ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোহিনুর আক্তার

ওজনিয়াকির স্বপ্নপূরণ, ওসাকার চমক

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৯ জানুয়ারি ২০১৯

ওজনিয়াকির স্বপ্নপূরণ, ওসাকার চমক

আরও একটি বছরের সমাপ্তি। ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে নতুন মৌসুম। তবে ২০১৮ সালটা প্রমীলা টেনিস খেলোয়াড়দের জন্য ছিল বেশ ঘটনাবহুল। এ বছরে এসেই সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান ক্যারোলিন ওজনিয়াকি। বেশ কয়েকবার ফাইনাল জিততে ব্যর্থ হওয়া রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপও স্বপ্নের শিরোপায় চুমো আঁকেন এই বছরে। ২০১৭ সালে নিঃষ্প্রভ পারফরম্যান্স উপহার দেওয়া এ্যাঞ্জেলিক কারবারের স্বরুপে ফেরার বছরও এটা। মৌসুমের তৃতীয় মেজর টুর্নামেন্ট উইম্বলডন জয়ের মধ্য দিয়ে নিজের শোকেসে তুলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা। তবে বছরের শেষে এসে বড় চমকটা উপহার দেন নাওমি ওসাকা। ইউএস ওপেনে সেরেনা উইলিয়ামসকে পরাজিত করে গোটা টেনিস দুনিয়াকেই কাঁপিয়ে দেন জাপানের এই তরুণ প্রতিভা। ২০১৮ সালের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। এই টুর্নামেন্টেই বাজিমাত করেন ক্যারোলিন ওজনিয়াকি। দীর্ঘ প্রতিপক্ষার পর ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের স্বাদ পান তিনি। সিমোনা হ্যালেপকে পরাজিত করে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের স্বাদ পান ডেনমার্কের এই টেনিস তারকা। ফাইনালে তিনি ৭-৬ (৭/২), ৩-৬ এবং ৬-৪ গেমে পরাজিত করেন রোমানিয়ার হ্যালেপকে। সেইসঙ্গে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও পুনরুদ্ধার করেন ওজনিয়াকি। ৪৩তম প্রচেষ্টায় এসে জিতলেন ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর টুর্নামেন্টের শিরোপা। শুধু তাই নয়, ডেনমার্কের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবেও গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের অবিস্বরণীয় কীর্তি গড়েন তিনি। ২০০৫ সালে কয়েকটি জুনিয়র টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে সে বছরেই টেনিস কোর্টে আলো ছড়িয়ে প্রাদপ্রদীপের আলোয় ওঠে আসেন ওজনিয়াকি। তবে সিনিয়র পর্যায়ে বিশ্ব টেনিসপ্রেমীদের নজরে আসেন ২০০৯ সালে। নবম বাছাই হিসেবে ইউএস ওপেনে খেলতে নেমে সেবারই ফাইনালে জায়গা করে নেন তিনি। ডেনমার্কের প্রথম প্রমীলা খেলোয়াড় হিসেবে কোন গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনাল খেলার বিস্ময়কর কীর্তি গড়েন ওজনিয়াকি। কিন্তু ফাইনালে বেলজিয়ামের কিম ক্লাইস্টার্সের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় তার। তবে পরের বছরই নতুন কীর্তি গড়েন। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটি দখল করে নেন তিনি। টেনিস ইতিহাসের পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে কোন গ্র্যান্ডস্লাম না জয়ের পরও র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার বিরল কীর্তি গড়েন ক্যারোলিন ওজনিয়াকি। ২০১০ সালের অক্টোবর থেকে ২০১২ জানুয়ারির মধ্যে ৬৭ সপ্তাহ ছিলেন র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। সেই ড্যানিশ টেনিস তারকা যেন ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকেন। তবে দমে যাননি ২৭ বছরের এই খেলোয়াড়। এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে পেলেন তারই পুরস্কার। ওজনিয়াকির মতো হ্যালেপেও বারবার গল্প লিখছিলেন ব্যর্থতার। ২০১৪ সাল থেকেই হবে হবে করেও হচ্ছিলো না। অবশেষে ফ্রেঞ্চ ওপেনে এসেই কাঙ্খিত গ্র্যান্ড স্ল্যামের দেখা পান এই রোমানিয়ান তারকা। যুক্তরাষ্ট্রের স্লোয়ানে স্টিভেন্সকে হারিয়ে ফ্রেঞ্চ ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্যে দিয়ে স্বাদ পেলেন ক্যরিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লামের। প্যারিসের রোলাঁ গ্যাঁরোয় মেয়েদের এককের ফাইনালে স্টিভেন্সকে ৩-৬, ৬-৪, ৬-১ গেমে হারান হ্যালেপ। তাতেই প্রথমবারের মতো কোন গ্র্যান্ডস্লাম ট্রফি জয়ের আনন্দে মেতে উঠেন রোমানিয়ার এ টেনিস তারকা। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৭ সালেও ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে উঠেছিলেন হ্যালেপ। কিন্তু শিরোপা ছুঁতে পারেননি। এ বছরের জানুয়ারিতেও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু রোমানিয়ার এ তারকা ঘরে তুলতে পারেননি ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা। অবশেষে ফ্রেঞ্চ ওপেনে অধরা সেই শিরোপা ছুঁলেন তিনি। এদিকে, ২০১৬ সালে টেনিস কোর্টে আলো ছড়ানো এ্যাঞ্জেলিক কারবার যেন হারিয়ে বসছিলেন। ২০১৭ সালে তো টেনিস কোর্টে খুঁজেই পাওয়া যায়নি আগের বছর দুটি মেজর শিরোপাজয়ী এই জার্মান তারকাকে। তবে ২০১৮ সালে এসে স্বরুপে ফেরার ইঙ্গিত দেন তিনি। মৌসুমের তৃতীয় গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট উইম্বলডন জিতে। আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম উইম্বলডন জয়ের স্বাদ পান কারবার। সেই সঙ্গে ক্যারিয়ারের তৃতীয় মেজর টুর্নামেন্ট নিজের শোকেসে তুলেন তিনি। সেরেনাকে হারিয়ে জার্মানির ২২ বছরের আক্ষেপ ঘোচান কারবার। উইম্বলডনের ফাইনালে সেরেনাকে পরাজিত করে কিংবদন্তি স্টেফিগ্রাফের পর জার্মানির প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে মৌসুমের তৃতীয় গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান তিনি। ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন স্টেফি গ্রাফ। এ্যাঞ্জেলিক কারবারের এটা তৃতীয় গ্র্যান্ডস্লাাম শিরোপা। এর আগে ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। সে বছরে ইউএস ওপেনের শিরোপাও উঁচিয়ে ধরেছিলেন কারবার। তবে গত মৌসুমের সেরা চমক নাওমি ওসাকা। ইউএস ওপেন টেনিসের নারী এককের ফাইনালে ফেবারিট সেরেনাকে হারিয়ে নতুন রাণীর মুকুট পড়েন জাপানের তরুণ প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়। অবশ্য অভিজ্ঞতা কিংবা অতীত পরিসংখ্যান, কোনোটাতেই যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস তারকা সেরেনার ধারে-কাছেও ছিলেন না প্রথমবারের মতো গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনাল খেলতে নামা এই তারকা। ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জয়ের পথে এক ঘন্টা ১৯ মিনিটের দ্বৈরথে সেরেনাকে ৬-২ ও ৬-৪ গেমে পরাজিত করেন ওসাকা। সেন্টার কোর্টের বিতর্কিত ফাইনালে সেরেনা ৬-২ গেমে প্রথম সেট হেরে গিয়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলা সেরেনা এক পর্যায়ে টেনিস র‌্যাকেট ছুড়ে মারেন মাটিতে। বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন চেয়ার আম্পায়ার কার্লোস রামোসের সাথে। এ বছরের টেনিস ইতিহাসে যা সবচেয়ে লজ্জাজনক অধ্যায়। কেননা, বিতর্কের জন্ম দিয়ে সেরেনা উইলিয়ামস আলো কেড়ে নিয়েছেন নাওমি ওসাকার। তবে এ বছরে হতাশ করেছেন মারিয়া শারাপোভা, পেত্রা কেভিতোভা এবং ভেনাস উইলিয়ামসের মতো তারকাদের নিঃষ্প্রভ পারফর্মেন্স।
×