ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে নির্জন এলাকায় ওঁৎ পেতে থাকে লম্পট চক্র

প্রকাশিত: ১১:৫১, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

চট্টগ্রামে নির্জন এলাকায় ওঁৎ পেতে থাকে লম্পট চক্র

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ ছাত্রীদের টার্গেট করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে অপেক্ষমাণ চালকদের চক্র। অপহরণ করে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের টার্গেট নিয়ে এরা এগোচ্ছে। অপরিচিত এলাকার ভান ধরে এই চক্রের সদস্যরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকে নির্জন স্থানে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর পুনরায় ধর্ষণ করার চেষ্টায় পুলিশের কাছে ধরা পড়ে চক্রের তিন সদস্য। সোমবার গভীর রাতে চক্রের হোতা ধর্ষক শাহাবুদ্দিন পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। এক সহযোগীকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অপর আরেক সদস্য পলাতক রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। একটি সূত্রে জানা গেছে, আসামি শ্যামল ও শাহাবুদ্দিনকে পৃথকভাবে গাড়িসহ আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে শাহাবুদ্দিনকে নিয়ে সোমবার রাত তিনটার দিকে মেরিনার্স সড়ক এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয় শাহাবুদ্দিন। গ্রেফতারকৃত শ্যামল দে পুলিশকে জানিয়েছে, ড্রাইভারদের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা তাদের গাড়ির মালিক ও সন্তানদের স্কুল-কলেজে পৌঁছানোর পর বেকার বসে থাকে। এ সময়টুকু ২/৩ জন ড্রাইভার একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় ওঁৎ পেতে থাকে। একজন ড্রাইভার গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে থাকে। অপর একজন ড্রাইভার টিনেজ বয়সের কোন মেয়ে একা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মেয়েটির গতিপথ রোধ করে। কৌশলে মেয়েটি কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই পেছনের সিটে বসে থাকা লোকজন মেয়েটিকে গাড়ির ভেতরে তুলে ফেলে। শহরের বিভিন্ন নিরিবিলি রাস্তা প্রদক্ষিণ করে মেয়েটিকে গাড়িতে থাকা দুজন ব্যক্তি পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর মেয়েটিকে ভিডিও আছে বলে এবং কাউকে কিছু না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্জন কোন জায়গায় নামিয়ে দেয়। কোতোয়ালী থানায় এজাহার অনুযায়ী, গত ২৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধর্ষিতা তাহার বাসা হতে মাদ্রসায় যাওয়ার পথে ধর্ষণের শিকার হয় ওই মাদ্রাসা ছাত্রী। কোতোয়ালী থানাধীন জামালখান মোড়ের পশ্চিম পার্শ্বে পিডিবি আবাসিক কোয়াটারের সামনে একটি প্রাইভেটকার (চট্টমেট্রো-গ-১২-৩০৫২) থেকে নেমে শ্যামল দে (৩০) ভিকটিমের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। গাড়িচালক হিসেবে আসামি শ্যামল দে ছিল এবং আরোহী হিসেবে ছিল শাহাবুদ্দিন। তারা একপর্যায়ে ভিকটিমের পথ রোধ করে। এ সময় আসামি শাহাবুদ্দিন রিমা কমিউনিটি সেন্টার কোন দিকে জানতে চায়। ভিকটিম তা দেখাইয়া দিলেও তাহারা না চেনার ভান করে। আবার উভয়ে ভিকটিমকে বার বার অনুরোধ করলে গাড়ির পেছনের দরজা খুলে শাহাবুদ্দিন। ভিকটিম গাড়ির পাশে যাওয়া মাত্র পেছনে বসে থাকা আসামি শাহাবুদ্দিন দরজা খুলে দ্রুত টান দিয়া গাড়িতে তুলে ফেলে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে গাড়িটি সার্সন রোডের দিকে যেতে থাকে। আসামি শাহাবুদ্দিন ভিকটিমকে জোরপূর্বক গাড়ির পেছনের সিটে শুইয়ে ধর্ষণ করে। কিছুক্ষণ পর পর্যায়ক্রমে ড্রাইভিং সিটে থাকা অপর আসামি শ্যামল দে পেছনে এসে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় আসামি শাহাবুদ্দিন ড্রাইভিং সিটে আসে। আসামি শ্যামল পেছনে এসে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। আসামি শাহাবুদ্দিন গাড়ি চালানো অবস্থায় শ্যামলের ধর্ষণ করা ভিডিও ধারণ করে। শ্যামলের ধর্ষণের পর শাহাবুদ্দিন ও শ্যামল মিলে ভিকটিমকে ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছাড়িয়া দেয়ার ভয়ভীতি দেখায়। অতঃপর ভিকটিমকে কাউকে কিছু না বলার কথা বলে গণি বেকারির মোড়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নামিয়ে দ্রুত চলে যায়। এ বিষয়ে ২৮ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করা হলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামি শ্যামল দে (৩০) কে ডিসি রোড এলাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্রেফতার করে। অপহরণে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার (চট্টমেট্রো-গ-১২-৩০৫২) উদ্ধারপূর্বক জব্দ করে পুলিশ।
×