ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের মহিলা ফুটবলেই সেরা সাফল্য

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

দেশের মহিলা ফুটবলেই সেরা সাফল্য

রুমেল খান ॥ একেবারেই শেষের পথে ২০১৮ অধিবর্ষ। একদিন পরেই পুব আকাশে উঠবে ২০১৯ সালের নতুন সূর্য। কেমন ছিল ২০১৮ সালের বাংলাদেশের ফুটবল। চলুন খতিয়ে দেখা যাক। গত বছরের চেয়ে এ বছরের পুরুষ ফুটবলে ছিল কিছুটা উন্নতি আর অগ্রগতির ছোঁয়া। এ বছর তারা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ৮টি। জিতেছে তিনটিতে, হেরেছে চারটিতে। আর ড্র করেছে একটিতে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও কিছুটা এগিয়েছে লাল-সবুজরা। বছরের শুরুতে র‌্যাঙ্কিং ছিল ১৯৭, আর শেষ করে ১৯২-এ অবস্থান করে। বছরটাকে ফুটবল ইতিহাসের সেরা বলেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। ঘরোয়া ফুটবলে শেষের মতো শুরুটাও স্বাধীনতা কাপ দিয়ে। ক্লাব ইতিহাসের ষাট বছরের শিরোপাখরা কাটিয়ে ইতিহাস গড়ে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। একঝাঁক তরুণ তুর্কী নিয়ে জাদুর পরশ বুলিয়ে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেন কোচ মারুফুল হক। বছর শেষে সেই ট্রফি হাতে তোলে বসুন্ধরা কিংস। মৌসুমের দ্বিতীয় আর বছরের শেষ টুর্নামেন্টে প্রথম শিরোপা জেতে বিগ বাজেটের দলটি। এএফসি কাপ মিশনে গড়া হেভিওয়েট ক্লাবটি হতাশ হয়েছিল ফেডারেশন কাপে। যেখানে শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণœ রাখে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী। তবে সব ছাপিয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে আবাহনী ফুটবলারদের মারামারি ছিল আলোচনায়। এক সঙ্গে দুই দলের চার ফুটবলারকে দেখতে হয় লালকার্ড। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পিছিয়ে যায় পেশাদার লীগের সর্বোচ্চ স্তর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ। উত্থান-পতনের বছরে নির্বাসন কাটিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফেরে জাতীয় দল। ঘরের মাঠে আগস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ দিয়ে। জাতীয় দলের কোচ বদলের রীতি অক্ষুণœ ছিল এ বছরও। ইংলিশ কোচ এ্যান্ড্রু অর্ডের জায়গা নেন আরেক ইংলিশ জেমি ডে। দায়িত্ব নিয়ে ইতিহাস গড়েন জেমি। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডে নিয়ে যান দ্বিতীয়পর্বে। কাতারের বিপক্ষে গোল করে ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে যান অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া। সঙ্গে ওয়ালী ফয়সালসহ পুরো দলের গাওয়া গান হয়েছিল ইন্টারনেটে ভাইরাল। এই সাফল্যের পেছনে কৃতিত্ব ফেডারেশনের। অনুর্ধ-২৩ ও সিনিয়রদের নিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় অনুশীলন আর ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিয়েছিা তারা। জাকার্তা থেকে ফিরে অবশ্য প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি লাল-সবুজের দল। ঘরের মাঠে আরও একবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিতে হয় জেমি ডে শিষ্যদের। তবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারিপূর্ণ দর্শক জানান দেয় ফুটবলের জাগরণী বার্তার। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও বদলায়নি ভাগ্য। সিলেটের দর্শকরা সাড়া দিলেও বাংলাদেশকে বিদায় নিতে হয় সেমিফাইনাল থেকে। সিনিয়ররা না পারলেও জুনিয়ররা বছরজুড়ে ছড়িয়েছে সাফল্যের আলো। অনুর্ধ-১৮ কিশোরী দল জিতেছে সাফ শ্রেষ্ঠত্ব। তাদের দেখানো পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনুর্ধ-১৫ কিশোর দলও পেয়েছে এই অঞ্চলের শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি। উত্থান-পতনের মাঝে ফেডারেশনকে পড়তে হয়েছে স্পন্সর জটিলতায়। পেশাদার লীগ থেকে সরে দাঁড়ায় সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস। আর মহানগরী লীগ কমিটি, ফেডারেশনের পরামর্শে সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে বাতিল করে ঢাকার বিভিন্ন লীগের চুক্তি। এ বছর গঠিত হয়েছে জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির চেয়ারম্যান আ জ ম নাছির। আর মহাসচিব তরফদার রুহুল আমিন। এই সংগঠনই পরবর্তী ফুটবল ফেডারেশন নির্বাচনে পছন্দের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে রুহুল আমিনকে। ঘটনাটা এ বছরই। ১৬ মাস পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরে এ বছরের মার্চে। ২৭ মার্চ লাওসে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে স্বাগতিকদের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরে বাংলাদেশ। আগস্টে ভুটানে মেয়েদের সাফ অনুর্ধ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে ভারতের কাছে ১-০ গোলে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করে বাংলাদেশের কিশোরীরা। সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ে বাংলাদেশ মহিলা দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় এবং নাম লেখায় চূড়ান্তপর্বে। অক্টোবরে ভুটানে সাফ অনুর্ধ-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের মেয়েরা ফাইনালে ১-০ গোলে হারায় নেপালকে। নবেম্বরে বাংলাদেশের মেয়েরা অংশ নেয় টোকিও অলিম্পিক গেমস ফুটবলের বাছাইপর্বে। তবে প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি তারা। চার দলের গ্রুপে তাদের সংগ্রহ মাত্র ১ পয়েন্ট। অক্টোবরে তাজিকিস্তানে নারী অনুর্ধ-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলে বাংলাদেশ ৪ দেশের মধ্যে তৃতীয় হয়।
×