ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেয়া হবে

পুলিশে আরও এক লাখ সদস্য নিয়োগ চায় সদর দফতর

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

পুলিশে আরও এক লাখ সদস্য নিয়োগ চায় সদর দফতর

শংকর কুমার দে ॥ পুলিশ বাহিনীতে আরও প্রায় ১ লাখ সদস্য নিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হবে ফেব্রুয়ারিতে। অনুষ্ঠিতব্য পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই প্রস্তাব দেবে পুলিশ সদর দফতর। ফেব্রুয়ারিতেই যাতে অন্তত ১০ হাজার পুলিশ নিয়োগ দেয়া যায় সে ধরনের প্রস্তাবও থাকবে। ৪ ফেব্রুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনীতে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় কালে পুলিশে জনবল বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়ার বিষয়ে পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ নিজেরা আলোচনা করেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদটিকে ফোর স্টার (চার তারকা) মর্যাদা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশে জনবল বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব হিসেবে আরও ১ লাখ সদস্য নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হবে। পুলিশের এএসপি (বিসিএস ক্যাডার), সাব ইন্সপেক্টর, কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পুলিশ সপ্তাহ ’১৯ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মার্চপাস্ট, পদক বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন শেষে দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজ ও মতবিনিময় সভা হয়। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই মতবিনিময় সভায় পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরার রেওয়াজ আছে, যাতে পুলিশ বাহিনীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রস্তাবটিও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, পুলিশে এএসপি ও তার উর্ধতন পদে কর্মরতদের জন্য পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশ কনস্টেবল থেকে শুরু করে ইন্সপেক্টর পদে কর্মরতদের জন্য এ্যাসোসিয়েশন-এই দুই নামে দুটি পুলিশ এ্যাসোসিয়েশন আছে। পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর পুলিশ বাহিনীতে জনবল বৃদ্ধিসহ নানা দাবি দাওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবে পুলিশ সদস্যদের সংগঠন দুটি। ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ বাহিনীতে ১ লাখ সদস্য নিয়োগের অনুমোদন পেলে ফেব্রুয়ারিতেই অন্তত ১০ হাজার সদস্য যাতে নিয়োগ দেয়া যায় সেই বিষয়টিও আলোচনা করা হয়েছে। বাকি পুলিশ সদস্যদের নিয়োগটি যাতে ’১৯ সালে বছরজুড়ে চলতে পারে সেই ধরনের আলোচনা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী প্রধানরা ফোর স্টার (চার তারকা) খচিত। পুলিশ প্রধানকেও ফোর স্টার দেয়ার দাবি তোলা হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে পুলিশ যেভাবে দেশের ৬৪ জেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করেছে সেই সাফল্য, প্রশংসার বিষয়টি উত্থাপিত হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র মতে, গত বছর ’১৮ সালে পুলিশে ৫০ হাজার সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই নিয়ে বর্তমানে পুলিশ বাহিনীতে জনবল আছে ২ লাখ ১২ হাজার ৬। সারাদেশের ৬৩৩টি থানার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশ বাহিনীতে জনসংখ্যা অপ্রতুল। এতে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ মানুষজনের জানমালের নিরাপত্তা, সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশ বাহিনীকে। এ জন্য পুলিশ বাহিনীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পুলিশ বাহিনীতে জঙ্গী, সন্ত্রাস, মাদক, সাইবার ক্রাইমসহ নানা ধরনের কাজে বিশেষায়িত টিম গঠন করা হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, শিল্প পুলিশসহ নানা ধরনের পুলিশ বাহিনীও গঠন করা হয়েছে। পুলিশের এসব ইউনিটে পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা যুক্ত করতে হবে। নতুবা পুুলিশ বাহিনীকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গতিশীল করাটা কঠিন হয়ে পড়বে। পুলিশ বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের স্বার্থেই পুলিশ বাহিনীতে জনবল বৃদ্ধির বিষয়টি অপরিহার্য বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের (নাইন-ইলেভেন) পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিশেষায়িত বাহিনী গঠন করা হয়। বাংলাদেশে জঙ্গী সংগঠনের কার্যক্রম বিস্তৃত হলে জাতিসংঘ এ দেশেও পুলিশ বিভাগে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আদলে একটি বিশেষ ইউনিট গঠনের তাগিদ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার ২০০৯ সালে এসে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠনসহ নানা ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ জন্য জনবল বৃদ্ধি করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ পুলিশ বাহিনী গঠন করাটা সময়ের দাবি বলে মনে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। প্রসঙ্গত এ বছর ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯’ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি। গত ৩০ ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে এ বারের পুলিশ সপ্তাহ জানুয়ারি মাসের পরিবর্তে ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রতিবছরই পুলিশ সপ্তাহ পালন করা হয় সাধারণত নতুন বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া এবং নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা মুখ্য হওয়ার কারণে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাসে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করার কারণে পুলিশ কর্মকর্তারা নির্বাচনী ধকল কাঠিয়ে উঠে এখন এবার ফুরফুরে আমেজে পুলিশ সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে।
×