ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আনসারুল্লাহর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের যোগসূত্র মিলেছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

আনসারুল্লাহর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের যোগসূত্র মিলেছে

শংকর কুমার দে ॥ ভয়ঙ্কর জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের যোগসূত্র পেয়েছে জঙ্গী সংগঠনের তদন্তকারী বিশেষ সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটি (সিটিটিসি)। কলাবাগানের ইউএসএআইডি কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু থিয়েটারকর্মী মাহবুব তনয়- জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রেফতারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে এই ধরনের তথ্য দিয়েছে জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুর্ধর্ষ জঙ্গী আসাদুল্লাহ। জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, কলাবাগান জোড়া খুনের নির্দেশদাতা পুরস্কার ঘোষিত সামরিক বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত পলাতক জঙ্গী সংগঠন এবিটি প্রধান মেজর জিয়া। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বলেছেন, কলাবাগানের জোড়া খুনের আসামি জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য আসাদুল্লাহ ছিল যশোরের নওয়াপাড়া ইউনিয়ন ছাত্র শিবিরের সাথী। তারা বাবা এমদাদুল্লাহ স্থানীয় জামায়েতে ইসলামীর রোকন। আসাদুল্লাহর মায়ের নাম রিজিয়া বেগম। তাদের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুরে। আসাদুল্লাহ ঝিনাইদহ দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষে মাদ্রাসা থেকে যশোর পলিটেকনিকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়। এরপরই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জঙ্গী সংগঠনে যোগ দেয় আসাদুল্লাহ। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দিয়ে কলাবাগানের জোড়া খুন ছাড়াও পুলিশের ওপর আক্রমনসহ আরও বেশ কয়েকটি জঙ্গী হামলায় অংশ নিয়েছে বলে সে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাড্ডার সাঁতারকুলের এক বাসায় গোপন বৈঠক করার সময় অভিযানকালে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক বাহাউদ্দিন ফারুকীকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার কাছ থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল গ্রেফতারকৃত আসাদুল্লাহ। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে আসাদুল্লাহ বলেছে, ‘বড় ভাইয়ের’ নির্দেশে সে সহ সাত জন নৃংশসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে ইউএসএআইডি কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু থিয়েটারকর্মী মাহবুব তনয়কে। তাদের বড় ভাই হচ্ছেন, পলাতক এবিটির প্রধান সামরিক বাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়া। জঙ্গী আসাদুল্লাহকে বুধবার টঙ্গী থেকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। কলাবাগান জোড়া খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত পাওয়া গেছে ১৩ জনের। এর মধ্যে হত্যাকা-ে অংশ নিয়েছে ৭ জন। ৭ জনের মধ্যে সরাসরি হত্যাকা-ে অংশ নিয়েছে ৫ জন। অন্য দুজন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ছিল। হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িতদের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চারজনের মধ্যে আসাদুল্লাহ ও আরাফাত অন্যতম। আরাফাত আগেই গ্রেফতার হয়েছে। বাকি দুজন জুবায়ের ও সায়মন। আগে গ্রেফতারকৃত ৩ জনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের জঙ্গী সংগঠনটি সঙ্গে যুক্ত হয় আসাদুল্লাহ। তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয় পুরস্কার ঘোষিত সামরিক বাহিনী থেকে চাকুরিচ্যুত জঙ্গী সংগঠন এবিটি প্রধান পলাতক মেজর জিয়া। মেজর জিয়ার নাম হচ্ছে সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া। এই জিয়ার নির্দেশেই কলাবাগানের জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে আসাদুল্লাহসহ সাত জঙ্গী। হত্যাকা-ের পর তারা যে যার যার মতো আত্মগোপনে চলে যায়। বাড্ডা, আশকোনা, গাজীপুরের বিভিন্ন আস্তানা গড়ে তুলেছিল। ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগান লেক সার্কাস রোডের বাসায় ঢুকে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনির খালাতো ভাই ইউএসএআইডি কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু থিয়েটারকর্মী মাহবুব তনয়কে নৃশংসভাবে জঙ্গীদের কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়ার ২ বছর ৮ মাস পর গ্রেফতার হয়েছে আসাদুল্লাহ। গ্রেফতার হওয়ার আগে হত্যাকা- সংগঠিত করে পলাতক অবস্থায় বিয়ে করে সংসারি হয়ে লেবাস পরিবর্তন করে গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে চেয়েছিল আসাদুল্লাহ। তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
×