ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই পদ্মা সেতুর আরও দুটি স্প্যান বসছে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

 শীঘ্রই পদ্মা সেতুর আরও দুটি স্প্যান বসছে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ শীঘ্রই বসছে পদ্মা সেতুর আরও দু’টি স্প্যান। এর আগে বুধবার জাজিরা প্রান্তের আগের পাঁচটি স্প্যানের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে ‘এফ৬’ স্প্যানটি। পদ্মা সেতুর প্রথম বসা ‘৭এ’ স্প্যানটির সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে জাজিরা প্রান্তের ‘এফ৬’ স্প্যানটি। জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৭ নম্বর খুঁটির ওপর এই স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এই নিয়ে জাজিরা অংশে সেতুটি দৃশ্যমান হলো ৯০০ মিটার। আর মাওয়া প্রান্তে আরও দৃশ্যমান রয়েছে ১৫০ মিটার। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম ‘৭এ’ স্প্যানটি বসেছিল। এবার ৬ষ্ঠ মডিউলের স্প্যান বসানো শুরু হল। এই মডিউলের আরও দু’টি স্প্যান শীঘ্রই বসবে। ‘৬ই’ নম্বর স্প্যানটি বসবে ৩৫ ও ৩৬ নম্বর খুঁটিতে। আর ‘৬ডি’ স্প্যানটি বসবে ৩৫ ও ৩৪ নম্বর খুঁটি। ‘৬ই’ ও ‘৬ডি’ নম্বর স্প্যান সম্পূর্ণ প্রস্তুত। রং করে রাখা হয়েছে। ‘৬ই’ কনস্ট্র্রাকশন ইয়ার্ডের জেটির কাছেই ক্রেন লাইনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। ‘৬ডি’ এরই পাশে পেন্টিং শপে প্রস্তত অবস্থায় রয়েছে। এটি ২-১ দিনের মধ্যেই পেন্টিং শপ থেকে বের করে ইয়ার্ডের জেটির পাশের ক্রেন লাইনে রাখা হবে। আর ৩৫ নম্বর ও ৩৪ নম্বর খুঁটির কাজও প্রায় সম্পন্ন। এখন শুধু সার্টারিং খোলা এবং স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি মূল কাজ। তাই পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা বলছেন, হয়ত ফেব্রুয়ারিতেই এই দু’টি স্প্যান বসে যাবে। তা না হলে এমনও হতে পারে ফেব্রুয়ারিতে একটি এবং মার্চে একটি স্প্যান বসবে। প্রকল্প পরিচালক চীনে রয়েছেন তিনি দেশে ফিরলে এই দুই স্প্যান বসানোর সিডিউল করা হবে। চলতি মাসেই কেটে গেছে সেতুর নক্সাজনিত সব জটিলতা। এখন কাজের অগ্রগতি অনেক ভাল, সেতুর কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৬৩ শতাংশ। আর বাকি কাজ শেষ করতে তাই বাড়তি মনোযোগ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা আরও বলেন, যেভাবে পদ্মা সেতুর কাজ এগুচ্ছে আগামী ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যেই পদ্মা সেতু ব্যবহারের উপযোগী হবার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এদিকে মূল সেতুর মোট খুঁটি (পিয়ার) ৪২টি। এর মধ্যে ২০টি দৃশ্যমান রয়েছে। যার ১৬টির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছে আরও ১১টি খুঁটি। ৬,৭,৮, ৩১ ও ৩২ নম্বর এই পাঁচটি খুঁটিতেই পাইল বসেছে ৩টির বেশি। ৮,৩১ ও ৩২ নম্বর খুঁটিতে খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল বসানোর কাজ চলমান আছে। আর ২৮ জানুয়ারিতে থেকে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে আরও ৪টি করে খাঁজকাটা কাটা পাইল বসানো শুরু হচ্ছে। বাকি ছয়টি অর্থাৎ ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯ ও ৩০ খুঁটিতেও খাঁজকাটা পাইল বসবে। তাই সেতুর মূল ভিতের কাজ এখন শেষ পর্যায়ের চলে আসছে। এতে সেতু চালু হওয়ার কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। নদীতে ৪০টি খুঁটির মোট ২৬২টি পাইলের মধ্যে ১৯২টি পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৪টি পাইলের বটম সেকশনের কাজ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এগুলোর টম সেকশন হবে। এছাড়া ১৭টি স্প্যান প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে আরও ১৮টি স্প্যান। সম্পূর্ণ হওয়া ৩৫টি স্প্যানের মধ্যে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছেছে ১৯টি স্প্যান। বাকি ১৬টি স্প্যান পথে রয়েছে বা চীন থেকে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। সেতুর নিচ তলায় চলবে ট্রেন। তাই নিচতলায় ট্রেন চলাচলের জন্য স্লাভ বসানো হচ্ছে। জাজিরা প্রান্তে বসিয়ে দেয়া স্প্যানে এ পর্যন্ত ১২৮টি রেলওয়ে স্লাভ বসানো হয়েছে। রেললাইনের জন্য ২ হাজার ৯৫৯টি স্লাভের মধ্যে এরই মধ্যে ১৩০৫টি স্লাভ তৈরি হয়েছে। রেলওয়ে স্লাভগুলো তৈরি হচ্ছে মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। আর ২২ মিটার দীর্ঘ রোডওয়ে স্লাভ প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি। মাওয়া ও জাজিরা দু’পারেই এই রোডওয়ে স্লাভ তৈরি হয়েছে এ পর্যন্ত ২৮০টি। এই মাসেই রোডওয়ে স্লাভ বসানোর কথা রয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় ৪ মাস পর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। এর দেড় মাস পর ১১ মার্চ জাজিরা প্রান্তে ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। এর ২ মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। এর এক মাস ১৬ দিনের মাথায় পঞ্চম স্প্যানটি বসে ২৯ জুন। আর বুধবার ৬ মাস ২৪ দিন পর বসলো ষষ্ঠ স্প্যানটি। তবে এর আগে ১২ অক্টোবর মাওয়া প্রান্তের ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটিতে বসেছে ‘১এফ’ নম্বর স্প্যান। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। আর দু’পারে ভয়াডাক্ট (সংযোগ সেতু) রয়েছে আরও প্রায় ৩ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুটি হচ্ছে ৯ দশমিক ৮২ কিলোমিটার। সংযোগে সেতুও তরতর করে উঠে যাচ্ছে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। ক্রমেই পদ্মা সেতু দীর্ঘ হচ্ছে। দেড় শ’ মিটারের একটি একটি করে জাজিরা প্রান্তেই ছয়টি স্প্যান বসে গেছে। তাই ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে পদ্মা সেতু। এরই মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর অগ্রগতি আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। সেতুর এই অগ্রগতিতে খুশি পদ্মা পারের মানুষ। জাজিরার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘জীবনে আমরা যা দেহি নাই, তা দেখতাছি। পদ্মায় এই বড় সেতু বানাইতে যে, কত ধরনের বড় বড় যন্ত্রপাতি কাজ করতাছে, তা দেইখ্যা টাশকি লাগার মতন। কাছে থেইক্যা দেখবার সুযোগ পাইতাছি। অনেক অনেক...ভাললাগা, বুঝাইতে পারতাছি না। আমরা আগাইয়া যাইতাছি। শেখের বেটি আমাগো ভাগ্য খুইল্যা দিছে।’ নাসিম মিয়া বলেন, ‘যা দেখতে পাইতাছি, তা কোনদিন কল্পনাও করি নাই। এই চরের মধ্যে যেই সব কাজ হইতাছে, হেগুলি, সব কইতে পারুম না, তয় এইটা বুঝতাছি পদ্মা সেতু খুব মজবুত করইরা বানাইতাছে। এমুন বড় নদীরে মধ্যেই এত মজবুত সেতু হইতে পারে ভাবতেও পারি নাই। এই সেতু আমাগো ভাগ্য বদলাইয়া দিতাছে। মনির হোসেন বলেন, আমাগো যাতায়াত খালি সহজ হইব না। ঘর থেকে বের হইলেই ঢাকা। আর এই সেতুর কারণে আমাগো জাগা জমির দাম বাইরা গেছে। আমাাগো এই গ্রাম শহর হইব।
×