ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্্যাপন;###;’২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

২ বছরে দারিদ্র্য দূর ॥ রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

২ বছরে দারিদ্র্য দূর ॥ রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে আগামী দুই বছরের মধ্যে রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া এই রূপরেখার মূল লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য দূর করার পাশাপাশি এ দেশকে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া। এছাড়া আগামী বছর ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী যা মুজিববর্ষ হিসেবে পালন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই দুই কর্মসূচী সামনে রেখে রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ দেশকে মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে। এবার সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। রূপকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দশ উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জানা গেছে, রূপকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদ, রাজনৈতিক কাঠামোর আওতায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও জনগণের অংশগ্রহণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব এড়ানো, রাজনৈতিক সংস্কৃতির রূপান্তর, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়া, ক্ষমতায়নে এবং মহিলাদের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত, ব্যাপকভিত্তিতে শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ আকর্ষণে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করার উদ্যোগ রয়েছে। এদিকে রূপকল্পের এই দর্শনটি আওয়ামী লীগ সরকারের। রূপকল্প ২০২১ (ভিশন ২০২১ নামেও পরিচিত) ছিল ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী ইশতেহার। যা দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরের জন্য বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক রূপরেখা হয়ে ওঠে। ওই বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী পালন করা হবে। এছাড়া আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি মধ্যমে আয়ের দেশ হিসেবে গড়ার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালকে তিনি মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই দুই উদ্যোগ বাস্তবায়নে জোরেশোরে কাজ শুরু হয়েছে। গত এক দশকে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে ২০২১ সালের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০১৫ সালেই তা অর্জিত হয়। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জনকণ্ঠকে বলেন, অচিরেই দেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হবে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এটি এই সরকারের অন্যতম উন্নয়ন পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক এজেন্ডাও। সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নে এ সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, সমৃদ্ধ দেশ গড়তে গত এক দশকে আমাদের বেশকিছু অর্জন আছে। আমরা নবজাতক ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাস করতে পেরেছি। স্বাস্থ্য খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, দারিদ্র্যবিমোচনে অগ্রগতি আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ করা হচ্ছে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে একেবারেই প্রথম সারিতে। নারী অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নে দেশের অগ্রগতি লক্ষণীয়। নারী শিক্ষায় আগের থেকে এখন অনেক এগিয়ে। ইতোমধ্যেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। এটাই আজকের বাস্তবতা। তলাবিহীন ঝুড়ির শাপমোচন করে এখন উন্নয়নের রূপকল্প তৈরি করা হয়েছে। সরকার ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন করে ‘রূপকল্প ২০৪১’ নিয়ে কাজ করছে। এদিকে নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় পাওয়ায় ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছে সরকার। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা, প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়া, বেসরকারী বিনিয়োগ আকৃষ্টে সরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং টেকসই স্থায়িত্ব উন্নয়নে ৯০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থসংস্থান, রফতানি বাড়াতে কূটনৈতিক সম্পর্ক এবার জোরদার করা হবে। ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা হবে। জ্ঞানীজনদের আমন্ত্রণ করা হবে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে। সরকারীভাবে কর্মসূচী পালনের ব্যাপারে ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ২০২০ সাল থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী চলবে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত। এছাড়া সারা বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রচনা, চিত্রাঙ্কন, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হবে। বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। রূপকল্পে শেখ হাসিনার বিশেষ দশ উদ্যোগ ॥ রূপকল্প ‘ভিশন-২১’ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে ‘শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ’ নামে একটি কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। জীবনমান উন্নয়ন ও দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে এ কর্মসূচীতে দশটি খাত অগ্রাধিকার খাত চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই খাতগুলো হচ্ছেÑ একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, যা শীঘ্রই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক নামে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে, এরপরই রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচী, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, কমিউনিট ক্লিনিক ও শিশু বিকাশ এবং সামষ্টিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, পরিবেশ সুরক্ষা ও বিনিয়োগ বিকাশ। এদিকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠিও দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মনে করছে, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং এসডিজি অর্জনে এসব খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এ সম্পর্কিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) মূল ভাবনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সর্বজনীন মানব উন্নয়ন চিন্তার ব্যাপক মিল রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন ভাবনা কার্যকরভাবে উপস্থাপন করে সব কর্মকা-ে বিভিন্ন স্তরের নাগরিকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।
×