ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভেসে যাবে মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ চক্রের সব ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

  ভেসে যাবে মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ চক্রের সব ষড়যন্ত্র

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ আর মাত্র ২৪ ঘণ্টার ক্ষণ গণনা। এর পরই দেশজুড়ে শুরু হয়ে যাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মহাযজ্ঞ। শুক্রবার সকাল আটটায় বন্ধ হয়েছে নির্বাচনে প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচার। আগামীকাল বহুল কাক্সিক্ষত সেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারের এ নির্বাচন দেশের মানুষের কাছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আবির্ভূত হয়েছে। দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ইসি ঘোষিত রবিবারের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কঠোর আইনশৃঙ্খলা ও বিধি বিধানের আলোকে। রবিবার সন্ধ্যার পর রাত থেকে আসতে থাকবে বিজয়ী প্রার্থীদের প্রতীকের সঙ্গে নাম। সার্বিক বিশ্লেষণ প্রতীয়মান এবারের নির্বাচনী প্রচারে মাঠ পর্যায়ে পাড়া মহল্লায় অলিগলিতে চলছে রীতিমতো কম্পন। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ও স্বাধীনতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধী চক্র এবং তাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে যারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় তাদের বিরুদ্ধে জয়বাংলা স্লোগান ও নৌকা প্রতীকের পক্ষের শক্তির লড়াই হবে এ নির্বাচনে। প্রাকৃতিক নিয়মে ভূমিকম্পের পর কখনও কখনও কোথাও কোথাও সুনামি হয়। এ সুনামির ভয়াবহতা এতই বেশি যে যাতে থাকে শুধু ধংসযজ্ঞ, প্রাণহানি এবং সুন্দর স্থলভাগ ল-ভ- হয়ে যাওয়ার বিবর্ণ এক রূপ। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রচারও যে কম্পন চলছে এরপরও সৃষ্টি হতে পারে এক ধরনের সুনামি। এমন আশঙ্কা ভোটের মাঠের পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষকদের। এমন সুনামিতে ল-ভ- হয়ে যেতে পারে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও তাদের দোসরদের সকল ষড়যন্ত্র, দুর্গ ও আস্তানা। ভেসে যেতে পারে তাদের প্রণীত নীলনক্সা। যা হতে পারে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ও আদর্শ বাস্তবায়ন নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণদের জন্য নতুন বিজয় কেতন। এ ঘটনাকে বিজয়ের সুনামি বললে অত্যুক্তি হবে না বলে বিশ্লেষকদের মত। আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারের শেষ সময়। মূলত বৃহস্পতিবার রাতেই দেশের ৩শ আসনের ভোট লড়াইয়ে অবতীর্ণ যোদ্ধারা তাদের শেষদফার প্রচার সম্পন্ন করে ফেলেছেন। এখন শুধু ভোটারদের সঙ্গে হাত মেলানোর পালাই চলবে। এ ভোট নিয়ে ভোটার মহল উজ্জীবিত। প্রার্থীরা এক ধরনের টেনশনে। আর জাতি অপেক্ষা করছে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর ফলাফল ঘোষণা নিয়ে। সবকিছু এ পর্যন্ত ঠিকঠাক মতো এগিয়ে গেছে ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়াই। ধারণা করা হচ্ছে আর কয়েক ঘণ্টার অবস্থাতেও তেমন কোন পরিবর্তন আসবে না, অর্থাৎ অনাকাক্সিক্ষত কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থাসমূহ। এদিকে, সারাদেশে ৩শ’ আসন জুড়ে এ পর্যন্ত প্রচারের যে দৃশ্যপট সৃষ্টি হয়েছে তাতে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনায় ও আদর্শে বিশ্বাসীদেরই জয় জয়কার পরিবেশ। পক্ষান্তরে, বিরোধীদল নামে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে জোট বেঁধে যারা ধানের শীষ বা অন্য প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছে তাদের সার্বিক অবস্থা রীতিমতো করুণই বলা চলে। মাঠে ঘাটে হাটে বন্দরে শহরে পাড়ায় মহল্লায় সর্বত্রই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার পোস্টার ব্যানার ফেস্টুন উঠছে শীতের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে যারা নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন তারা নিজেদের অবস্থান নিয়ে ব্যাপক সন্দিহান। শুধু তাই নয়, এরা ঐক্য করেছে স্বাধীনতার বিরুদ্ধচারণকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের সঙ্গে। এদের অতীত কর্মকা- একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা, পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে জ্বালাও-পোড়াও, আগুন সন্ত্রাস, হত্যা, গুম, দুর্নীতিতে দফায় দফায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কুশীলবদের নেপথ্যের চেহারা এবং সর্বোপরি দেশের অগ্রগতির বিপরীতে লুটপাট ও দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করে উন্নয়নের ধারাকে বঞ্চিত করে রাখার বিষয়টি সকলের মুখে মুখে নির্বাচনের প্রাক্কালে ব্যাপকভাবে আলোচিত। অপরদিকে, বর্তমান সরকারের গত টানা প্রায় দশ বছরের শাসনামলে মহাজোটের নেতৃত্বে দেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে নিতে যেসব চমক জনগণ দেখেছে তা সকলের হৃদয় ছুঁয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে সফলতার ঘাটতি যে রয়েছে তা অস্বীকার করা যাবে না। এরপরও সফলতার হার বহুলাংশে এত বেশি যে যা বিশ্ব দরবারে আলোচিত, এমনকি স্বীকৃত। অতীতে বিএনপি নামের দলটি কখনও এককভাবে আবার কখনও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে শাসন ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তাদের শাসনামলে জনগণ কি সুফল পেয়েছে তাও আলোচনার অগ্রভাগে চলে আসছে। মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদীদের উত্থান ঘটানোর পাশাপাশি এরা স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করে পুরো দেশের উন্নয়নের চাকাকে উল্টো ঘুরিয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচার থেকে শুরু করে দেশকে প্রতিবেশী দেশের কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী চক্রের অস্ত্রের চালানের রুট বানানোর বিষয়টিও সকলের কাছে জানা। এসব অপকর্মের মূল হোতা যারা তারাই এখন রূপ বদলাতে চাচ্ছে। রাজনৈতিক দলটিকে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নিয়ে গেছে, কিন্তু প্রতীক বদল করেনি। ঐক্যফ্রন্ট নামটি মূলত জনগণের কাছে একটি প্রহসনের নাম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে এরা এমন কিছু অপশক্তি হাতে নিয়েছে যাদের চক্রান্ত সুদূরপ্রসারী। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, তাতে কী ‘কয়লার ময়লাতো ধুলেও যায় না’। বহুল আলোচিত সেই প্রবাদ বাক্যের ন্যায় স্বাধীনতার মূল চেতনার বিরুদ্ধচারণকারী চক্র ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বীজতো এদেশে রয়েই গেছে। এরাই এখন ব্যাপকভাবে সক্রিয়। এরা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চেয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল আদর্শের বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নেই তৎপর। এদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশ ইতোমধ্যে জয় করেছে মহাকাশ। আগামীতে গ্রাম পরিণত হবে শহরে- এ স্লোগান নিয়ে মাঠে নেমেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল যে শক্তি সেই শক্তির নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। এ নৌকার পক্ষেই সারাদেশের নির্বাচনী মাঠ যেভাবে উজ্জীবিত হয়েছে তাতে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির জন্য আসবে নতুন এক ধরনের সুনামি। যে সুনামিতে ভেসে যাবে সকল অপশক্তি, যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী, মৌলবাদী শক্তির সকল দুর্গÑ এমন ধারণাই দিচ্ছেন নির্বাচন নিয়ে বিশ্লেষণে রয়েছেন এমন সূত্রগুলো।
×