ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীতে বার্ধক্যের খাবার

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

শীতে বার্ধক্যের খাবার

বয়স্কদের ক্ষেত্রে শীতকালে খাবার গ্রহণে অনেক সময় অসুবিধা হয়। কারণ খুব শীতে তারা একেবারেই খেতে চান না আবার পানি খাওয়া কম হয় বলে খাবার হজমে সমস্যা হয়। এদিকে শীতে শরীর গরম রাখার জন্য অনেকে খুব বেশি চা-কফি পান করেন। ফলে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত যেমন ঘটে, তেমনি খাবারেও অরুচি দেখা দেয়। এ সময় হাঁটাচলা কম হয় এবং খাবার থাকে উচ্চক্যালরি সম্পন্ন। এজন্য ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। চেষ্টা করতে হবে খাবারে ক্যালরি কম রাখার। ফল ও সবজি স্যুপ খেতে পারলে ভাল হয়। ঠা-ার হাত থেকে বাঁচার জন্য খাবারের পানি কুসুম গরম করে খেলে ভাল হয়। দাঁতের নড়বড়ে অবস্থার জন্য বার্ধক্যে খাবার খেতে অসুবিধা হয়। এজন্য তাদের খাবার নরম হওয়া উচিত। তাই তাদের খাবারে থাকবে দুধ-রুটি, দুধ-সুজি, ডাল-রুটি, নরম খিচুড়ি, জাউভাত, ডিম পোচ, নরম মুরগির মাংস, ঘুঘনি, দুধ-মুড়ি, দুধ-সেমাই ইত্যাদি। বয়স্ক লোকদের খাবারের জরিপ নিয়ে দেখা গেছে যে, তারা তাদের বরাদ্দকৃত খাবার থেকে ৪০% খাবার কম খাচ্ছেন। ফলে তাদের দৈহিক ক্লান্তি, গাঁটে ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য যাবতীয় অসুবিধার জন্য চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়। অপর দিকে দেখা যায় যিনি যৌবনের শুরুতে খাদ্য ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনে চলেছেন, তিনি বৃদ্ধ বয়সে অধিকতর সুস্থ থাকেন। তার দেহ যন্ত্রগুলো দীর্ঘকাল সজীব ও সতেজ থাকে। খাবারের বিষয়ে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে পারলে ভাল হয়। যেমন- ক্স খাবার গরম হতে হবে। ক্স রাতে কম খাওয়া ভাল। ক্স দিনে দু’এক কাপ চা খেলে ক্ষতি নাই কিন্তু এর চাইতে বেশি হলে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্স রাতে শোয়ার পূর্বে এককাপ গরম দুধ বা যে কোন স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করা যেতে পারে। ক্স খাবার সহজপাচ্য, নরম ও স্বাদযুক্ত হতে হবে, যাতে অরুচি না আসে। ক্স খাবার হবে পরিমাণে কম এবং ক্যালরিযুক্ত। যেমন- হালুয়া, পুডিং ইত্যাদি। ক্স শীতের সময় ভিজানো চিড়া, শরবত না দেয়া ভাল। ক্স যে সমস্ত সবজি দেরিতে হজম হয়, সে সমস্ত সবজি বর্জন করা উচিত। যেমন- বাঁধাকপি, মুলা, শাক, বরবটি ইত্যাদি। ক্স বেশি তেল মসলা ও গুরুপাক খাবার না খাওয়াই ভাল। শীতের সময় বিভিন্ন ধরনের সবজি পাওয়া যায় বলে সমস্যা কম হয়। এ সমস্ত সবজি পুষ্টি মূল্যের দিক থেকে কম নয়। যেমনÑ টমেটোর লাইকোপিন এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। টমেটো হাড়ের সুস্থতা যেমন বজায় রাখে তেমনি আবার এটি হৃদরোগ প্রতিহত করে। এটি কোলেস্টেরল কমায় এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যে উপকারি। শীতের সময় এক কাপ গরম টমেটোর জুস খেতে পারলে ভাল হয়। টমেটোর লাইকোপেন ক্যান্সারবিরোধী বলে সারাবিশ্বে স্বীকৃত। বাঁধাকপিতে আছে ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে। বাঁধাকপি স্কার্ভি প্রতিরোধ করে। রক্ত স্বল্পতায় উপকারী এবং দেহকে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। বাঁধাকপির মধ্যে যে সালফার উপাদান আছে, তা দিয়ে টনিক তৈরি হয় যা শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রমণরোধে কাজে লাগে। গাজরে আছে ভিটামিন-এ ও শর্করা এটি দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি এবং ত্বকের উজ্জ্বলতার কাজ করে। ফুলকপি পরিপাকতন্ত্র ও রক্তসংবহন তন্ত্রের জন্য খুবই ভাল। তবে বেশি ফুলকপি পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। লাউ একটি শীতল সবজি। এটা সহজেই পরিপাক হয়। পর্যাপ্ত পানি থাকার কারণে শীতের সময় কোষের শুষ্কতা দূর করে। শিমের বিচি প্রোটিনের চমৎকার উৎস। এই বয়সে অনেকেই মাছ-মাংস খেতে চান না। তারা ডাল ও শিমের বিচি দিয়ে প্রোটিনের অভাব পূরণ করতে পারেন। প্রচ- ঠা-ায় গরম স্যুপে লেবু দিয়ে এবং গরম লেবু চা খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। এতে ঠা-া ও সর্দি কাশির হাত থেকে বাঁচা যাবে। তবে খাবার যেমনই হোক না কেন, অসুস্থতার কথা বিবেচনা করেই খাবার খেতে হবে। যার যে রোগের জন্য যে ধরনের খাবার বর্জন করতে বলা হয়, সেটা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। তাহলেই সুস্থ থাকা সম্ভব। অধ্যাপক আখতারুন নাহার আলো পুষ্টি বিভাগ বিভাগীয় প্রধান (সাবেক) বারডেম হাসপাতাল।
×