ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাওসার রহমান

জলবায়ু অভিযোজনে চাই অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

জলবায়ু অভিযোজনে চাই অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা

বাংলাদেশের উপকূলের ছোট্ট একটি গ্রাম ফাইল্লাপাড়া। এ গ্রামে যাওয়াটা বেশ কষ্টের ব্যাপার। শুকনো মৌসুমে যেতে হয় চিংড়ি ঘেরের পাশ দিয়ে সরু পথ ধরে। আর বর্ষার সময় যেতে হয় সাগরের মাঝ দিয়ে। পুরো গ্রামটিকে দেখে মনে হবে, কাদার ওপর যেন মাটির একটি ঢিবি, যেখানে কিছু ঘরবাড়ি আর মুরগির খাঁচা আছে। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত এই এলাকায় ধান চাষ করা হতো। যদিও তাতে খুব একটা লাভ হতো না, কিন্তু লোকজনের দিন চলে যেত। কিন্তু পানি আর লবণাক্ততা বৃদ্ধি এই গ্রামবাসীদের চিংড়ি ঘের অথবা লবণ চাষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এখন সেখানে খুব সামান্যই ধানের ক্ষেত দেখা যায়। এই গ্রামের একজন বাসিন্দা ৩০ বছরের আলমুন্নাহার, যার তিনটি ছেলে রয়েছে, তবে তার একটি মেয়ের জন্য অনেক আকাক্সক্ষা। কারণ মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অনেক ভাল। ছেলেরা কথা শোনে না, তারা বেপরোয়া, মেয়েরা অনেক বেশি শান্ত হয়। তাই যখন তিনি ভাবতে শুরু করেছিলেন যে এবার তার হয়ত মেয়ে সন্তান হতে যাচ্ছে, তখন তার গর্ভপাত হয়ে যায়। আলমুন্নাহারের মতো এই গ্রামের আরও অনেক নারী গর্ভপাতের কারণে তাদের পেটের সন্তান হারিয়েছেন। যদিও গর্ভপাত একেবারে অস্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়, কিন্তু বিজ্ঞানীরা অন্যসব এলাকার বাসিন্দাদের তুলনায় এই এলাকার মানুষের মধ্যে এর সংখ্যা বৃদ্ধির হার দেখতে পেয়েছেন। গর্ভপাতের হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ নিয়ে গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, এজন্য জলবায়ু পরিবর্তন প্রধান কারণ হতে পারে। তাদের বিশ্বাসও, জলবায়ু পরিবর্তন-ই এর কারণ। বাংলাদেশে যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রভাব পড়ছে এটিই তার উদাহরণ। আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) বিজ্ঞানী ড. মানজুর হানিফি বলছেন, ‘একে আপনি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল বলতে পারেন। উপকূলের এসব জমির ওপর এর প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যাচ্ছে, কিন্তু শরীরের ওপর যে প্রভাব পড়ছে, তা দেখতে পাওয়া যায় না।’ ফলে এই প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের যে আর বসে থাকার উপায় নেই, এই গবেষণা তা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক এই জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের কোন হাত নেই। উষ্ণতা বৃদ্ধির গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনে আমাদের ভূমিকা অত্যন্ত নগণ্য। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর এই বিষ ছড়ানোর ফল আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ুতে আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে গ্রিনহাউজ গ্যাসের মাত্রা। গ্রিনহাউজ গ্যাসের বর্তমান যে মাত্রা রয়েছে তা পঞ্চাশ লাখ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ডব্লিউএমএ জানায়, জলবায়ুতে বিভিন্ন গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতার হার ৪১ শতাংশ বেড়েছে। তাই কার্বন ডাই অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্রিনহাউজ গ্যাসের মাত্রা রোধ করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবী মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার সময়ও শেষ হতে চলেছে। আমরা গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবো না। এটি দ্রুত গতিতে কমাতে হবে উন্নত দেশগুলোকে, যারা এখন প্রতি বছর ৩৭ বিলিয়ন টন করে কার্বন ডাই অ´াইড নির্গমন করছে। তাই আমাদের জলবায়ুর এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ আমাদের জোরদার অভিযোজন পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের দেশে পড়তে শুরু করেছে। স্বাস্থ্যখাতের মতো কৃষি খাতেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা কি এই প্রভাব মোকাবেলায় প্রস্তুত? এটা বলা সমীচীন যে, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে সচেতন হলেও এখনও তার প্রভাব মোকাবেলায় পুরোপুরি প্রস্তুত নই। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা (বিসিসিএসএপি) প্রণয়ন করতে সক্ষম হলেও এখন পর্যন্ত আমরা জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারিনি। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছে। গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের (জিসিএফ) ‘প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচীর’ আওতায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও ত্বরান্বিত’ (Formulation and Advancement of the National Adaptation Plan Process in Bangladesh) করতে প্রায় ২৩ কোটি টাকার (২৮ লাখ ৫ হাজার ৯৯০ মার্কিন ডলার সমমূল্যের) একটি প্রকল্প সহায়তা পেয়েছে। ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) ৩৬ মাস মেয়াদি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। উল্লেখ্য, জিসিএফের এই প্রস্তুতিমূলক কর্মকান্ডের আওতায় স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অগ্রাধিকার নির্বাচন, জিসিএফ-এ সরাসরি অধিগম্যতার জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ইস্যুসমূহের জন্য অর্থায়ন প্রাপ্তিতে ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বেসরকারী খাতকে সম্পৃক্ত করা প্রভৃতি কার্যক্রমের জন্য প্রকল্প সহায়তা দিয়ে থাকে। এই ‘প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচী’র আওতায় এ পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১০২টি দেশ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা পেয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশসহ এন্টিগুয়া ও বারবাডোস, আর্জেনটিনা, কলম্বিয়া, প্রজাতান্ত্রিক কঙ্গো, কেনিয়া, লাইবেরিয়া, নেপাল, নাইজার, পাকিস্তান এবং উরুগুয়ে- এই মোট ১১টি দেশ এ পর্যন্ত নিজ নিজ জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ লাখ মার্কিন ডলার করে পাবে। বাংলাদেশ ২০০৮ সালে (যা ২০০৯ সালে পরিমার্জন করা হয়) জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা (বিসিসিএসএপি) প্রণয়ন করেছে এবং ২০০৫ সালে প্রণীত ‘নাপা’ ডুকমেন্টটিকে ২০০৯ সালে ‘আপডেট’ করেছে। বর্তমানে বিসিসিএসএপি হচ্ছে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার প্রধানতম দলিল। আর বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নও করছে। এখানে উল্লেখ্য, বিসিসিএসএপির প্রথম পর্যায়ের সময়কাল ২০১৮ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবার বর্তমানে বাংলাদেশ তার ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা’ বা ন্যাশনাল এ্যাডাপটেশন প্ল্যান (এনএপি) তৈরির দিকে এগোচ্ছে। এই দুই ধারায় চলমান প্রক্রিয়াকে একমুখী করতে ২০১৮ সালের পূর্বেই দেশটিকে হয় বিসিসিএসএপি পরিমার্জন বা সংশোধন করতে হবে অথবা ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা’ প্রণয়নের কাজ শুরু করতে হবে। ইউএনএফসিসিসির গাইডলাইন অনুয়ায়ী, ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’ থেকে অভিযোজনের জন্য সহায়তা পেতে সকল উন্নয়নশীল দেশকে ‘National Adpaption Plan (NAP)’ তৈরি করতে হবে। তাই বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক উদ্যোগসমূহের প্রেক্ষাপটে এবং জোরালো রাজনৈতিক অঙ্গীকারের ভিত্তিতে এ বছরের শুরুর দিকেই বাংলাদেশ দক্ষতার সঙ্গে ‘ন্যাপ রোড ম্যাপ’ চূড়ান্ত করেছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনকে সম্পৃক্ত করে জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীলতাকে নিশ্চিত করে জাতীয় পরিকল্পনাকে একটি শক্তিশালী পরিকল্পনায় উন্নীত করতে সুদৃঢ় ভিত্তি প্রদান করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে অতিদ্রুত গণঅংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা ও জাতীয়ভাবে ‘ন্যাপ’ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনে একটি বড় অগ্রগতি হবে। ন্যাপ প্রকল্পের জন্য সাতটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় রয়েছে। এই বিষয়গুলো হচ্ছে, ১. এই প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন পরিকল্পনার জন্য জাতীয়, সেক্টরসমূহের জন্য এবং ধারণাগত পর্যায়ের প্রযুক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, তথ্য এবং তথ্যের ঘাটতির মূল্যায়ন করবে। ২. জলবায়ু অভিযোজনকে নেতৃত্ব দান এবং ন্যাপ প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় প্রক্রিয়ার উন্নতিসাধন করবে। ৩. জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি ও বিপদাপন্নতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন পরিকল্পনা ব্যখ্যায় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিয়ে বিশদ তথ্য ও জ্ঞানের ভিত্তি নির্মাণ করা। ৪. ন্যাপ, জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং অন্যান্য জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন নীতি, কার্যাবলী এবং কর্মসূচীগুলোতে অন্তর্ভুক্তির জন্য মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদী অভিযোজন বিকল্পগুলোর পর্যালোচনা এবং অগ্রাধিকার নির্বাচন করবে। ৫. জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন অগ্রাধিকারগুলো শনাক্তকরণের ভিত্তিতে ন্যাপ প্রণয়ন ও সংযোগ রক্ষা এবং ইতোমধ্যেই গৃহীত পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে সমন্বয়সাধন। কমপক্ষে তিনটি অগ্রাধিকারমূলক খাতে একটি পাইলট উদ্যোগের সূচনা করে জাতীয় উন্নয়ন এবং খাতওয়ারি পরিকল্পনা, প্রোগ্রামিং এবং জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনকে একত্রিত করা। ৬. জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রক্রিয়াকে মূলধারায় আনয়নে প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রকল্পসমূহে কমরত কর্মীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা। জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন বিষয়ক প্রকল্প অর্থায়ন এবং বিনিয়োগ অনুসরণ করার জন্য মানদন্ড এবং প্রোটোকল প্রতিষ্ঠা করা এবং ৭. জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য কর্ম, নীতি এবং অংশীদারত্বভিত্তিক কৌশলগুলো চিহ্নিত ও অগ্রাধিকার প্রদান। এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, প্রকল্প প্রস্তাবনায় কিছু বিষয় দুর্বলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। দুর্বল বিষয়গুলো আরও শক্তিশালী করা গেলে আমাদের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনাটি একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরিকল্পনা হিসেবে পরিগণিত হবে। এক্ষেত্রে অন্তত পাঁচটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি। এগুলো হলো- ১. জাতীয় উদ্যোগে প্রণীত ন্যাপ এবং এনডিসি (২০১৫) এর ভিত্তিতে অভিযোজন, প্রশমন, অর্থায়ন ও সুশাসন প্রভৃতি থিমের সমন্বয়ে একটি ‘অভিন্ন জাতীয় জলবায়ু নীতিমালা’ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করার দৃঢ রাজনেতিক অঙ্গীকার ও পরিকল্পনা গ্রহণ। ২. ন্যাপ প্রকল্পে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ম্যাপিংকে যথাযথ বিবেচনায় রাখা হয়নি। জলবায়ু ঝুঁকি এবং বিপদাপন্নতা বিশ্লেষণ শুধুমাত্র পূর্ববর্তী গবেষণাসমূহের প্রকাশিত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে করা হবে বলে বলা হয়েছে, কিন্তু কোন নতুন গবেষণা পরিচালনার কথা বলা হয়নি। আমার মনে হয়, একটি কার্যকর ঝুঁকি এবং বিপদাপন্নতা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার জন্য এটি যথেষ্ট নয়। ৩. এই রিপোর্ট গুরুত্বের স্তর বা বিন্যাসের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিষয়ে (থিম) ঝুঁকি মূল্যায়নের কথা বলা হলেও কোন কোন বিষয় বা থিমের ওপর কাজ করা হবে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়া হয়নি। আবার এই প্রকল্পের আওতায় পরিবেশগত ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চল (সুন্দরবন, পাহাড়ী অঞ্চল প্রভৃতি) ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের বিপদাপন্নতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ৪. আবার ২০১৫ সালে প্রণীত খসড়া ন্যাপ প্রস্তাবনায় দুটি পৃথক ইকোসিস্টেমে পরীক্ষামূলকভাবে এলাকাভিত্তিক স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (খঅঅচ) বাস্তবায়নের সুপারিশ থাকলেও বর্তমান প্রকল্প প্রস্তাবনায় তার উল্লেখ নেই। অথচ নেপালের স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়নের অভিজ্ঞতাকে বাংলাদেশে কাজে লাগিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন বিষয়ে একটি অগ্রগামিতা সৃষ্টি করা সম্ভব ছিল। এমনকি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তহবিল (এলডিসি ফান্ড) থেকে প্রাপ্ত সহযোগিতা নিয়ে প্রণীত ইউএনডিপি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন, ‘খরাপ্রবণ ও হাওরাঞ্চলে ইকো-সিস্টেমভিত্তিক অভিযোজন কৌশল’ (Ecosystem-based Approaches to Adaptation (EbA) in the Drought-prone Barind Tract and Haor Wetland Area) প্রকল্পের অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে সহায়ক হতো। ৫. সর্বশেষ, ন্যাপ প্রকল্প প্রস্তাবনায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে একটি কারিগরি উপদেষ্টা বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ইআরডি ও এনডিএ, অন্যান্য ৯টি মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সহযোগী ও প্রাইভেট সেক্টর থেকে প্রতিনিধিরা থাকবেন। কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন প্রতিনিধি থাকবেন বা উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কেবল বিদেশী দাতা ও সংস্থাদের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কর্মরত দেশীয় এনজিও ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনাতে (বিসিসিএসএপি-২০০৯) প্রস্তাবিত পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ‘জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি’ গঠনের বিষয়টি ‘ন্যাপ প্রকল্প প্রস্তাবনায়’ উল্লেখ করা হলেও এর কাঠামোগত কোন রূপরেখা তুলে ধরা হয়নি। ফলে গত এক দশকে অকার্যকর এই কমিটিতে জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করে কিভাবে কার্যকরী করা যেতে পারে, তা পুরোপুরি অস্পষ্ট রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরির জন্য নিচের চারটি প্রস্তাবকে অবিলম্বে বিবেচনায় নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। একটি অভিন্ন ‘জাতীয় জলবায়ু নীতিমালা’ প্রণয়নের অংশ হিসেবে গণঅংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে অবিলম্বে জাতীয়ভাবে- National Adpaption Plan (NAP)’ তৈরি করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ, ২. ন্যাপ প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রধান ছয়টি ইকোসিস্টেম (খরাপ্রবণ অঞ্চল, উপকূল অঞ্চল, পাহাড়ী অঞ্চল, বন্যা প্লাবন ভূমি, চরাঞ্চল ও হাওড় এলাকা) এর জন্য ইকোসিস্টেমভিত্তিক স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়নের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করণ, ৩. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের হাত থেকে সর্বাধিক বিপন্ন মানুষদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ‘সামজিক সুরক্ষা বেষ্টনী’ গড়ে তোলার মাধ্যমে বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে অবিলম্বে অভিযোজনের বাইরে লস এ্যান্ড ড্যামেজ মোকাবেলার একটি জাতীয় কাঠামো প্রণয়ন করা এবং ৪. ন্যাপ প্রকল্প প্রণয়নে প্রস্তাবিত কারিগরি উপদেষ্টা বোর্ডে জাতীয় পর্যায়ে কর্মরত এনজিও ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত এবং ‘জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি’ গঠনকালে কমপক্ষে ১০ শতাংশ আসন এনজিও ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের জন্য বরাদ্দ রাখা। লেখক : সাংবাদিক
×