ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব আসনে এগিয়ে নৌকা

ভোট উৎসবে অংশ নিতে প্রস্তুত মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ভোট উৎসবে অংশ নিতে প্রস্তুত মুন্সীগঞ্জ

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারে পর দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন চলছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। মুন্সীগঞ্জের তিনটি আসনেই এবার প্রচার ছিল ব্যাপক। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে গত ১৮ দিন ধরেই প্রার্থীদের নানা রকম প্রচারের এখন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ভোটাররা। সকল পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ভোট বোদ্ধারা মনে করছেন মুন্সীগঞ্জে তিনটি আসনই আবারও লাভ করতে যাচ্ছে নৌকার প্রর্থীরা। ২০০৮ সালের চেয়েও এবারের নির্বাচন বেশি উৎসবমুখর পরিবেশে হবে বলেও আভাস দিচ্ছেন ভোট বোদ্ধারা। এর মধ্যে সচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে সরাসরি ভোটে হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে পরপর দু’বার প্রতিদ্বদ্বীতা করে নির্বাচিত অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি এমপি। তার সঙ্গে এবারও লড়ছেন ২০০৮ সালের প্রতিদ্বদ্বী সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা। মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা সম্পাদক এবং বর্তমান সাংসদ এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি। তার মূল প্রতিদ্ব›দ্বী জেলা বিএনপির সভাপতি ও দলীয় প্রধানের উপদেষ্টা সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল হাই। আব্দুল হাই এখানে পাঁচবারের এমপি হলেও এবারের অবস্থান আগের মতো নেই বলেই ধারণা করছে ভোট বিশ্লেষকগণ। নানা কারণে আলোচিত মুন্সীগঞ্জ-১ আসনেও নৌকা এগিয়ে রয়েছে বলেই মনে করছে বিশ্লেষকগণ। এখানে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পুত্র মাহী বি চৌধুরী। বিকল্প ধারার মুখপাত্র মাহী অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রার্থী সত্তে¡ও ধানের শীষের প্রবীণ প্রার্থী শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ভাল অবস্থানে রয়েছেন। জাতীয় পার্টির সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বর্ষীয়ান রাজনীতিক শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন ২০০৮ সালেও ধানের শীষ নিয়ে নৌকার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তখন নৌকা নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের শ্রীনগর উপজেলার সভাপতি সুকুমার রজ্ঞন ঘোষ এমপি। সুকুমার রজ্ঞন ঘোষ এমপি অসুস্থতার কারণে এবার মাঠে নেই। তবে তিনি ভিডিও বার্তায় মাহী বি চৌধুরীকে নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। প্রচার শেষ হয়েছে শুক্রবার সকাল ৮টায়। এরপরে প্রচার বন্ধ থাকলেও প্রার্থীরা বসে নেই। ভোটারদের মন জয়ে নানা কৌশল ব্যবহার করছেন। তবে টাকার কুমির অনেক প্রার্থী টাকা বিলির অপচেষ্টায় রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ভোটের মাঠে পুরো সময় ধরেই নৌকার প্রার্থীরা ছিলেন সরব। মুন্সীগঞ্জ-১ ও ৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রচার চালালেও মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থীকে দেখা যায়নি। অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও প্রচারে মাঠে ছিলেন। তবে ছোট দলগুলোর মধ্যে হাত পাখার প্রার্থীদের বেশি সরব দেখা গেছে। শেষ দিনে নৌকার প্রার্থীরা একযোগে শোডাউন করেছেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে শ্রীনগর স্টেডিয়ামে এই শোডউন করেছেন মাহী বি চৌধুরী। মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে টঙ্গীবাড়ির বালিগাঁওয়ে শোডাউন করেছেন অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি এমপি। গজারিয়ায় শোডাউন করেন এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি। আওয়মী লীগের প্রার্থীরা সরগরম প্রচারও চলে শেষ দিনে। মুন্সীগঞ্জ জেলার ছয়টি উপজেলাই ছিল উৎসবের নগরী। চারিদিকে যেন মিছিলের ঢেউ। নৌকার স্লোগানে মুখরিত ছিল মাঠঘাট। প্রতিযোগিতায় রয়েছেন ১৮ প্রার্থী। তবে সকল প্রার্থীর প্রচার তেমন চোখে পরেনি। এরপরও উৎসবমুখর ছিল পুরো নির্বাচনী এলাকা। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন ধরনের মিছিল মিটিং বা জনসভা বন্ধ রয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোটের পরিবেশ ঠিক রাখতে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। কোথাও আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়নি। মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরবাসীর অপেক্ষা এখন ভোট উৎসবে অংশগ্রহণ। তৌহিদ আক্তার পান্না, ঈশ্বরদী থেকে ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে এবার অতীতের যে কোন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী শামসুর রহমান শরীফ এমপি নির্বাচিত হবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতনমহল সূত্রে জানা গেছে। সূত্রমতে, এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি থাকায় তারা অনেকদিন ধরে মাঠে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন, দেশে একাধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অনেক প্রকল্প চলমান থাকা এবং আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকারের নানামুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ করে নির্বাচনী মাঠ আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রস্তুত করে তোলেন। এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর সকল মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতারা দ্বিধাদ্বন্দ ভুলে নানাভাবে নৌকার প্রার্থী শামসুর রহমান শরীফকে বিজয়ী করতে নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগসহ সভা-সমাবেশ করে ভোটারদের বুঝিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগে কোন দলীয় কোন্দল নেই। সকল নেতাকর্মীরা বাড়িতে, পাড়ায় ও মহল্লায় গিয়ে একযোগে কাজ করছেন। সকল প্রকার নেতাকর্মীরা নিজ বাড়ি থেকে শুরু করে নিকটস্থ চল্লিশ বাড়িতেও বার বার ভোট চেয়ে মাঠ প্রস্তুত করেছেন। বিগত বিশ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে শামসুর রহমান শরীফ পাবনা-৪ এলাকায় রূপপুর পরমাণু প্রকল্পের কাজসহ সকল বিভাগে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করায় সাধারণ মানুষ যেমন খুশি হয়েছেন, তারচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন সকল শ্রেণী পেশার ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবীসহ সচেতন মহলের মানুষ। এছাড়াও বিগত সময়ে তিনি বেশ কয়েকটি ঘটনা ও সমস্যাকে মোকাবেলা করেছেন ঠান্ডা মাথায়। এসব কারণে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ মনে করেন যে, দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাবনা-৪ আসনের জন্য যেমন ভাল মানুষ ও যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। সূত্রমতে, প্রতিদ্বদ্বী ধানের শীষের প্রার্থী মনোনয়নে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুলের কারণেও নৌকার পালে এবার জোড়ে হাওয়া লেগেছে। হাবিবুর রহমানকে প্রার্থী করায় ঈশ্বরদীর বিএনপিতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তৃণমূল বিএনপি নানা কর্মসূচী পালন করায় হাবিব কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির কমিটি বাতিল ও পৌর কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া থেকে জানান, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের আওয়ামী লীগের দুইবারের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী হ্যাট্রিক জয় করতে চান। তবে এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও চট্টগ্রাম চাক্তাই চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনামুল হক এনাম পরিবর্তনের আশায় নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়িয়েছেন। তফসিল ঘোষণা ও দলীয় প্রার্থী চ‚ড়ান্ত হওয়ার পর থেকে বিএনপির এনাম উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাপক গণসংযোগও করেছেন। সামশুল হক চৌধুরী বর্তমান সরকারের দুইবারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন। একইভাবে বিএনপির এনাম পটিয়া আসনে পরিবর্তন আনতে সরকারের বিরুদ্ধে নানা সমালোচনাসহ ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। গণসংযোগ ও পথসভা করতে গিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বাঁশের তৈরি নৌকা জ্বালিয়ে দেয়া, বিএনপির কার্যালয় ভাংচুর, গাড়ি ভাংচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ভোটরদের মাঝে অনেকটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিএনপি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন বাঁশের লাঠি তৈরি করে নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। একইভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। ১/১১ পরবর্তী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী গাজী মোঃ শাহজাহান জুয়েলকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী প্রথমবার নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হন। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হলেও তৃতীয়বারের মতো সামশুল হক মনোনয়ন পাওয়ায় নির্বাচনী মাঠ সরগরম হয়ে ওঠে। দলীয় সিদ্ধান্তে নৌকার প্রার্থী সামশুল হক হ্যাটট্রিক করতে একাট্টা হয়েছেন এমপি বিরোধী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একইভাবে বিএনপির পটিয়ার দুইবারের সংসদ সদস্য গাজী মোঃ শাহজাহান জুয়েলকে টপকিয়ে মনোনয়ন ছিনিয়ে এনেছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম। পটিয়া আসনটি বিএনপির প্রার্থী পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সাবেক এমপি গাজী মোঃ শাহজাহান জুয়েল, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ সাহাদাত আহমদ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইদ্রিস মিয়াও বিএনপির প্রার্থী এনামের পক্ষে একাট্টা।
×