ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জসীম উদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন নির্মলেন্দু গুণ

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২ জানুয়ারি ২০১৯

জসীম উদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন নির্মলেন্দু গুণ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত এক অনন্য আধুনিক কবি জসীম উদ্দীন। পল্লী জীবনকে কবিতার ভাঁজে ভাঁজে মেলে ধরেছেন কালজয়ী এই কবি। বাংলা কবিতায় কবি জসীম উদ্দীনের অনন্য অবদান স্মরণে বাংলা একাডেমি প্রবর্তন করেছে ‘কবি জসীম উদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার’। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে পল্লী কবির নামাঙ্কিত প্রথম পুরস্কারটি পাচ্ছেন তারই গুণমুগ্ধ আরেক কিংবদন্তি কবি নির্মলেন্দু গুণ। অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। পুরস্কার হিসেবে দুই লাখ টাকা পাবেন নির্মলেন্দু গুণ। মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে জানানো হয়, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যে কোন শাখায় সার্বিক অবদানের জন্য একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিককে এক বছর অন্তর বাংলা একাডেমি এ পুরস্কার প্রদান করবে। পুরস্কারের অর্থমূল্য হবে ২ লাখ টাকা। ‘জসীম উদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯’ পাচ্ছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। জনকণ্ঠের এই প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপচাপরিতায় জসীম উদ্দীন সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তিতে অনুভূতি ব্যক্ত করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। পুরস্কারপ্রাপ্তি আপ্লুত হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এটা আমার জন্য অনেক বড় খবর। জসীম উদ্দীনের নামাঙ্কিত এই পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য সম্মানিতবোধ করছি। জীবনে অনেক সম্মাননা পেলে এই পুরস্কার আমার কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলা ভাষার সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কবিদের একজন জসীম উদ্দীন। আমি তার কবিতার মুগ্ধ একজন পাঠক। নকশী কাঁথার মাঠ কিংবা সোজন বাদিয়ার ঘাটের মতো গীতিকবিতায় অন্যভাবে উপস্থাপন করেছেন এদেশের পল্লী জীবন ও সংস্কৃতিকে। আর এ কারণেই জসীম উদ্দীন আমার প্রাণের মানুষদের একজন। রবীন্দ্র ও নজরুলের পরে জসীম উদ্দীনের কবিতাই আমি সবচেয়ে বেশি পড়েছি এবং সে সব কবিতা আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। নেত্রকোনার মালনীতে আমার নির্মিত কবিতাকুঞ্জে রয়েছে বিশ্বের খ্যাতিমান ৫০ জন কবির প্রতিকৃতি। সে সব বরেণ্য কবিদের মাঝে জসীম উদ্দীনের ছবিটিও জায়গা করে নিয়েছে কবিতাকুঞ্জে। তার নামাঙ্কিত এই সাহিত্য পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থও ব্যয় করা হবে কবিতাকুঞ্জে। পুরস্কারের টাকা দিয়ে বই কিনব। জসীম উদ্দীনের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে নির্মলেন্দু গুণ বলেন, অনেকগুলো কারণেই তার প্রতি আমার ভাললাগা তৈরি হয়েছি। এক অর্থে আমি ছিলাম তার অনুসারী। আমার রচিত ‘চাষাভুষার কাব্য’ শীর্ষক কবিতার বইটি তাকে উৎসর্গ করেছিলাম। আর তিনি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন তার রচিত ‘সূচয়িনী’ কাব্যগ্রন্থ। আমাদের দেখা-সাক্ষাত হতো নিয়মিত। কথাচ্ছলে জসীম উদ্দীনের রাজনৈতিক চেতনার কথা উঠে আসে নির্মলেন্দু গুণের কণ্ঠে। বলেন, সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সমর্থক মানুষটি প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন জসীম উদ্দীন। ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়ার পর জসীম উদ্দীন ‘বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের কবিতা লিখেছিলেন। কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্ম ১৯৪৫ সালের ২১ জুন। কবিতায় অনন্য কীর্তির জন্য তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশের নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
×