ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

গাইবান্ধায় ইটভাঁটিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

গাইবান্ধায় ইটভাঁটিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২১ জানুয়ারি ॥ অল্প উচ্চতার ড্রামসিটের চিমনির ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হয় বলে বেশি উচ্চতার ইটের চিমনি বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু সরকারের এ নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গাইবান্ধায় অনেক ইটভাঁটির মালিক এ আদেশ মানছে না। এখনও অল্প উচ্চতার ড্রামসিটের এবং ইটের চিমনি ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাঁটিতে। ফলে কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। গাইবান্ধায় প্রতিবছরই ইটভাঁটির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এসব ভাঁটি স্থাপনে লাইসেন্স গ্রহণের কথা থাকলেও ইটভাঁটি মালিকেরা আমলে নিচ্ছে না। প্রশাসনের সামনে এভাবে ইটেরভাঁটি স্থাপন করা হলেও কোন পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। গত দুই এক বছরের মধ্যে ২/১টি অবৈধ ইটভাঁটি জরিমানা করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অজ্ঞাত কারণ দেখিয়ে নিচ্চুপ থেকেছে প্রশাসন। এক তথ্যে জানা গেছে, ২০১৭ সালে তিনটি অবৈধ ইটভাঁটি মালিকের কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ২০১৬ সালে কারও কোন জরিমানা করা হয়নি। তবে ২০১৫ সালে অবৈধ ইটভাঁটি মালিকদের কাছে জরিমানা আদায় করা হয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ধরনের ২/১টি ঘটনা ঘটলেও আর বেশি কিছু করা হয়নি। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইটভাঁটি স্থাপনের লাইসেন্স প্রদান করে থাকেন। এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত অনাবাদি জমি, নিচু জলাশয়ের ধারে, নদীর পাশে এবং কমপক্ষে চারদিকে ১ কিলোমিটার জনশূন্য এলাকায় ইটভাঁটি স্থাপনের অনুমোদন দেয়ার কথা। কিন্তু গাইবান্ধার কোন ইটভাঁটি মালিকই এসব শর্ত মানছে না। আর যেসব ইটভাঁটি চালু রয়েছে তার অধিকাংশ মালিকই জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে কোন লাইসেন্স গ্রহণ না করেই বছরের পর বছর ইটভাঁটি চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ জেলায় গত ৩ বছরে মাত্র ২৭টি ইটভাঁটি মালিককে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৮টি ইটভাঁটির লাইসেন্সের মেয়াদ রয়েছে। বাকি ৯টির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও ওই ইটভাঁটি মালিকরা তা আর নবায়ন করেননি। প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এ পর্যন্ত জেলায় ১০১টি ইটভাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কেউই জেলা প্রশাসনের কাছে লাইসেন্স গ্রহণের জন্য এখনও আবেদন করেননি। তবে বেসরকারী একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছরই ভাঁটির সংখ্যা বাড়ছে। এবারও বেড়েছে। এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিক ইটভাঁটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে বলে ওই সূত্রটি দাবি করেছে। ওই সূত্রের মতে, আরও ইটভাঁটি স্থাপনের কাজ চলছে। এদিকে আয় কর বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর তিনি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছেন জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৮৫টি ইটভাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ড্রামসিটের চিমনির ইটভাঁটিও রয়েছে কয়েকটি। তিনি বলেন, এসব অবৈধ ইটভাঁটি বন্ধে কেউ কোন উদ্যোগ নেয়নি। এমনি একটি ড্রামসিটের চিমনির ইটভাঁটি রয়েছে সদর উপজেলার বলমঝাড় ইউনিয়নের সাহারবাজার সংলগ্ন কাঁশদহ গ্রামে। প্রায় ৩ একর ফসলি জমি নিয়ে ইটভাঁটিটি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সাদুল্যাপুর এবং পলাশবাড়ি উপজেলাতেও ড্রামসিটের ইটভাঁটির তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন ইটভাঁটির কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠের গুঁড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও কেউ তা দেখছে না। পলাশবাড়ি উপজেলার ইটভাঁটি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এফ জে ব্রিকসের মালিক মুকুল সরকার জানান, এ উপজেলায় প্রায় ৪০টি ইটভাঁটি গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে তার ইটভাঁটিসহ মাত্র দুটির। তিনি বলেন, কিভাবে লাইসেন্সবিহীন ইটভাঁটি বছরের পর বছর এভাবে চলতে পারে তা তার জানা নেই। অপরদিকে জেলা ইটভাঁটি মালিকের সভাপতি আব্দুল লতিফ হক্কানী জানান, তিনি অবৈধ ইটভাঁটির মালিকদের সভাপতি নন। তিনিও বলেন, অবৈধভাবে ইটভাঁটি স্থাপন করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এ ধরনের ইটভাঁটির সংখ্যা বাড়ছে।
×