ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অনেক ভোট কেন্দ্রের আশপাশে বসেছে সিসি ক্যামেরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

অনেক ভোট কেন্দ্রের আশপাশে বসেছে সিসি ক্যামেরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে এই প্রথমবারের মতো ঢাকাসহ দেশের সবকটি বিভাগীয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে কেন্দ্রের আশপাশে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশে জোরালো তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গলায় ভোটার কার্ড বা সরকার দলীয় কার্ড ঝুঁলিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে লাইনে ঢুকে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলে তথ্য আছে গোয়েন্দাদের কাছে। এজন্য নির্বাচন চলাকালীন সময়ে এবং নির্বাচন শেষে যেকোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত করতেই এমন কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এদিকে সারাদেশে আরও ১১১ প্লাটুন বিজিবি (বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ) মোতায়েন করা হয়েছে। এ নিয়ে ১ হাজার ১২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হলো। আরও সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও র‌্যাবের হেলিকপ্টারসহ সব বিশেষায়িত টিম। যেকোন পরিস্থিতিতে মুর্হূতের মধ্যেই তারা পৌঁছে যাবে নির্ধারিত জায়গায়। ড্রোনসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি দিয়ে দুর্গম এলাকার উপর নজরদারি করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, শঙ্কামুক্ত ভোটের মাঠ নিশ্চিত করতেই এই প্রথমবারের মতো ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের আশপাশে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। মূলত ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন এবং ভোটের সময় বা পরে যাতে কোন অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, এজন্যই এমন ব্যবস্থা। আর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই তাদের সম্পর্কে যাতে আগাম তথ্য পাওয়া যায়, এজন্য গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের আশপাশের অনেক এলাকাজুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নাশকতাকারীদের শনাক্ত করতেই থাকছে এমন ব্যবস্থা। ঢাকার অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রের আশপাশেই অসংখ্য সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। অনেক দূর থেকে ভোটারদের লাইনে থাকা ব্যক্তিদের উপর নজর রাখার ব্যবস্থাও থাকছে। ভোটাদের লাইনে ঢুকে কেউ যাতে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে এজন্যই এমন কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভোট বানচাল করতে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবির সরকার দলীয় কার্ড গলায় ঝুঁলিয়ে ভোটারদের লাইনে ঢুকে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য অনেক এলাকায় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের আগে সন্দেহভাজনদের দেহ তল্লাশি করা হবে। শনিবার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, এবারের নির্বাচনে সারাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। যেকোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনী প্রস্তুত আছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হতে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে সবধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এদিকে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা সারাদেশে আরও ১১১ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েনের বিষয়টি জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলছেন, আরও বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে তারাও নামবে। প্রসঙ্গত, গত ১৮ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে ১ হাজার ১৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এদিকে গত ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক গত ২৯ ডিসেম্বর ১২টা থেকে ১ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে বেবি ট্যাক্সি, অটোরিক্সা, ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, প্রাইভেটকার, বাস, ট্রাক, টেম্পো এবং স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন যন্ত্রচালিত যানবাহনের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তারই প্রেক্ষিতে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এমন নির্দেশনার পর থেকেই সারাদেশের প্রতিটি সড়ক মহাসড়কের পয়েন্টে পয়েন্টে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে যানবাহনে বেশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এছাড়া সন্দেহভাজনদের দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। শনিবার ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের জানান, ঢাকায় তেমন কোন ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র নেই। কিছু কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। যার সংখ্যা একেবারেই কম। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচনে কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করলে এবং পেশীশক্তি ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, নির্বাচনের সর্বোত্তম ও চমৎকার প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের। সারাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। যেকোন পরিস্থিতিতে জনগণকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে যেকোন ধরনের সহায়তা চাওয়ার কথাও বলেন তিনি। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোন বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার তথ্য মেলেনি। যেকোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতির জন্য র‌্যাব প্রস্তুত আছে।
×