ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মজিবর রহমান

শেখ জামালের সাফল্যের কা-ারি কোথায়?

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

শেখ জামালের সাফল্যের কা-ারি কোথায়?

বিগত আট বছরে বিদেশের মাটিতে দলটির অর্জিত সাফল্য মুখ উজ্জ্বল করে দেশ ও জাতির, ঘরোয়া আসরের গৌরবময় অর্জন তো রয়েছেই, যার নেপথ্য নায়ক ছিলেন দেশবরেণ্য ক্রীড়া সংগঠক মনজুর কাদের, কিন্তু রহস্যময় কারণে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন তিনি ফুটবল থেকে, ফলে তার প্রতিষ্ঠিত দলও পাচ্ছে না কাক্সিক্ষত সাফল্য সাফল্য সব সময়ই আনন্দের। শিক্ষা, খেলাধুলা, ব্যবসা, চাকরি, সমাজসেবা-জীবনের সর্বক্ষেত্রে। তবে প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য বিষয় ক্রীড়া। এক্ষেত্রে অর্জনটা যদি আসে বিদেশের মাটিতে, বড় কোন আসরে, সেই সাফল্যের তৃপ্তি অনেক মধুর। সেটা আরও মর্যাদার হয়ে ওঠে যখন তা মুখ উজ্জ্বল করে দেশ ও জাতির। ঋতু বৈচিত্র্যে চিরন্তন ধারায় প্রকৃতির গায়ে এখন শীতের আবরণ। কিন্তু প্রকৃতির এই রূপ পরিবর্তনের মাঝে উষ্ণতা, উত্তাপ যেন একটু বদলায়নি। সবই আছে সেই আগের মতোই। তবে মনজুর কাদেরের অনুপস্থিতিতে সাফল্য নেই দলের। যেখানে শিরোপার জন্যই মাঠে নামা ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য, সেখানে বর্তমানে চলছে শুধু খেলার জন্যই খেলা। বিষয়টা লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে ঘিরে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে নতুন আদলে গড়া ক্লাবটি পা দিয়েছে ৯ বছরে। ২০১০ সালে স্বানমখ্যাত ক্রীড়া সংগঠক মনজুর কাদেরের হাত ধরে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাব নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৪ সালে ভুটান কিংস কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন মানে বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে গৌরবগাথা বাস্তব এক ইতিহাস। তার আগে ২০১১ সালে নেপালের সাফাল পোখরা গোল্ডকাপ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। অতীতে বিদেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক আসরে ট্রফি জয়ের রেকর্ড যে অন্য কোন ক্লাবের নেই তা নয়। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান ও আভিজাত্যের প্রতীক ঢাকা আবাহনীরও শিরোপা জয়ের রেকর্ড রয়েছে ভারতের মাটিতে। তবে পরিসংখ্যানে উপরে রাখতে হচ্ছে শেখ জামাল ধানমন্ডিকেই। কারণ কিংস কাপের আগে পোখরা বিজয়ের গৌরবময় সাফল্যের পাশাপাশি ভারতের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আইএফএ শীল্ডে রানার্সআপ (২০১৪) দলটিকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। যেখানে যুক্ত রয়েছে আরেকটি অর্জন, ২০১৫ সালে আরও বড় মাপের আসর এএফসি কাপে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশের ক্লাব পর্যায়ে যুগ-যুগান্তরের সেরা সাফল্য বলা যায়। এত অল্প সময়ে শেখ জামালের এই অর্জন শুধু দলটির জন্যই নয়, জাতির জন্যও বিরাট গর্বের। এই সাফল্যে মুখরিত হয়েছিলেন এদেশের লাখো কোটি ফুটবল অনুরাগী। আর ঘরোয়া ফুটবলের ঈর্ষণীয় ইতিহাস, শিরোপার পর শিরোপা জয় ক্লাবটিকে অতি অল্প সময়ে পরিণত করে পরাশক্তিতে। খেলোয়াড়রা মাঠে খেলেন প্রশিক্ষকের দিক নির্দেশনায়। লক্ষ্য পূরণে নিঃসন্দেহে তাদের ভূমিকা, কৃতিত্ব অপরিসীম। কিন্তু সব সাফল্যের পেছনেই একজন নেপথ্য কারিগর থাকেন। যার হাতের সুনিপুণ ছুঁয়ায় বদলে যায় সবকিছু। সাদামাটা পরিবেশটা হয়ে ওঠে ছিমছাম পরিপাটি, এক গোছালো সংসারে। পর্দার অন্তরালে থাকা সাফল্যের এই মহানায়ক আর কেউ নন, মনজুর কাদের। কথার ফুলজুরি ছুটিয়ে নয়। কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন তার মতো নিবেদিতপ্রাণ ক্রীড়া সংগঠক এদেশে হাতে গোনা। সদালাপী কাদের গাঁটের অঢেল অর্থ খরচ করে নিরলস সেবা দিয়েছেন দেশের ফুটবলে। বলতে দ্বিধা নেই লে. শেখ জামাল ধানমন্ডির কারনে তৎকালীন ঘরোয়া ফুটবলের মরা নদীতে জোয়ার আসতে শুরু করে। মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকের মুখ দেখার সুযোগ পান দেশের ফুটবলাররা। এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব নিজ কারিশমায় যেন মুক্তা কুড়িয়ে আনেন মহাসাগরের তলদেশ থেকে। জনপ্রিয় দল আবাহনীর সফল ম্যানেজার হিসেবেও তার রয়েছে যথেষ্ট সুনাম। চার বছরের দায়িত্বে আবাহনী হ্যাটট্রিক শিরোপা লাভ করে ঘরোয়া ফুটবলে। আর একবার রানার্সআপ। তবে মনজুর কাদের ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছিলেন নব্বইয়ের দশকে সাদামাটা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রকে রাতারাতি ‘ড্রিম টিম’-এ পরিণত করে। তৎকালীন মোহামেডান, আবাহনী ও ব্রাদার্সের একচ্ছত্র অধিপত্যে খর্ব করে তিন ক্লাবের সেরা, তথা তারকা ফুটবলারদের দলে ভিড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রকে পরিণত করেন ‘জায়ান্ট টিম’ হিসেবে। পরবর্তী মিশন নতুন আদলে তৈরি করা লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে মনজুর কাদেরের আরেক চমক। সেটাও নজরকাড়া সাফল্য দিয়েই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য সন্তান শহীদ শেখ জামালের নাম যুক্ত করে লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড (অতীত নাম ধানমন্ডি ক্লাব) নতুনরূপে আবির্ভাব হওয়ার পর ফুটবলে একটি ঝড় তোলা নামে পরিণত হয়। দেশের সেরা ফুটবলারদের নিয়ে ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে মাঠে নামে দলটি। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবই সবচেয়ে উন্নতমানের, মেধাবী বিদেশী ফুটবলার ও কোচ দলে যুক্ত করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। কোটি টাকা পারিশ্রমিকে এই ক্লাবে খেলেছেন হাইতি জাতীয় দলের স্ট্রাইকার সনি নর্দে। শেখ জামাল ধানম-ি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে আধুনিক ক্লাব। জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে সুসজ্জিত, চোখে পড়ার মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে মনজুর কাদের বলেন, একটি আধুনিক ক্লাবের যা কিছু দরকার সবই আছে বর্তমানে এখানে। আমি মনে করি সাফল্যের জন্য কেবল ভালমানের কোচ-খেলোয়াড়ই যথেষ্ট নয়। ক্লাবের পরিবেশ একটি মুখ্য বিষয়। ফলে ভালমানের দল গড়ার পাশাপাশি পরিবেশের দিকেও নজর দিতে হয়েছে আমার সময়ে। ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে খুনী, মদখোর, জুয়াড়ি, হেরোইনসেবী, ভাসমান পতিতা উচ্ছেদ করে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে চমৎকার ক্রীড়া কমপ্লেক্স। রয়েছে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ মাঠ। ঢাকায় খেলতে আসা অনেক বিদেশেী দল এখানে অনুশীলন করে ভূয়সী প্রশংসা করে ক্লাবের পরিবেশ ও মাঠের। এটা দেশের জন্য সন্মানের। সবই ঠিক আছে। কিন্তু নেই কেবল মনজুর কাদের। লে. শেখ জামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সে আরও রয়েছে বাস্কেটবল, টেনিস কোর্ট, ক্রিকেট বে। পাশাপাশি একটি সুইমিংপুল নির্মাণের পরিকল্পনাও ছিল। শুধু পুরুষ নয়, মহিলা ফুটবলেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব সুনাম অক্ষুণœœ রাখে কাদের সভাপতি থাকা অবস্থায়। ক্রিকেটও নামের সুবিচার করে খেলার চেষ্টা করে দলটি। নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য সামাল দিয়ে সূচারুভাবে ক্লাব পরিচালনা অনেক কষ্টের। তবু আমি সেটা করেছি সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালীন ক্লাবের স্বার্থে। কারণ একটাই, খেলাধুলার সঙ্গে আমার রয়েছে আত্মার সম্পর্ক। মনের টান না থাকলে এটা সম্ভব হতো না। উল্লেখ্য, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতির পদে তিনি বর্তমানে নেই। ক্লাবের আষ্টম বার্ষিক সাধারণ সভায় তাকে গবর্নিং বডির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ মৌসুম দলটির স্বর্ণালি সাফল্যের সঙ্গী। ভুটানের কিংসকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন, পেশাদার ফুটবল লীগে চ্যাম্পিয়ন, ফেডারেশন কাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন এবং কলকাতার আইএফ’র শিল্ডে রানার্সআপ। বিগত সাত বছরের অর্জন * পেশাদার ফুটবল লীগ চ্যাম্পিয়ন (তিনবার) * নেপাল পোখরা সাফাল গোল্ডকাপ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন * ফেডারেশন কাপ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন (তিনবার) * ভুটান কিংসকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন * ভারতের আইএফএ শীল্ড রানার্সআপ * মহিলা ফুটবল লীগ চ্যাম্পিয়ন (একবার) * প্রথম বিভাগ মহিলা ক্রিকেট লীগ চ্যাম্পিয়ন * রানর্র্সআপ ট্রফি : ফেডারেশন কাপ ফটবল (দুইবার) স্বাধীনতা কাপ ফুটবল, পেশাদার লীগ, প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ, মহিলা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ (দুইবার)।
×