক হিসেবে তিনি বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি ইতিবাচক দৃশ্য বাংলাদেশে বিদ্যামান। আজকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নারীরা দৃশ্যমান অদৃশ্যমান একটি বড় ভূমিকা রাখছে। সেই ভূমিকার স্বীকৃতির প্রতিফলন হতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণের ভেতর দিয়ে এবং একটি শক্তিশালী, ভবিষ্যতমুখী প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে। নির্বাচন ব্যবস্থায় অর্থ এবং পেশী শক্তির ব্যবহার, নারীর প্রতি সমাজের প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি, নারী হিসেবে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, বিদ্যমান সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে নারীদের অগ্রসর হওয়া অনেক কঠিন। কিন্তু ২০০৯ সালে এই সরকারের যখন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল সেখানে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণ করে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করার মতো একটি সহায়ক পরিবেশ ছিল এবং তা করা হলে ২০১৮ সালে অনেক নারী সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারতেন। আমরা সরকারের কাছে আবারও বলতে চাই, এখনও সময় আছে। সরাসরি ইলেকশানের ব্যবস্থা করুন। সাংবাদিকের প্রশ্নের জাবাবে সভাপতি আয়শা খানম বলেন ২০১৮ সালে ধর্ষণ, গণধর্ষণের সংখ্যা ৯ শ’ ৪২টি। বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশের দিতে অগ্রসর হচ্ছে। অন্যদিকে নারীর প্রতি সহিংসতার সংখ্যা ও মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ যে নারী অর্থনৈতিক উন্নয়নে সিংহভাগ ভূমিকা রাখছে সেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অন্তরায়। তিনি বলেন যে ধর্ষণ আইন পরিবর্তন করতে হবে। ধর্ষণ আইনে ধর্ষককেই প্রমাণ করতে হবে সে ধর্ষণ করেনি। তিনি অব্যাহত নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারকে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি (জিরো টলারেন্স) গ্রহণ করার জন্য দাবি জানান। নারী নির্যাতনের সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থার কোন স্তরে, কোন পক্ষের কোন ধরনের প্রভাব না খাটানো ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন।
×