ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোহলিময় জয়ে সমতায় ভারত

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

কোহলিময় জয়ে সমতায় ভারত

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ অস্ট্রেলিয়ায় এবার ভারতের চেয়ে সুপার বিরাট কোহলিকে নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছিল। সিডনিতে তার অপরাজিত ৬১ রানের ইনিংসে শেষ টি২০ জিতে সিরিজ ১-১এ ড্র করেছিল সফরকারীরা। পার্থের দ্বিতীয় টেস্টের সেঞ্চুরিটি বাদ দিলে গোটা সিরিজে তাকে আর সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সাদা পোশাকে ভারতকে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতিয়েছিলেন চেতেশ্বর পুজারা-জাসপ্রিত বুমরাহরা। কোহলি জ্বলে উঠলেন মোক্ষম সময়ে। প্রথম ওয়ানডে হারের পর সিরিজে টিকে থাকতে যখন জয়ের বিকল্প ছিল না তখনই ব্যাট হাতে ঝলক দেখালেন আধুনিক ব্যাটিংয়ের এ ‘ওয়ান্ডার-বয়’। আবারও বোঝালেন কেন তিনি চেজ মাস্টার। মঙ্গলবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার ২৯৮ রানের চ্যালেঞ্জ টপকে ৬ উইকেটের দারুণ জয়ে অধিনায়ক খেললেন ১০৪ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস। সিরিজে ভরত সমতায় ফিরল ১-১এ। শন মার্শের ক্লেসিক্যাল সেঞ্চুরি, বাহারি সব শটে ফিনিশার ধোনির সেই যৌবনের কথা মনে করিয়ে দেয়া, এ্যাডিলেড ওভালের হাইস্কারিং ম্যাচটিতে ঘটনার তো কমতি ছিল না। তবে আর সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছেন কোহলি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম ভারতীয় ‘অধিনায়ক হিসেবে’ ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পাশাপাশি গড়েছেন ক্যারিয়ারে দ্রুত ১৫০০০ আন্তর্জাতিক রান এবং এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সবচেয়ে বেশি ১০ সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড। পেছনে ফেলেছেন দুই সাবেক তারকা রিকি পন্টিং (৯) আর গ্রায়েম স্মিথকে (৯)। কোহলির ক্যারিয়ারের এই ৩৯তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সফরকারী কোন দলের ব্যাটসম্যানের ১১তম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিও, যা আবার সর্বোচ্চ। চ্যালেঞ্জিং রান তাড়ায় ‘হিটম্যান’ রোহিত শর্মার সঙ্গে ৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ভাল শুরু এনে দেন শিখর ধাওয়ান। প্রথম থেকে বোলারদের ওপর চড়াও হওয়া বাঁহাতি এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ৫ চারে ফেরেন ৩২ রান করে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রোহিত দুটি করে ছক্কা-চারে ৪৩ রান করে আউট হন। ম্যাচে টানা তিন পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়েন কোহলি। রোহিতের সঙ্গে ৫৪, অম্বাতি রায়ডুর সঙ্গে ৫৯ আর মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে ৮২। ক্যারিয়ারের ৩৯তম সেঞ্চুরি পাওয়া কোহলিকে থামান জাই রিচার্ডসন। লেগ স্টাম্পে থাকা হাফ ভলি ফ্লিক করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ধরা পড়েন ভারত অধিনায়ক। ১১২ বলে খেলা তার ১০৪ রানের ইনিংসটি ৫ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো। শুরুতে মন্থর ব্যাটিং করা ধোনি রানের গতি বাড়ান কোহলির বিদায়ের পর। সাবেক অধিনায়ক ভাল সঙ্গ পান দিনেশ কার্তিকের কাছ থেকে। ষষ্ঠ উইকেটে ৩৪ বলে তাদের ৫৭ রানের জুটি দলকে নিয়ে যায় জয়ের বন্দরে। ৫৪ বলে দুই ছক্কায় ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন ধোনি। কার্তিক দুই চারে অপরাজিত ২৫ রান। ৪ বল বাকি থাকতে দুর্দান্ত জয়ে সিরিজে টিকে থাকে ভারত। তার আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার। আরও একবার ব্যর্থ অজিদের উদ্বোধনী জুটি। অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চ ও এ্যালেক্স ক্যারি ফিরে যান ২৬ রানের মধ্যে। একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নেন ইনফর্ম শন মার্শ। থিতু হয়েও বড় ইনিংস খেলার সুযোগ হাতছাড়া করেন উসমান খাাজা, পিটার হ্যান্ডসকম ও মার্কাস স্টয়নিস। তিন ব্যাটসম্যানই ফেরেন বিশের কোটায়। রানের গতিতে দম দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ক্রিজে এসেই শট খেলতে শুরু করা এই অলরাউন্ডারের সঙ্গে ৯৪ রানের জুটিতে দলকে তিন শ’ রানের কাছে নিয়ে যান মার্শ। ১০৮ বলে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর শট খেলতে শুরু করেন ছন্দে থাকা এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানও। দ্রুত এগোনো দুই ব্যাটসম্যানকে দারুণ দুই স্লোয়ারে ফিরিয়ে দেন ভুবনেশ্বর কুমার। ৩৭ বলে ৪৮ রান করেন ম্যাক্সওয়েল। ১১ চার আর ৩ ছক্কায় ১২৩ বলে মার্শ করেন ১৩১। শেষ ওভারে ভুবনেশ্বরকে একটি করে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে ২৯৮ রানে নিয়ে যান নাথান লায়ন। ভুবনেশ্বর ৪ ও মোহাম্মদ শামি নেন ৩ উইকেট। রেকর্ডময় ম্যাচে ম্যাচসেরা কোহলিই। শুক্রবার মেলবোর্নে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া ॥ ২৯৮/৯ (৫০ ওভার; কেয়ারি ১৮, ফিঞ্চ ৬, খাজা ২১, মার্শ ১৩১, হ্যান্ডসকম ২০, স্টয়নিস ২৯, ম্যাক্সওয়েল ৪৮, রিচার্ডসন ২, লেয়ন ১২*, সিডল ০, বেহরেনডর্ফ ১*; ভুবনেশ্বর ৪/৪৫, শামি ৩/৫৮) ভারত ॥ ২৯৯/৪ (৪৯.২ ওভার; রোহিত ৪৩, ধাওয়ান ৩২, কোহলি ১০৪, রায়ডু ২৪, ধোনি ৫৫*, কার্তিক ২৫*; বেহরেনডর্ফ ১/৫২, রিচার্ডসন ১/৫৯, স্টয়নিস ১/৪৬, ম্যাক্সওয়েল ১/১৬) ফল ॥ ভারত ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ বিরাট কোহলি (ভারত) সিরিজ ॥ তিন ওয়ানডে ১-১এ চলমান।
×