পৌষ সনেট
আইউব সৈয়দ
পৌষের যৌবন থেকে সময়ের শিল্পী
তাড়নার ক্যানভাসে রং ও রেখায়
দর্শনের পরিভাষা নির্মাণ করেন ।
গতানুগতিক ঘটনাবহুল নেই-
ফেলে আসা আশ্রয়-প্রশ্রয়ের যাপনে;
ফর্মের প্রতি আচ্ছন্ন হয়ে শীত-মেশা
ভাষাভঙ্গি মেলে ধরে, ঐতিহ্য গড়েন।
আলতো সকালে তুলির প্রবাহধারা
নিয়ে খুঁজতে থাকেন শিশিরের সই-
করা সাজানো চুমকির শীত-সঙ্গীত।
গতির প্রমত্ত মেনে আবর্তিত হন-
অরণ্য বোধের দুরন্ত প্রজ্ঞার সাথে;
ফলে সভ্যতার কম্পিত নতুন প্রীতি
ঘনিষ্ঠ করেই বিলিয়ে দেন অতীত।
তার আগে
সরকার মাসুদ
বিদেশী পাখির ছবি
শীত বিকেলে লাল-নীল-সবুজ ফিতাবাঁধা মেয়েদের খেলা
তার পাশ দিয়ে নেচে নেচে চলেছে অসভ্যতার মিছিল...
এইসব আর ঝড়ে ভাঙা গাছপালার ডাল
জানালার ফ্রেম থেকে তুলে এনে মাথায় রেখেছি
এরপর জানালার পাশ থেকে সরিয়ে নেবো ইজি চেয়ার
যাবো ভুলতা বাজার যেখানে একটা স্বপ্নধবল মিনার পাশে
ঘন গাছপালার ওপর;
জানি না দুঃখের শাখা-প্রশাখা কিভাবে ঢুকে গেছে
পড়ো মন্দিরের মাথার ভেতর
কিভাবে মঙার গ্রাম উঠে এলো কমলাপুরে রেলবস্তির নরকে
হেঁটে বেড়ানো কঙ্কাল রক্ত-মাংস চায়
সেই দৃশ্য মাথায় থাকে বাংলা মদের ঠেকে
তাই সমুদ্রের শেষ গান সৈকতের বালুর মর্মে রেখে এসে
আমি জানালার কাছ থেকে চেয়ার সরাবো
তার আগে বসন্তের প্রাণের টানে জংলি ফুল-ফুটে-থাকা
রাস্তা দিয়ে হাঁটবো আবার;
ওহো! ওখানে নদীর ওপর ব্রিজ হচ্ছে মহাসমারোহে
পাকানো দড়ির মতো ঘোলা পানি, স্রোত
শেষ দৃশ্যে ডিঙি দুলছে শেকলসমেত
সবুজের স্তূপ ফুঁড়ে মেঘ ফুঁড়ে উঠে যাচ্ছে ভুলতার মিনার!
আমার হোটেল
আনিসুর রহমান
আমার আছে বেহালা আমার আছে কল্পপুতির মালা;
তারা ভরা আকাশ জোনাক নিয়ন বাতি রাশি রাশি;
আমার আছে রসের হারি স্বাধীন কলস জলের ধারা;
আছে পৃথিবী এক অলস বেকার আমি অফুরান সময়;
ফুল পাখির কোলাহল নো টেলিফোন নো ইন্টারনেট;
তার চেয়ে পাবে তুমি পৃথিবীর সমান বেশি গল্প করা
আমার আছে আকাশ কুসুম হেলিপ্যাড জমিনের উপগ্রহ
আমার হোটেল স্বপ্নে তুমি মহাকাশে কক্ষপথে হেঁটে যাবে;
সমুদ্রের তলদেশে তিমির দেখা পাবে, মধুপুরে হাতী চড়ে;
হতে পারে বচ্চন রাই আমার হোটেলে সবার পাশ নাই;
আমার আছে রাত আর দিন জমিন আর আকাশ;
চন্দ্র তারা সূর্যের কারসাজি করা ঝিলিমিলি দিনরাত্রি সারাবেলা;
আলো অন্ধকারের খেলা পাখি হরিণ ঘাস ফড়িঙের মেলা,
তোমার জন্যে আমার আছে জীবন সমান অফুরন্ত বেলা;
মোবাইল বিহীন বেকার আমি, অন্তর্জালের বালাই কিছু নাই;
কম্পিউটারের ঝারিঝুড়ি টুইটার শিখি নাই;
বোমাইল বিহীন মোবাইল আমি ঘুরি পৃথিবীর সঙ্গে করে;
একতারা দোতারা আর বেহালার কথা মনে পড়ে?
আমার কেবল আমি আছি জলে যেমন জলহস্তি;
বনে আমি বনহাতী; সহিস বিহীন ঘোড়া;
জলে নেমে মাছের সঙ্গেই পৃথিবীর গল্প করা;
বনে আমি পাখির সঙ্গেই সুর মিলাবো পঞ্চকবি সারা;
পথে নেমে পথিক আমি ধুলায় আতœহারা;
বাদল দিনে বৃষ্টি আমার পুরান বাতিক;
মিছেমিছি অন্তর্জালে জুয়া ধরে সময় হেরে-
জিতবে কি আর থেকেও যদি না ধাক গো;
তুমি যদি তুমি থাক, আমার আছে আমার আমি;
সকল নিয়ে বসে আছি বাউল আমি মানুষ আছি;
আছে বেহালা, নাই ঝামেলা নাই চাবি নাই তালা-
আমার হোটেল তোমার জন্যে চব্বিশ ঘন্টা খোলা!
সাক্ষী গোপাল কবি
জাহানারা জানি
অকাল বর্ষণে শহুরে পাতিকাকের মতো
ভিজছো কেন কবি শাহবাগ মোড়ে
ছাতাধারী বন্ধুরা কেহেরমানী হাসি দিয়ে
উপহাসের আকাশ ভাঙছে তোমার মাথায়
ওরা যেন সিরামিক সভ্যতার শহরে
ফুটপাথের আবর্জনা।
দিন-রাত দূষিত করে কেবলই
সামাজিক সুস্থতা।
তামাম পৃথিবী ভাগ করে ওরা মুখে মুখে
ওরা বোঝে না কবিকে ভাগ করা যায় না কোন দিনও
টেংরাটিলার আগুন এখন দাউ দাউ জ্বলে চৈতি বুকে
চোখে ফোটে শর্ষে ফুল দিনে রাতে
কোন দিকে যায় রে মদন ডাইনে নাকি বামে?
বাঁকা চোখের তীরগুলো আমাকে চিহ্নিত করে
মাইল পোস্টের মত মাইল ফলকে
জিরাফের মতো গলা উঁচিয়ে বিবেকের মাথারা
কেউ কেউ বলে মেয়েটা আসলে কবি
আমি হেঁটে চলি ফুটপাথের কান্না শুনে শুনে
আর বেদনার জলরঙে
কালের তুলিতে আঁকি
একুশ শতাব্দীর এক বীভৎস ছবি
এখানে সভ্যতা ডুবে যায় আদিম অন্ধকারে
রাজপথ থেকে মেঠোপথ হঠাৎ হয়ে যায় রক্তনদী
সেখানে ভাসে অগুনতি প্রতিভার লাশ
আমি আর্তচিৎকারে ছুটি মুক্তির পথে
পরচা-দলিল হাতে এ যুগের সাক্ষী গোপাল কবি
যাত্রা
নিঝুম খান
উভ্রান্তের মতো জন্ম থেকেই এগিয়ে যাচ্ছি
মিনিটে কত তীব্র ছুটছি তার ধারণা নেই
আমার জন্মস্থান থেকে লক্ষ্যবিন্দু নির্ধারণ করা যায় না।
জন্মেই তীরের মতো ছুটতে শিখেছি
বাতাসভেদী ক্ষমতা নিয়ে নিঝুত বন্ধু
আমার সাথে এগিয়ে চলছে উদ্দামতায়-
কখনো তাদের আগে, কখনো পিছনে
আমিও ছুটছি সবটুকু সত্তা নিয়ে।
হঠাৎ বন্ধুরা স্পর্শ করলো সবুজ উপত্যকা
সাথে আমিও এক বিস্ময়ে...
অতঃপর মিশে গেছি মৃত্তিকায়।
আমি অনন্ত বৃষ্টি
মেঘের কন্যা হয়ে জন্মাই বার বার।
শীর্ষ সংবাদ: