ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় ২০১৮

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

বিদায় ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। দীর্ঘ প্রায় এক মাসের উৎসবমুখর পরিবেশের আবহ কাটতে না কাটতেই ইংরেজী নতুন বর্ষের হাতছানি বাঙালীর ঘরে ঘরে। আগামীকাল নতুন বর্ষ ২০১৯-কে বরণ করতে প্রস্তুত সবাই। আজ ২০১৮ সালের শেষ দিন। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকাসহ সারাদেশে খ্রিস্টীয় বছর শেষের রাতকে উপভোগ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ক্লাবগুলোতে এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তারকাখচিত হোটেলগুলোর পাশাপাশি ছোট পরিসরেও আয়োজন করা হয়েছে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের। হোটেল রেস্তরাঁয় রকমারি খাবার-দাবারেরও আয়োজন রয়েছে। এবারও বর্ষ বিদায়ের রাতটিকে উদ্যাপন করতে নগরজুড়ে নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করেছে। এমনিতেই নির্বাচনী নিরাপত্তায় মাঠে রয়েছে সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীসহ বিজিবির টহল। পাশাপাশি রয়েছে নিয়মিত বাহিনীও। নিকট অতীতে হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলা, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে জঙ্গী হামলা, নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া, কল্যাণপুর, পল্লবী এবং আজিমপুরে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান, উত্তরার আশকোনায়, মিরপুরে জঙ্গী গ্রেফতার এবং নানা সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, জঙ্গীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা পর্যালোচনা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই বিশেষ নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে বলে আমরা মনে করি। সেই প্রেক্ষিতে প্রশাসনকে আরও ব্যাপক সতর্ক অভিযান পরিচালনা করতে হবে। বিগত বছরগুলোর মতো ২০১৮ সালেও ধারাবাহিকভাবে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, সহিংসতা, নৃশংসতা, নির্মমতা ও রক্তাক্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে দেশবাসীকে। নানা ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উতরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কালের গর্ভে সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে ২০১৮। আজ খ্রিস্টীয় এই বছরটির শেষ দিন। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রেক্ষাপটে নানা কারণেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে বছরটি। বিদায়ী ২০১৮ সালটি সরকারের ধারাবাহিক দ্বিতীয় মেয়াদের দশমবর্ষ পূর্তির বছর। এবারও রাজনীতির মাঠ তেমন উত্তপ্ত না হলেও নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা, তফসিল ঘোষণার পর এই পর্যন্ত ১৫ জন আওয়ামী লীগের কর্মীকে হত্যাসহ তিন শতাধিক কর্মী আহত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতিহিংসা, নাশকতার আগুনে সংখ্যালঘু ও প্রতিপক্ষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়েছে। অবশ্য প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে এত সঙ্কটের মধ্যেও দেশ এগিয়েছে অনেক। মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য হ্রাসসহ নানা ক্ষেত্রে এশিয়ার বহু দেশের শীর্ষে অবস্থান, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাফল্য বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করেছে। রাত পোহালেই খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০১৯ সালের সূর্যোদয় হবে। নববর্ষের এই সূচনালগ্নে প্রত্যাশা জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে আত্মপ্রবঞ্চনা, অগণতান্ত্রিক ও পশ্চাৎমুখী প্রবণতার অবসান ঘটবে। নতুন সরকার জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত উন্নয়নশীল স্বদেশ গড়ে তুলবে। একই সঙ্গে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সকল অপতৎপরতা বন্ধ হবে। ত্রাস-সন্ত্রাসের দিন যেন আর না আসে ফিরে। শক্ত হাতে এই প্রতিরোধ সবাইকে গড়ে তুলতে হবে। দেশ সেবায় আত্মনিয়োগের মধ্য দিয়েই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
×