ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন চলার ভুলত্রুটি

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

জীবন চলার ভুলত্রুটি

কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা শিষ্টাচারের ভেতর পড়ে না। জীবন চলার পরতে পরতে দৃষ্টি মেললে যদি প্রতিনিয়ত দেখা যায় সমাজের অসঙ্গতিপূর্ণ ও অসামাজিক কোন বিষয়, হিংস্র পশুসত্তাকেও হার মানিয়েছে! তখন? আমার ধারণা যদি কোন অল্প বয়সের শিক্ষার্থী প্রেমাসক্তিতে ডুবে যায়, তখন একমাত্র উপায় তার পরিবারের সদস্য কিংবা প্রিয়জন, যারা ওই অপরিপক্ক বয়সের শিক্ষার্থীর বন্ধু, যাদের সে বিশ্বাস করে ও ভাল জানে- শ্রদ্ধা করে; তাদের একান্ত আলাপচারিতায় ও সুপরামর্শে যে প্রেম, তা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীর কোন্ পরিবেশে অবস্থান। সেখানে তার সৎসঙ্গ না-কি অসৎসঙ্গ, তা অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। যেহেতু পরিবেশ সম্পূর্ণ নির্ভরশীল প্রকৃতির উপর। প্রকৃতির নিদর্শন; বৃক্ষের ছায়া, শূন্যলতা অথবা পরগাছা একটি ফুটন্ত ফুলগাছের উপর তার কালোছায়ার প্রভাব ফেলাতে ফুলগাছটি অকালে তার সৌন্দর্য হারাতে থাকে। এই অন্তর্গত কারণে ফুলগাছটি চুপসে যেতে থাকে। যেহেতু কোন প্রাণীই তার ব্যতিক্রম নয়। যখন ফুলগাছটি সূর্যের আলোতে দেখা যায়, গাছটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। ঠিক এমনই প্রকৃতিগত কারণে যদি কোন অশুভ শক্তির প্রভাবে কিশোরী মেয়ে ভুল পথে যেতে থাকে, তখন এই বয়সন্ধিঃকালের সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার নির্ভরযোগ্য পথ; ভাল সঙ্গ! সুপরামর্শ। যার আলাপচারিতায় পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। আমাদের এই সমাজে এমনও দেখা যায় একটি উজ্জ্বল প্রতিভা অকালেই ধ্বংস হয়ে যায়, সমাজের কিছু অসভ্য পশুসত্তার কারণে। আমার এক বন্ধুর মেয়ে স্কুলে ৪ শাখায় ৪০০ ছাত্রীর মধ্যে তার রোল নং-১ ছিল। নবম শ্রেণীতে গতানুগতিকভাবে সেই মেয়েটি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। সেই মেয়েটি তার সঙ্গে একই শ্রেণীতে পড়ুয়া বান্ধবীর কথায় এক সুদর্শন যুবকের সঙ্গে পরিচয়ে ঘনিষ্ঠ হয়। পরিচয়ের এক পর্বে ভেতরে ভেতরে সে বন্ধুর মেয়েটি প্রেমে পড়ে। তার ভাললাগে শ্রুতিমধুর আলাপচারিতা। কখন যে ধীরে ধীরে সময় পেরিয়ে যায়, টের পায় না। স্কুলের কথা ভুলতে থাকে, ভুলতে থাকে তার ভবিষ্যত স্বপ্ন, অভিভাবকের আদর্শ। হারিয়ে যায় স্কুলের নিয়ম-কানুন ও অনুশাসন। মেয়েটি তার বাসা থেকে স্কুল ড্রেস পরিধান করে বেরিয়ে এসে, প্রেমাসক্তির আড্ডা জমায়। জমজমাট ছন্দময় কথোপকথনের সম্মোহনে টেনে নেয় হৃদয়ে হৃদয়। হয়ে উঠে একের অন্তরে অপরের অধিকার, দুজন হয়ে উঠে শাণিত ডাকে অপ্রতিরোধ্য। অসম প্রেমাসক্তি ঠিক অংক সূত্রের মতো; একটু ভুল হলেই জীবনের অংক মিলবে না, সবকিছু হয়ে যাবে মিছা। কিশোর-কিশোরীর প্রেম মানেই মাদকাসক্তির চেয়ে ভয়ানক নেশা। একে অপর লিঙ্গের আকর্ষণে ক্রমান্বয়ে আত্মমগ্ন হতে থাকে। প্রকৃতির ধর্ম সাগরের উত্তাল প্লাবনে নদীকে তার গহ্বরে নিয়ে যায়, কিন্তু নদী তার পূর্বের অবস্থান ফিরে পায় না। জীবন একটা ¯্রােতস্বিনী নদী। তারই ন্যায় একটি অপরিণত-অপরিপক্ক বয়সের প্রেমের দায়ভার সারা জীবনের অভিশাপ, নিশ্চিত ধ্বংস। মা শব্দের ভেতর যে এক আশ্চর্য ধরনের ক্ষমতা ও শক্তি ঢুকিয়ে দিয়েছেন বিধাতা। প্রতিটি মানুষের মনে মা হলো জীবনের পূর্ণাঙ্গ পথপ্রদর্শক। মেয়ের এই সব বিষয়ে তার বুদ্ধিমতী ‘মা’ টের পান। হতাশাগ্রস্ত না হয়ে এই ব্যাপারে ঠা-া মাথায় কৌশল অবলম্বন করলেন। এই সর্বনাশা প্রেমাসক্তি থেকে মেয়েকে বাঁচানোর প্রয়াসে তিনি ভাবলেন, মেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাটা নেহাৎ দুরূহ নয়। মেয়ের সঙ্গে বন্ধু-বান্ধবের মতো একান্ত আলাপচারিতায় গোপন কথাগুলো বের করলেন। ধীরে ধীরে বন্ধু ও তার স্ত্রী, তাঁদের প্রতি আত্মীয়-স্বজনদের শ্রুতিমধুর যুক্তি কৌশল অবলম্বনে মেয়ের মনের পরিবর্তন আসে। অতঃপর নবম শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ভাল না হলেও, পরবর্তী জীবনে সব পরীক্ষার ফলাফল ভাল করে। কালক্রমে সে মেয়েটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে। নোয়াখালী থেকে
×