ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চৌধুরী শহীদ কাদের

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবনে গণহত্যা জাদুঘর

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবনে গণহত্যা জাদুঘর

মুক্তিসংগ্রামের সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে আমরা। অথচ মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরে এসে আমাদের লড়তে হচ্ছে অন্য আরেকটি যুদ্ধ। সেটি হলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধের যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গণহত্যা ও নির্যাতনের ইতিহাসকে তুলে আনার যুদ্ধ। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসররা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে তারা ইতিহাসের পরতে পরতে বুনে দিয়েছে বিভ্রান্তির জাল। পৃথিবীর যেসব দেশে গণহত্যা হয়েছে, তারা সেই ইতিহাসকে আলাদাভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা ইতিহাসের শেকড় দৃঢ় করেছে। সারা পৃথিবীতে সেটাই করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গণহত্যার শিকার এরকম প্রায় সবদেশেই গণহত্যা জাদুঘর আছে। সেদেশের শিশুদেরকে নিয়মিতভাবে সেটি দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়। বাইরের পর্যটকরাও নিয়মিত সেখানে যান এবং নাৎসী বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ফিরে আসেন। বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব গণহত্যা নিয়ে পড়ানো হয়, গবেষণা হয়। আমাদের এখানে সে সুযোগ অনেক সীমিত। শুধু তাই নয়, বাকস্বাধীনতার সর্বোচ্চ সুযোগের দেশগুলোতে গণহত্যা নিয়ে মিথ্যাচার বা অস্বীকার করা ফৌজদারি অপরাধ। এটি রোধের সেসব দেশে প্রণীত হয়েছে করা হয়েছে জেনোসাইড ডিনায়াল ল’ এর মতো শক্ত আইন। যাতে ইতিহাস বিকৃতির বিষবৃক্ষ কোন জাতির মস্তিকে রোপিত না হতে পারে এবং গণহত্যার ভয়াবহতা অনুধাবন করে সারাবিশে^র গণহত্যার বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হয়ে একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়তে পারে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো গণহত্যা ও নির্যাতন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কোথাও এতো মানুষকে একসাথে হত্যা করা হয়নি, যতটা বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মাত্র নয় মাসে হয়েছে। পাকিস্তানী এই নির্বিচার গণহত্যার কারণে দেশে দেশে বাঙালী জাতির মুক্তির জন্য একটি বিশাল বিশ্ব জনমত গড়ে ওঠে। এতো কিছুর পরেও বাংলাদেশ এখনো ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সমর্থ হয়নি, উপরন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা চলেছে, শহীদ ও নির্যাতিতের সংখ্যা নিয়ে চলছে দেশী-বিদেশী অপপ্রচার। যুদ্ধাপরাধীরা পুরস্কৃত হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। তাই, একবিংশ শতকে এসে নতুন যে যুদ্ধ আমরা লড়ছি সেটার দায় আমরা এড়াতে পারি না। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমরা আমাদের বিজয়কে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি, গণহত্যা ও নির্যাতনকে নয়। বিজয়ী হওয়ার পর মানুষ সাধারণত বিজয়কে ভুলে যায়, কিন্তু গণহত্যা-নির্যাতনের মতো শোক আর অপমানকে সারাজীবন মনে রাখে। তাই, মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা-নির্যাতনকে গুরুত্ব না দেয়ার মানসিকতার পাশাপাশি গণহত্যা-নির্যাতন, বধ্যভূমি ও শহীদদের নিয়ে তথ্য-উপাত্তের অপ্রতুলতা ও নিবিড় গবেষণার অভাব আমাদের রয়েছে। আর আমাদের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে লতানো গুল্মের মতো ইতিহাস বিকৃতি বেড়ে উঠছে। যে তরুণরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার হাল ধরবে তারা হচ্ছে বিভ্রান্ত। এ অবস্থা অনুধাবণ করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক’ ড. মুনতাসীর মামুনের প্রস্তাবে দক্ষিণের জেলা শহর খুলনায় গড়ে উঠেছে ‘গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’। ২০১৪ সালের ১৭ মে খুলনা শহরে এই জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। অধ্যাপক মামুন এই তারিখটি বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা নির্বাসন থেকে ১৯৮১ সালে ঐ তারিখে ঢাকা ফিরেছিলেন। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধকে যে অপমান করেছিলেন, হাসিনার ফেরা থেকে তার প্রতিরোধ শুরু হয় যা পরিণতি লাভ করে ও মানবতা বিরোধী অপরাধ বিচারের মাধ্যমে। খুলনায় স্থাপিত এই জাদুঘরটি বাংলাদেশের এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর। বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে জাদুঘর ট্রাস্টকে একখ- জমি ও একটি বাড়ী উপহার দেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা ও নির্যাতনকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার রাষ্ট্রীয় পোষকতা ও গণসচেতনতা। তবে, দেরিতে হলেও সরকারকে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ২৫ মার্চকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালনের ঘোষণা এবং গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের অর্থায়ন ও গণহত্যা জাদুঘরের ভবন নির্মাণের পরিকল্পণা গ্রহণ সে ইঙ্গিতই বহন করে। উপর্যুক্ত কর্মকা- সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা কেন্দ্র। এর প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় গণহত্যা জাদুঘর গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন (ঊংঃধনষরংযসবহঃ ড়ভ ঈবহঃৎব ভড়ৎ এবহড়পরফব-ঞড়ৎঃঁৎব ধহফ খরনবৎধঃরড়হ ডধৎ ঝঃঁফরবং) শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তিন বছরের মেয়াদী এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের গবেষণা কেন্দ্রের প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয়। ‘গণহত্যা নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র’-এর কার্যক্রম শুরু হয় ৩ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে। এই প্রকল্প দেশব্যাপী গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিবিড় গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পের শুরু থেকেই অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন এই প্রকল্পের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ, সেমিনার, গণহত্যা-নির্ঘন্ট গ্রন্থমালা প্রকাশসহ নানা কর্মকা- সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও জাতীয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে পুরনো ভবন ভেঙ্গে নতুন গণহত্যা জাদুঘর কমপ্লেক্স নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। গণহত্যা-নির্যাতনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই জাদুঘর স্থাপনের ক্ষেত্রে এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। শুরুতে খুলনার দু’জন বিভাগীয় কমিশনার বাধা দিয়েছিলেন পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দের ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে। নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন তৎকালীন সংস্কৃতি সচিব বেগম আকতারি মমতাজ। প্রকল্পটি পেতে, গণহত্যা জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রাক্তন সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহিম হোসেন খান, পরিকল্পনা কমিশনের তৎকালীন সদস্য আসাদ মান্নান, পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মোস্তফা কামালসহ আরও অনেকেই। যেমন, দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহে সহায়তা করেছেন আর্কাইভ ৭১Ñএর শ্রী প্রণব সাহা, প্রকল্পে যাতে কোন বিঘœ না ঘটে তা দেখছেন বর্তমান সচিব নাসিরুদ্দীন আহমদ, খুলনায় সামগ্রিক তত্ত্বাবধায়ণ করছেন ডা. শেখ বাহারুল আলম। গণহত্যা জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবনে নানা প্লাটফর্মে কাজ করছে। সেসব কর্মকা-ের বিষদ নিচে তুলে ধরা হলো। খুলনার খালিশপুরের ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলটি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ভয়াবহ নির্মমতার এক নাম। এই জুটমিলের জ্বলন্ত বয়লারে একাত্তরে মানুষ পুড়িয়ে মারা হতো। নিরীহ লোকদের প্রথমে জীবিত অবস্থায় বস্তায় ভরা হতো, তারপর সেই বস্তা পায়ের দিক থেকে জ্বলন্ত বয়লারে ঢুকানো হতো। বিভিন্ন সময়ে এখানে মিলের প্রচুর শ্রমিককে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। একাত্তরের গণহত্যা-আর নির্যাতনের সাক্ষী সেই বয়লারটির অংশবিশেষ সংরক্ষণ করা হয়েছে গণহত্যা জাদুঘরে। গণহত্যা-নির্যাতনে ব্যবহৃত নানা স্মারকে একাত্তরের সেই দুর্বিষহ দিনগুলোকে, নির্মমতাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে এই জাদুঘরে। জাদুঘরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ প্রদর্শিত হচ্ছে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী সংগ্রহশালায়’। দেশ শত্রু মুক্ত হতে আর মাত্র তিন দিন বাকি। কোনো কোনো অঞ্চল ইতিমধ্যে মুক্ত হয়ে গেছে। শিলালিপির সম্পাদক সেলিনা পারভীন তখন ছিলেন ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর বাসভবনে। কয়েকজন লোক মুখে রুমাল বেঁধে প্রবেশ করে তাঁর বাড়িতে। ধরে নিয়ে যায় সেলিনা পারভীনকে। তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে ১৮ ডিসেম্বর রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে তাঁর চোখ বাঁধা মৃতদেহ পাওয়া যায়। প্রখ্যাত এই সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী যে কলম দিয়ে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছেন সেই কলম এবং তাঁর পরনের শাড়ি সংরক্ষণ ও প্রদর্শিত হচ্ছে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরে। চোখের চিকিৎসক ছিলেন আলীম চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধে তিনি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন এবং তাদের জন্য ঔষধ সরবরাহ করতেন। এটাই হয়তো ছিল তাঁর অপরাধ। যে কারণে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া মওলানা আবদুল মান্নানের সহায়তায় ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে পাকিস্তানী হানাদারদের দোসর আলবদর সদস্যরা তাঁকে ঢাকার পুরানা পল্টনের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। বিজয়ের পর ১৮ ডিসেম্বর রায়ের বাজারের বধ্যভূমিতে আরও অনেকের সঙ্গে আবদুল আলীম চৌধুরীর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। আলবদর মানুষের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ এই চিকিৎসককে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই অকুতোভয় চিকিৎসক আলীম চৌধুরীর চিকিৎসা সরঞ্জাম জাদুঘরকে প্রদান করেছেন শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ল্যাম্প, তুলার প্যাড, ফরসেপ, ব্যান্ডেজ, ঝাঝরি, কটনবাড, কেঁচি, স্ট্যাম্প, সিরিঞ্জ, ডায়রি, কলম ও ভিজিটিং কার্ড। যেগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে জাদুঘরে। এ কক্ষে রয়েছে শহীদুল্লাহ কায়সারের ব্যবহৃত ডায়েরি, শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. মুনীর চৌধুরী পাঞ্জাবি, শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের পাঞ্জাবি, বিবিসির সংবাদদাতা শহিদ নাজিমুদ্দিনের ব্যবহৃত কোটসহ শহীদ বুদ্ধিজীবিদের নানা স্মারক। ‘জোহরা পারলে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর সঙ্গে মিলে যেয়ো। ঐ মতো ব্যবস্থা (দুই)’ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সেই বিখ্যাত চিঠি। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার প্রাক্কালে স্ত্রীর জন্য এই চিরকুটটি পাঠান তিনি, যেটি ওই সময়ের জনপ্রিয় সিগারেট কিং-স্ট্রোক (বক মার্কা) সিগারেটের প্যাকেটের উল্টো দিকে লেখা। অনেক কাঠখড় পেরিয়ে সেটিও সংগ্রহ করা হয়েছে জাদুঘরে। সংগ্রহ করা হয়েছে নিয়াজির গণহত্যার ব্লুপ্রিন্ট। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের নিদের্শনামা, বিভিন্ন জেলার শান্তি কমিটির মিটিং এর মিনিটস, শান্তিসেনার হলফনামা, জেনারেল নিয়াজী কর্তৃক বাঙালীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের এক অমূল্য দলিল, রংপুরের কুখ্যাত পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী জেনারেল খটকের দুষ্কর্মের দলিল। এছাড়াও রয়েছে বাগেরহাট জেলার বিখ্যাত রাজাকার রজব আলী ফকিরের হাতে লেখা চিঠি যেখানে স্থানীয়দের শান্তি কমিটি বা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। রয়েছে একাত্তরের গণহত্যার স্মৃতিময় গুলির খোসা, শহীদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র, ট্রানজিস্টরসহ নানা স্মারক। কয়েকশ’ দুর্লভ গণহত্যার আলোকচিত্রে প্রত্যেকটি গ্যালারিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে গণহত্যা-নির্যাতন। রয়েছে গণহত্যার প্রায় পঞ্চাশটি শিল্পকর্ম। বিভিন্ন মোটিফে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একাত্তরের টর্চার সেল, কারাগার, নির্যাতিতা নারীর অবয়ব। নিয়মিত বিভিন্ন পেশার মানুষজনের পাশাপাশি শিশুরা নিয়মিত এই জাদুঘর পরিদর্শনে আসছেন। মুক্তিযুদ্ধের বই বিক্রির জন্য জাদুঘরে একটি বিক্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জাদুঘর প্রাঙ্গণকে ওয়াইফাই জোন এর আওতায় নেয়া হয়েছে এবং দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে একটি উন্নতমানের কাফেটারিয়া। জাদুঘরের নিজস্ব গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধের অঞ্চলভিত্তিক নানা প্রকাশনা ছাড়াও এ বিষয়ক আরও অনেক সমৃদ্ধ প্রকাশনা রয়েছে। জাদুঘরের অভ্যন্তরে একটি মুক্তমঞ্চ গড়া হয়েছে, নির্দিষ্ট সৌজন্যমূল্যের বিনিময়ে যেটি সংস্কৃতিসেবীরা ব্যবহার করে থাকেন। অমীয় তরফদারের একটি বিখ্যাত ছবি ‘রিক্সায় পড়ে থাকা মৃত মানুষের লাশ’। বিশে^র কাছে বাংলাদেশের গণহত্যা-নির্যাতনের করুণ ইতিহাসকে প্রতিনিধিত্ব করে এই ছবি। বলা চলে বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতীক এই ছবি। তারই ছায়া অবলম্বনে বিখ্যাত শিল্পী/ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান নির্মাণ করেছেন ‘গণহত্যা ১৯৭১’ শিরোনামে একটি ভাস্কর্য। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যায় শত শত মা তার সন্তানকে হারিয়েছেন। সে সকল মায়েদেরকে স্মরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক শিল্পী রোকেয়া সুলতানা ‘জননী ও শহীদ সন্তান’ শিরোনামে মিশ্র ধাতুর তৈরী একটি ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন। জাদুঘরের মূল ভবনের সামনে ভাস্কর্য দুটি স্থাপন করা হয়েছে। খুলনা সার্কিট হাউসের বর্তমান নতুন ভবনের স্থানে ১৯৭১ সালে টিনের আটচালা ছাউনির ঘর ছিল, যা হেলিকপ্টারের যাত্রীদের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালীন সার্কিট হাউসের পুরাতন ভবন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের অফিস হিসেবে ব্যবহার করত এবং বিশ্রামাগার ব্যবহৃত হতো নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে। এখানে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সমর্থকদের এনে জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে নির্যাতন ও হত্যা করা হতো। এখানে প্রতিদিন শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হতো। বিশ্রামাগার ভেঙ্গে খুলনা সার্কিট হাউসের নতুন ভবন গড়ে তোলায় ঘটনাটি একেবারে আড়ালে চলে যায়। গণহত্যা জাদুঘর স্মৃতিফলক লাগিয়ে বিস্মৃত সে ইতিহাসকে লোকচক্ষুর সামনে আনেন। গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণে এই জাদুঘর নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে প্রশংসনীয় উদ্যোগ গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের সামনে গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরতে স্মৃতিফলক নির্মাণ। এর আওতায় খুলনা, রাজশাহী ও পঞ্চগড়ে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিফলক। প্রায় বিস্মৃত, প্রান্তিক এলাকায় ঘটে যাওয়া বেশ কিছু গণহত্যাকে নতুন করে সবার সামনে উপস্থাপন করছে গণহত্যা জাদুঘর। সে ফলকগুলোতে নতুন করে গণহত্যা ও নির্যাতনের ইতিহাস প্রান্তিক মানুষদের কাছে উদ্ভাসিত হচ্ছে। চরেরহাটের নির্জন পল্লীতে যখন ফলক লাগানো হচ্ছিল, পুরো গ্রামবাসী অবাক হয়ে গেলেন। এইখানে এমন নির্মমতা ঘটেছে তারা জানতেন না। ফলকগুলো হয়ে উঠছে ইতিহাসের সাক্ষ্য। গণহত্যা জাদুঘরের বহুবিধ কার্যক্রমের একটি গণহত্যা ‘নির্ঘণ্ট সিরিজ’ বা ‘জেনোসাইড ইনডেক্স’। দেশের আনাচে-কানাচে রয়েছে অসংখ্য বধ্যভূমি ও গণকবর। নির্যাতনের শিকার বহু নারী-পুরুষ এখনও রোমহর্ষক স্মৃতি রোমন্থন করেন। সেসব গণহত্যার বৃত্তান্ত, বধ্যভূমি ও গণকবরের কথা, এমন কী নির্যাতনের কথা বিজয়ের গৌরব-ভাষ্যে উপেক্ষিত থেকে গেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনায়, অনুপুঙ্খ ইতিহাস অনুসন্ধানে এসবের গুরুত্ব অপরিসীম। গণহত্যা, বধ্যভূমি ও নির্যাতনের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং এ সংক্রান্ত সংগ্রহশালা তৈরি আমাদের জাতীয় কর্তব্য। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উঠে আসার পাশাপাশি উত্তর প্রজন্মের মাঝে মুক্তিসংগ্রামের মর্মবাণী প্রতিভাত হবে। এই তাগিদ থেকে প্রায় বিস্মৃত সেসব গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবরের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের উদ্যেগ জেনোসাইড ইনডেক্স। যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নানামুখী নির্যাতনের দু®প্রার্প্য ও অমূল্য উপকরণ সংগ্রহ এবং জাতির সামনে মুক্তিযুদ্ধের মর্মকথা তুলে ধরা। এর পাশাপাশি একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, শোষণমুক্ত রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের বাণী প্রচার করা এ প্রতিষ্ঠানের আদর্শ। এরই আলোকে এ যাবতকালে প্রাপ্ত গণহত্যা ও বধ্যভূমির ওপর ক্ষেত্রানুসন্ধানের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে প্রত্যেকটি গণহত্যার ইতিবৃত্ত তুলে ধরা ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন নির্ঘণ্ট গ্রন্থমালার উদ্দেশ্য। এর বিষয়-বিন্যাসের মধ্যে রয়েছে স্থানটির ভৌগোলিক অবস্থান, তৎকালীন অবস্থা, গণহত্যার পটভূমি, গণহত্যা ও নির্যাতনের বিবরণ, শহীদ ও নির্যাতিতদের নাম-পরিচয়, ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর মৌখিক ভাষ্য, গণহত্যায় জড়িতদের নাম-পরিচয়, বধ্যভূমি সংরক্ষণের প্রয়াস, বর্তমান অবস্থা এবং সার্বিক মূল্যায়ন। পুরো কাজটি গবেষণামূলক। এ কাজের স্বাতন্ত্র্য এখানে যে, লেখক গণহত্যা ও বধ্যভূমির স্থলে সরেজমিনে গিয়ে, খোঁজ-খবর নিয়ে, গণহত্যা সংশ্লিষ্টজনের সঙ্গে কথা বলে, পর্যবেক্ষণ করেÑ সেই অশ্রু-শোণিতের দিনগুলোকে অন্তরে অনুভব করে তবেই প্রণয়ন করেছেন এই ভাষ্য। সবার হৃদয় নিংড়ানো কথামালা যেন এখানে মেলে ধরেছে ভয়াল দিনের স্মৃতি। ফলে এর মধ্য দিয়ে যে সেই গণহত্যা ও নির্যাতনের কথা অকৃত্রিমরূপে উঠে এসেছেÑ এ ভরসা আমরা করি। এভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গণহত্যা- বধ্যভূমিগুলোকে নিয়ে এ পর্যন্ত ৭০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। শীঘ্রই আরও ৩০টি গ্রন্থ প্রকাশের পথে। অর্থাৎ গণহত্যা নিয়ে একশ পৃথক বই। প্রতিটি গণহত্যার ওপর লিখতে পারলে এর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাবে। অনেকটা স্বপ্নের মতো বিষয়। এই কাজটি গণহত্যা-নির্যাতনের একাডেমিক ইতিহাস চর্চায় এনেছে নতুন দিগন্ত। মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা-নির্যাতন, বধ্যভূমি ও গণকবর সংক্রান্ত বিদ্যাচর্চায় এ গ্রন্থমালা বিশেষ আলো ফেলবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে শুধু গৌরব নয়, মুক্তিযুদ্ধের বেদনাবিধূর কাহিনী তুলে ধরতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস উঠে আসবে। এই বেদনা ও গৌরবের কাহিনী বয়ানের মাধ্যমে মানবতার জয়গান করে সম্প্রীতির সমাজ নির্মাণ আমাদের লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শও তো তাই। গণহত্যার নতুন হিসাব গণহত্যার সংখ্যাতাত্ত্বিক বিতর্ক বহুদিনের। এই বিতর্কের অবসান ঘটানো ও গণহত্যায় শহীদের সংখ্যা, বধ্যভূমি, গণকবর, গণহত্যা ও নির্যাতন কেন্দ্র খুঁজে বের করতে কেন্দ্র সারা বাংলাদেশে জেলাওয়ারি জরিপ পরিচালনা করছে। প্রশিক্ষিত গবেষকরা প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে ঘুরে শনাক্ত করছেন একাত্তরের নির্মমতার ইতিহাস। প্রথম দশটি জেলার জরিপের ফলাফল ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ১০টি জেলায় নির্যাতন কেন্দ্রের সংখ্যা ২৫০টি। চারটি ক্ষেত্রেÑ গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্রের মোট সংখ্যা ২১০৭টি। আর বাংলাদেশে যে তথ্য আগে ড. মামুন সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধ কোষে পেয়েছিলাম তার সংখ্যা ৯০৫। ১০টি জেলায় যদি হয় শুধু ১৭৫২টি গণহত্যা সংঘটিত হয় তাহলে ৬৪ জেলায় সে সংখ্যা কত দাঁড়াতে পারে? তাহলে গণহত্যার সংখ্যা কি ৩০ লাখে সীমাবদ্ধ থাকে? বাকি জেলাগুলোতে ও জরিপের কাজ চলছে। বের হচ্ছে গণহত্যার নতুন ইতিহাস। পিজিটি কোর্স গণহত্যা জাদুঘরের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ-গণহত্যা নির্যাতন বিষয়ে পিজিটি কোর্স চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও দিনাজপুরে চারটি প্রশিক্ষণে প্রায় ৩০০ প্রশিক্ষণার্থী অংশ নিয়েছেন। যেখানে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন বরেণ্য সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ, শিল্পী হাশেম খান, কর্নেল সাজ্জাদ জহির বীর প্রতীক, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, পিএসসির সদস্য আসাদ মান্নান, অধ্যাপক মাহবুবর রহমানসহ আরও অনেক সম্মানিত লেখক গবেষকরা। চার মাস মেয়াদি এই প্রশিক্ষণ কোর্সের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল কোর্স শেষ করার পর গণহত্যা-মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের গবেষণা এবং সেটির ওপর থিসিস তৈরি। মাঠ পর্যায়ের গবেষণায় অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। বিশেষ করে এই প্রশিক্ষণ কোর্সের মধ্য দিয়ে চারটি বিভাগীয় শহরে ৩০০ জন প্রশিক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ-গণহত্যা গবেষক তৈরি সম্ভব হয়েছে। যাদের হাত ধরে এটা এসেছে সেই চারটি বিভাগের একাত্তরের গণহত্যা-নির্যাতন, শরণার্থীসহ মুক্তিযুদ্ধের নানাবিধ বিষয়। ৩০০টি থিসিস থেকে প্রায় ৫০টি থিসিস পুস্তিকা আকারে বের করা হয়েছে/হচ্ছে। আরও প্রায় ৫০টি গ্রন্থ প্রকাশের পথে, যেসব গবেষণায় প্রান্তীয় এলাকাগুলোর মুক্তিযুদ্ধের নানাবিধ ন্যারেটিভ উঠে এসেছে। প্রায় বিস্তৃত গণহত্যা, নির্যাতন, বধ্যভূমি, গণকবরের পাশাপাশি উঠে এসেছে শরণার্থী জীবণের স্মৃতি, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ, বিভিন্ন বাহিনীর গেরিলা যুদ্ধ। প্রশিক্ষিত এই গবেষকদের অধিকাংশই কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা, লেখক, গবেষক, যাদের হাত ধরে আগামীতে গণহত্যা-মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠা পাবে বলে আমরা বিশ^াস করি। প্রশিক্ষণ থেকে সকল প্রশিক্ষণার্থীদের প্রদান করা হয়েছে সনদ, দেয়া হয়েছে আর্থিক অনুদান। সবচেয়ে বড় বিষয় এই চারটি জেলায় প্রায় ২০০ নতুন আগ্রহী গবেষক তৈরি হয়েছেন। এছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি। জাদুঘরে বিপুল তথ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে ডিজিটাল আর্কাইভ। সংগ্রহ করা হচ্ছে একাত্তরের গণহত্যার দেশী বিদেশী দলিল, পত্র-পত্রিকা। দুষ্পাপ্য প্রায় ৬০০০ গণহত্যার ছবি সংগ্রহ আছে আর্কাইভে। গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শক্তি তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে জাদুঘর টিম। স্কুলগুলোতে নানা ধরণের ইন্টারেকটিভ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে করা হয়েছে। আমাদের নানামুখি উদ্যেগে বদলে যাচ্ছে গণহত্যা-নির্যাতনের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস, বদলে যাচ্ছে খুলনার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। গত এক বছরে প্রায় ৫০০০ স্কুল শিক্ষার্থী জাদুঘরটি পরিদর্শন করেছেন, প্রত্যক্ষ করেছেন গণহত্যা আর বর্বরতার ইতিহাস। গণহত্যা জাদুঘর ও আর্কাইভ সবে যাত্রা শুরু করেছি। এটি কিন্তু এটি বিকশিত হতে সময় লাগবে। এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টার আর এ দায়িত্ব দেশের ও দেশের বাইরের মুক্তিযুদ্ধের সকল সুহৃদের। তাই সবার শর্তহীন সহযোগিতায় জাদুঘরের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হবে এবং একে প্রাতিষ্ঠানিক পূর্ণরূপ দেয়া সম্ভব হবে। এই জাদুঘর ও আর্কাইভের সবচেয়ে বড় অবদান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষরণ, নতুন গণহত্যার প্রমাণ খুঁজে বের করে, সারা দেশকে জরিপের আওতায় আনা, নতুন গবেষক সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক সেমিনারের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করা। নতুন নতুন গণহত্যা নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশ-সব মিলিয়ে মহাযজ্ঞ। সবচেয়ে বড় কথা এসব কর্মকা- মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও তার গভীরতা বুঝতে সহায়তা করছে, পদ্ধতিগত পরিবর্তনের সূচনা করছে এবং একদল নতুন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সৃষ্টি করছেন যারা এ চেতনা শুধু ধারণ নয় বিকশিত করবেন। এ কাজটি আগে কখনও হয়নি।
×