ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘বাঙালীর জয়, কবিতার জয়’, ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে কবিতা উৎসব

প্রকাশিত: ১১:১১, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

‘বাঙালীর জয়, কবিতার জয়’, ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে কবিতা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুরুটা সেই ১৯৮৭ সালে। স্বৈরাচারের বুটের তলায় পিষ্ট যখন দেশ তখন কবিতার আশ্রয়ে সংঘবদ্ধ হয়েছিলেন কবিরা। শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম জাতীয় কবিতা উৎসব। সেই সূচনার পর প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম ও সঙ্কটে উৎসবকে হাতিয়ার করে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় সোচ্চার ভূমিকা রেখেছে কবিরা। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সম্প্রীতির স্বদেশের বিনির্মাণে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে উৎসবের আয়োজক জাতীয় কবিতা পরিষদ। ৩২টি আয়োজন উৎসব পেরিয়ে আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে বিজয়ের বারতায় অনুষ্ঠিত হবে তেত্রিশতম জাতীয় কবিতা উৎসব। এবারের উৎসব স্লোগান ‘বাঙালীর জয় কবিতার জয়’। পয়লা ফেব্রুয়ারি সকালে উৎসব উদ্বোধন করবেন প্রখ্যাত কবি আসাদ চৌধুরী। সারাদেশের কবিদের সঙ্গে এবারের উৎসবে অংশ নেবেন নয় দেশের আমন্ত্রিত চৌদ্দজন কবি। নিবন্ধিত কবিদের কবিতাপাঠ, মুক্ত আলোচনা, আবৃত্তি পরিবেশনা, সেমিনার, ছড়াপাঠ, কবিতার গানসহ মোট দশটি অধিবেশনে সাজানো হয়েছে দু’দিনের উৎসব। এবারের উৎসবে কবিতা পরিষদের পক্ষ থেকে পয়লা ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় কবিতা দিবস’ ঘোষণা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের সিভিল সার্ভিসে পৃথকভাবে সংস্কৃতিবিষয়ক ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছে পরিষদ। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উৎসবের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত। উৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কবি রবিউল হুসাইন। পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পরিষদের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কবি নূহ-উল আলম লেনিন, কবি কাজী রোজী, আনজির লিটন, দিলারা হাফিজ, আনোয়ারা সৈয়দ হক, আমিনুর রহমান সুলতান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে পয়লা ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় কবিতা দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদানে সুষ্ঠু নীতিমালা অনুসরণের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারগুলোর ক্ষেত্রে সামরিক শাসন আমলে সৃষ্ট নীতিমালা ও পদ্ধতি গণতান্ত্রিক সরকারগুলোও অসতর্কভাবে অনুসরণ করছে। অনেক ক্ষেত্রে এগুলোর বিচার যেমন স্বচ্ছ নয়, তেমনি যারা যোগ্যতা বিচারের কাজে নিয়োজিত তাদের কারও কারও সততা ও যোগ্যতা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে যেহেতু পুরস্কারপ্রাপ্তরা এই পুরস্কারগুলো গ্রহণ করেন তাই এর মান-মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বর্তায়। একইসঙ্গে এই বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতজনরা সঠিক মূল্যায়ন করতে না পারার দায় এড়াতে পারেন না। বহু সংগ্রামের পর বাঙালীর জয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকায় এ বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। একইভাবে শুধু অভিজাত মানুষের জন্য উৎসবের আয়োজন করা কিছু প্রতিষ্ঠানকে ঢালাওভাবে যেন অনুদান না দেয়া হয় সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ১৯৮৭ সালের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে শুরু হয়েছিল জাতীয় কবিতা উৎসব। এই উৎসবটি সবয় সমকালীন রাজননৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঘটনাপ্রবাহকে ধারণ করেছে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যেমন সোচ্চার থেকেছে তেমনি কাজ করেছে শুভ শক্তির পক্ষে। কবিতার মাধ্যমে বাংলার-ঐতিহ্যকে মেলে ধরেছে। পৃথিবীর কোথাও কবিদের এত বড় কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় না। আমরা না বললেও ক্রমশ এই উৎসবটি আন্তর্জাতিক অবয়ব পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক দেশ পেয়েছি সেই চেতনা ধারণ এবং মেহনতি মানুষের কণ্ঠকে তুলে ধরার প্রয়াস এই উৎসব। রবিউল হুসাইন বলেন, কবিরা শুধু কবিতাই লেখে না, দেশ ও সমাজের প্রতি নিজেদের দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করে। নূহ উল-আলম লেনিন বলেন, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদকপ্রাপ্তির অনেক সময় অনেককেই তদ্বির করতে দেখি। এতে ওই পুরস্কারের সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরও মর্যাদাহানি হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যক্তি নয়, সৃজনশীল কাজের বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় পুরস্কারগুলো প্রদান করা উচিত। ব্যক্তি নয়, পুরস্কার দেয়া কীর্তিকে। তেত্রিশতম উৎসবে ভারতের কবিদের মধ্যে অংশ নিচ্ছেন জ্যোতির্ময় দত্ত, মিনাক্ষী দত্ত, রাতুল দেব বর্মণ, বীথি চট্টোপাধ্যায় ও শিবান্তি ঘোষ। এছাড়া অংশ নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের ক্লেয়ার বুকার, তুরস্কের তারিক গুনারসেল, ইরাকের ড. আলী আল সালাহ, কঙ্গোর কামা কামান্ডা, স্পেনের জুলিও পাভানেত্তি, উরুগুয়ের আনাবেল ভিলার, চীনের ড. তানজিয়ান চাই, মালয়েশিয়ার মালিম ঘোজালি ও নেপালের পুষ্প খানাল। উৎসবে অংশ নিতে টিএসসির উৎসব কার্যালয়ে সারাদেশের ২৭০ জন কবি নিবন্ধন করেছেন। উৎসবের উদ্বোধনী দিন পর্যন্ত চলবে এই নিবন্ধন কার্যক্রম। ঢাকার কবিদের নিবন্ধন ফি ৩০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরের কবিদের নিবন্ধন ফি ২০০ টাকা। উৎসবের প্রথম দিনে থাকছে মুক্ত আলোচনা ও নিবন্ধিত কবিদের কবিতাপাঠ এবং আবৃত্তি পরিবেশনাসহ পাঁচটি অধিবেশন। দ্বিতীয় দিনে ‘বাঙালীর জয় কবিতার জয়’ এবং ‘কাব্যনাটক’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পীরা পরিবেশন করবেন কবিতার গান। সেই সঙ্গে থাকবে ছড়াপাঠের আসর। এছাড়া এদিনের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে ২০১৮ সালের জাতীয় কবিতা পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর হাতে তুলে দেয়া পুরস্কার।
×