ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দেশটি স্বাধীন করল যারা, আমরা তাদের দেব ভোট

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

দেশটি স্বাধীন করল যারা, আমরা তাদের দেব ভোট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের ঘাতক ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের অবয়ব তৈরি করে ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ভোট না দিতে রাজধানীতে ট্রাক শোভাযাত্রা করেছে সামাজিক সংগঠন ‘সচেতন চারুশিল্পী সমাজ।’ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে চারটি ট্রাকে করে পৃথক ভাবে এই প্রচার চালানো হয়। এ সময় সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, কামারুজ্জামানসহ অন্য যুদ্ধাপরাধীদের ছবি দেখিয়ে তাদের ভোট না দিতে মাইকে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার দুপুরে শোভাযাত্রার একটি ট্রাক আসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। ১০ জন কর্মী নিয়ে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘এই জানোয়ারদের প্রত্যাখ্যান করুন’। রাস্তায় দাঁড়িয়ে সবাই একযোগে বলতে থাকেন, ‘দেশটি স্বাধীন করল যারা, আমরা তাদের দেব ভোট, স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি, তোমাদেরই জয় হোক- জয় বাংলা। মুক্তিযুদ্ধ অনিশ্বেস, ভোটেও থাকুক তারই রেশ- জয় বাংলা/ সুস্থ সমাজ নবীন ভোট, স্বাধীনতার পক্ষে হোক- জয় বাংলা/ সুস্থ সমাজ নবীন ভোট, উন্নয়নের পক্ষে হোক- জয় বাংলা/ খামোস বলা চলবে না, মুক্তিযুদ্ধ ভুলব না- জয় বাংলা’। শিল্পী সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ফের ক্ষমতায় আনার বিকল্প নেই। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকলের ঐক্য বিপথগামী শক্তিকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারে। আমরা এমন বিশ্বাস থেকেই প্রচারে নেমেছি। তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা টিকে থাকতে পারে না। আমরা চাই দেশবিরোধী চেতনাধারী ব্যক্তি যেন কোন অবস্থাতেই বিজয়ী হতে না পারে। তারা বিজয়ী হয়ে সংসদে গেলে মহান সংসদ কলঙ্কিত হবে। তারা বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির চলমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় থেমে যেতে পারে বহুল কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ। এর মধ্য দিয়ে থমকে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। তাছাড়া সাম্প্রদায়িক শক্তির বিজয় হলে আবারও নতুন করে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়তে হবে দেশকে। মাথাচড়া দিয়ে ওঠবে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ। নষ্ট হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। বিশ্ববাসীর কাছে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হবে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য। তাই আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। যারা বাংলাদেশ, জাতীয় পতাকা, মানচিত্র বিশ্বাস করে না তাদের ভোটের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এ দেশে থাকার কোন অধিকার তাদের নেই। ভোটের দিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির পক্ষে রায় দিয়ে জানান দিতে হবে, দেশবাসী তাদের আর চায় না। যখন মাইকে চারুশিল্পীদের স্লোগান চলছিল ঠিক তখন চারপাশ ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়। অনেকেই তাদের ব্যতিক্রমী এই নির্বাচনী প্রচারে সংহতি জানান। আলাল হোসেন নামের একজন বলেন, দেশেপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা নির্বাচন সামনে রেখে এই ব্যতিক্রমী প্রচারে নেমেছেন আমাদের সকলের উচিত উৎসাহ দিয়ে তাদের সমর্থন জানানো। প্রতিটি সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তাদের উদ্যোগকে সমর্থন জানাবে বলে আমার বিশ্বাস। মৃদুলা নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চারুশিল্পীদের স্লোগানে যোগ দিয়ে বলেন, তারা যেসব স্লোগান দিচ্ছে সবগুলো আমি ধারণ করি, বিশ্বাস করি। তাই শিল্পীদের কর্মসূচীর প্রতি রইল শতভাগ সমর্থন। আমরাও চাই ঘাতকরা যেন কোন অবস্থাতেই বিজয়ী হতে না পারে। সকলের প্রতি আহ্বান থাকবে ভোটে তাদের বর্জন করুন। তারা আবারও ভোট পেয়ে সংসদে গেলে শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে জামায়াত-বিএনপিকে বয়কট করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। চারুশিল্পী সমাজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিল্পী মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে এ রকম প্রচার চালাচ্ছি। আমরা শিল্পী সমাজ মনে করি নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে দেশবাসীর প্রত্যাখ্যান করা জরুরী। এই জানোয়ারদের ভোট দেয়া শহীদদের প্রতি অবমাননার শামিল। তাই দেশের সকল ভোটারের প্রতি আমাদের নিবেদন থাকবে, আপনারা যাকে ভোট দিতে চাচ্ছেন তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কিনা তা একবার চিন্তা করুন। যারা আমাদের শত্রু তাদের চিহ্নিত করুন। ভোটের দিন ঘৃণাভরে তাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে। বিশ^বাসী এরমধ্য দিয়ে জানতে পারবে বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী উগ্রবাদীদের কোন ঠাঁই নেই। কর্মসূচীতে অংশ নেন চারুশিল্পী নাজমা আক্তার, ইমরান হোসেন পিপলু, জিয়াউদ্দিন শিমুল, রুপম রায় প্রমুখ।
×