ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন অভিযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর নজরদারি

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

নতুন অভিযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর নজরদারি

গত অর্থবছরের ৭.৮৬% জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে বিবেচনায় রেখে নতুন যাত্রা হবে আরও নিরন্তর ও অবারিত। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে উন্নয়নের অগ্রগামিতায় যে মাত্রায় সামনের দিকে এগিয়ে, সে গতিময়তাকে আরও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে সমৃদ্ধিকে সব মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে হবে। আর সেটা করতে গেলে নবগঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সাধারণ মানুষ, সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই শুধু নয়, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সবার সঙ্গে থেকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশকে তার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে দেবে। নতুন কর্মসূচী প্রণয়ন, অনুমোদন এবং বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোকে স্পর্শ করাই নয়, তাকে শীর্ষ পর্যায়ে উন্নীত করাও বর্তমান সরকারের নতুন সম্ভাবনার নবদিগন্ত। প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রবাহে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে অসমাপ্ত কাজগুলোকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া ছাড়াও চলমান প্রক্রিয়ার গতিপ্রকৃতিও সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নিজে সব কিছুর পাশে থেকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নেবেন। মন্ত্রীদের প্রতি দায়িত্বপরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সততা ও আদর্শনিষ্ঠায় নতুন উদ্যমে কাজের গতি বাড়াতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে অভিমত ব্যক্ত করেন। দায়িত্ব পালনে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি কর্মপরিকল্পনায় বিঘœ তৈরি করাকে কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না। দুর্নীতির প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি আবারও দৃঢ় প্রত্যয়ে ব্যক্ত করে ব্যক্তিগত সম্পদ তৈরিতে কোনভাবে ছাড় দেয়া যাবে না বলে সাবধান করে দেন। নিজের সম্মান আর দায়বদ্ধতা নিজেকেই প্রমাণ করতে হবে। সম্পদের পাহাড় গড়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে নিজেরাই সর্বনাশের মুখে পড়বেন। অগ্রসরমান ও চলমান কর্মপরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলেও শেখ হাসিনা নিজেই তার তদারকিতে থাকবেন। যাতে দীর্ঘসূত্রতা, সময়ক্ষেপণ, অর্থ অপচয়, অভ্যন্তরীণ জটিলতায় প্রকল্পকে তার লক্ষ্যমাত্রা চ্যুত করার সমস্ত অপকৌশল জোরালোভাবে প্রতিহত করা যায়। নতুন মন্ত্রিসভার প্রতি আস্থা রেখে তিনি যে নবগঠিত সরকার উপহার দিলেন, তা সত্যিই এক বিস্ময়ের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রেখে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রীদের সৎ ও আদর্শ নিষ্ঠতায় নিজের অবস্থানকে প্রমাণ করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনরায় দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করেন। সততা, দক্ষতা, পারদর্শিতা কোন মানুষকে তার সুনির্দিষ্ট গন্তব্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে না। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত রায়কে সম্মান জানিয়ে তাদের একান্ত নিকটে থেকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে হবে। সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে জনগণকে দেয়া নির্বাচনী অঙ্গীকার। সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকায় গণমানুষকে যেভাবে উদ্দীপ্ত করেছিলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে সেখান থেকে কোনভাবে সরে আসলে জনরোষকে ঠেকানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন। নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়ার একেবারে গোড়া থেকে অসমাপ্ত কাজ শেষ করাই শুধু নয়, আরও অনেক নতুন প্রতিশ্রুতি আছে, যা জনমানুষের কাছে তুলে ধরা জরুরী এই মুহূর্তে, সেটাই সবার আগে আমলে নিতে হবে। সততা নিজেই যে কত বড় শক্তি সে প্রমাণ অনেকবার হয়েছে। সেই সততার জীয়নকাঠিতেই দেশ প্রজ্বলিত হবে। সে দ্যুতি সারা বাংলাদেশে ছড়াবে আর তার আলো বিকিরণ প্রতিনিয়তই জাতির অন্ধকার দূর করবে। অনেক নতুন অনভিজ্ঞ মন্ত্রীকে নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভার যাত্রা শুরু হলেও দক্ষ এবং বিচক্ষণ মানুষের হাতেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটাও জনগণের সামনে স্পষ্ট করতে হবে। মন্ত্রিসভার এমন রদবদল দেশের দলীয় সরকারে এর আগে বিরাট আকারে কখনও হয়নি। যে অদম্য সাহস আর সীমাহীন আস্থায় নতুন মন্ত্রিসভা জনগণকে উপহার দেয়া হলো, তার মর্যাদা সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই রাখবেন এই বিশ্বাসে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় প্রত্যয়ী। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সরকারের গৃহীত হরেক কার্যক্রম, সাফল্য-ব্যর্থতা দেশী ও বিদেশী কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, গ্রামীণ কৃষ্টি অর্থনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা, প্রযুক্তিগত অর্জন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ এসব কিছুই নতুন সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ এবং তা মোকাবেলায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে হবে। দেশটাকে ২০২১ থেকে ২০৪১-এর লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে নিয়ে উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল করাতে হবে। সেই অদম্য যাত্রাপথে কোন অস্বচ্ছতা, অনিয়ম কিংবা বিঘœ সৃষ্টি করা যাবে না। নতুন বাংলাদেশ তার সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে অনেকখানি অগ্রসরমান। সেই বেগবান ধারাকে আরও কর্মউদ্দীপনায় সময়ের ¯্রােতে এগিয়ে যেতে হবে। পেছনের দিকে তাকানোর সময় মোটেও নেই। সেই দুর্নিবার শুভযাত্রায় কোন অশুভ শক্তিকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেয়া যাবে না। অনেক অভিশাপ আর আবর্জনাকে বাংলাদেশ অতিক্রম করলেও স্বাভাবিক পথযাত্রা এখনও নিষ্কণ্টক ও নির্বিঘœ নয়। ঐক্যবদ্ধ সংহত শক্তি আধুনিক বাংলাদেশকে তার যথাযথ নিশানায় এগিয়ে দেবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বিত্ত, নির্বিশেষে সব বাধা ব্যবধান ঘুচিয়ে দেবে। দেশটা সব মানুষের। সবাই মিলেই এর প্রাণশক্তি এবং উজ্জীবনের সার্বক্ষণিক কা-ারী। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় অর্থ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, কৃষি, তথ্য, সংস্কৃতি, বিমান, নৌপরিবহন ব্যবস্থাপনায় যে একঝাঁক নতুন আর তারুণ্যের দীপ্তিময় আভায় অভিষিক্ত হয়, সেখানে ভবিষ্যত বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তার জন্য সময়ের ওপর নির্ভর করা ছাড়া আপাতত কোন পথ নেই। তবে দূরদর্শী ও বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী তাঁর সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন, সময়ই তার যথাযথ জবাব দেবে। পরম আস্থায় তাঁর দেয়া দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনে সততার পরিচয় দিতে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই কার্পণ্য করবেন না। মানুষের ব্যক্তিক এবং সামাজিক চাহিদা একেবারে আপেক্ষিক। সমাজের একজন সুনাগরিক তার ৫ মৌলিক অধিকার নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, যদি সে তেমন উচ্চাকাক্সক্ষী না হয়। সমাজের প্রতি নিজের দায়বদ্ধতা স্বীকার করে যোগ্যতা আর ক্ষমতায় যা অর্জন হয় সেটুকু নিয়ে যদি সে পরিতৃপ্ত থাকে তাহলে পারিপার্শ্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তখন দুর্নীতি নামক মহাঘাতক ব্যাধিও নিজেকে নগ্নভাবে প্রকাশ করতে পারে না। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে আর্থসামাজিক পরিস্থিতি সেখানে সৎভাবে জীবন যাপন সবার হাতের নাগালে। আজ আমরা শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতিই নই, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বলয়ে উল্লেখযোগ্য রফতানিকারক দেশ হিসেবেও বিশ্বসভায় স্বীকৃত ও চিহ্নিত। আমাদের দৈনন্দিন মৌলিক চাহিদা মেটানোর ব্যবহৃত পর্যাপ্ত পণ্য এই মুহূর্তে দেশে বিদ্যমান। আর গণমানুষের আর্থিক সচ্ছলতা তাদের একেবারে হাতের কাছে। আর তাই এমন এক অগ্রগতির সুবর্ণ অবস্থান থেকে আরও উন্নত দেশ গড়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এই সময় সম্পদের পাহাড় তৈরির চিন্তা না করে শুধু টেকসই উন্নয়নের অপ্রতিহত গতিধারায় দক্ষ মানব সম্পদ গড়তে পারলে বৈষয়িক সমৃদ্ধি আসতে খুব বেশি সময় লাগবে না। সততা নিজেই অন্যতম প্রধান নিয়ামক শক্তি। এই অদম্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে ঐশ্বর্যের স্বর্ণশিখরে নিয়ে যাওয়া খুব অসম্ভব কিছু নয়। আরও ধৈর্য ধরতে হবে, নিজেকে সংহত, সংযত আর নির্লোভ করে সামাজিক পরিম-লের বিকাশ ঘটাতে পারলে ব্যক্তিক সফলতা আসতে খুব বেশি দেরি হবে না। মানুষ যেমন ব্যক্তিক একইভাবে সে সামাজিকও। ব্যক্তিগত সততা আর দায়বদ্ধতা সমাজ বিনির্মাণের মূল হাতিয়ার। মানুষের যোগ্যতা, ক্ষমতা আর শ্রমশক্তি থাকলে সততা আর নিষ্ঠা তার অনুষঙ্গ হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে যথার্থভাবে পর্যবেক্ষণ করে সবাইকে সততা আর নিষ্ঠার প্রতি অনমনীয় হতে উদাত্ত আহ্বান জানান। আর দুর্নীতিকে কঠোরভাবে পরিত্যাগ করতেও জোরালো আবেদন ধ্বনিত হয়। দেশ সমৃদ্ধির অপ্রতিহত ধারায় অনেক এগিয়ে গেছে। বাকিটাও জোর কদমে সামনের দিকে চলবেÑ এর কোন ব্যত্যয় হবে না এই প্রত্যয় ব্যক্ত করে সবাইকে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচনোত্তর বিজয়ের নতুন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো প্রথম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। নবগঠিত মন্ত্রিপরিষদ আর সংসদ সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত এই বৈঠকে ১৮৯৩ কোটি টাকার ৮ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী যে বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন তা হলো বর্জ্য শোধনাগার ছাড়া কোন শিল্পনগরীকে স্বীকৃতি দেয়া যাবে না। গত অর্থবছরে অর্জিত ৭.৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবার অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে। সেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে উন্নয়নের গতিপ্রবাহকে আরও বেগবান করা ছাড়া প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। বৈঠকের শুরুতে প্রকল্প প্রণয়ন, বাছাই, অনুমোদন এবং বাস্তবায়নে বিশেষ নজরদারি জরুরী বলে মন্তব্য করেন। উন্নয়নের বহুমাত্রিক সূচকে বিকাশমান শিল্পনগরী গড়ে তোলা সময়ের দাবি। আর সেই শিল্পনগরী তৈরি করতে কোন ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষায় শিল্প অঞ্চলে বর্জ্য শোধনাগার তৈরি আবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। উন্নতমানের শিল্পনগরী তৈরি করতে তার চারপাশের পরিবেশ বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করে বাসযোগ্য এলাকা গড়ে তুলতে ইটিপির কোন বিকল্প নেই। জনগণ তাদের মূল্যবান রায় দিয়ে আবারও নতুন করে সরকার গঠনের ক্ষমতা এবং অধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। সুতরাং সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যা যা করা দরকার সেসব ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সময় এই মুহূর্তে আমাদের নেই। দেশের মানুষই আমাদের সব ক্ষমতা আর শক্তির উৎস। তাদের আস্থা ও বিশ্বাসকে মর্যাদা দিয়ে সব ধরনের দায়বদ্ধতা মাথায় রাখতে হবে এবং সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নগরবাসীর প্রতিদিনের যানজট সমস্যাকেও সর্বাধিক গুরুত্ব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা দেন। যানজটকবলিত সড়ক মহাসড়ককে আধুনিকতার বলয়ে নিয়ে এসে যথাযথ প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ওপরে বিশেষ নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। সরকার প্রধানের এই মুহূর্তে তাঁর প্রিয় জনগণ ও দেশ ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সময় নেই যেন। লেখক : সাংবাদিক
×