ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অষ্টম শ্রেণী সমাপনীতে পাসের হার বেড়ে ৮৫.৮৩ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

অষ্টম শ্রেণী সমাপনীতে পাসের হার বেড়ে ৮৫.৮৩ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চতুর্থ বিষয়ের নম্বর বাদ দিয়ে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি কার্যকরে এবার অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ কমেছে। তবে পাসের হার এক বছরে ২ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৮ হাজার ৯৫ জন। গত বছর ছিল এক লাখ ৯১ হাজার ৬২৮ জন। কমেছে এক লাখ ২৩ হাজার ৫৩৩ জন। নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণে জিপিএ-৫ কমলেও ফলে অন্য সকল সূচকেই অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে সারাদেশের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সোমবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলের পরিসংখ্যান তুলে দেন। পরে দুপুর ১২টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী পরীক্ষার বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুঃ জিয়াউল হক প্রমুখ। ১টা থেকে সারাদেশের শিক্ষার্থী নিজ নিজ কেন্দ্র ও স্কুল থেকে ফল জানতে পারে। ফল জানা যায়, ইমেইল, ওয়েবসাইট, মোবাইলে ও এসএমএস পাঠিয়েও। শিক্ষাবোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট (যঃঃঢ়://িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফৎবংঁষঃং.মড়া.নফ) এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকেও জেএসসি ও জেডিসির ফল জানা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ই-মেলেও জেএসসি ও জেডিসির ফলের সফটকপি পাঠায় শিক্ষা বোর্ড। এছাড়া আগামী কয়েক দিনের মধ্যে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা বোর্ডের পাঠানো ট্রান্সক্রিপ্ট নিতে পারবে শিক্ষার্থীরা। গত ১ থেকে ১৫ নবেম্বর পর্যন্ত সারাদেশের ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী জেএসসি-জেডিসিতে অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ২২ লাখ ৩০ হাজার ৮২৯ জন। আট বোর্ডের জেএসসিতে পাসের হার ৮৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮৩ দশমিক ১০ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে পাস করেছে ৮৯ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছর ছিল পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। কারিগরি বোর্ডের ভোকেশনাল শিক্ষা শুরু হয় নবম শ্রেণী থেকে। ফলে এ বোর্ড এ পরীক্ষার আওতায় নেই। জিপিএ-৫ কমার নেপথ্যে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি ॥ পাসের হার বাড়লেও জিপিএ-৫ কেন কম হলো? ফল প্রকাশের পরই সামনে এসেছে এমন প্রশ্ন। অনেকে হঠাৎ এ সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্নœ হলেও জানা গেল স্বাভাবিক পরিবর্তনেই এমন ফল। তবে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আগে অষ্টমের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বিষয়ের নম্বর ধরেই ফলাফল হিসাব করা হতো। নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির ধারাবাহিক পরিবর্তনের অংশ হিসেবে এবার তা করা হয়নি। এ কারণেই জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যোগ করলে দেখা যাবে জিপিএ ফাইভ আবার বেড়ে গেছে। শিক্ষামন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মূল্যায়ন পদ্ধতির এ পরিবর্তন নিয়ে আগেই বলা হয়েছে। সকলেই জানেন এবার এটা হতে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় নানামুখী সংস্কার করে চলেছে। এর মধ্যে উন্নত বিশ্বের ন্যায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তৈরিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। সে লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় কিছু বিষয়ের মূল্যায়নে ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ কাজটি পরীক্ষার্থীর নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান করে থাকে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, এ বছর থেকে শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, কর্মমুখী শিক্ষা এবং চারু ও কারুকলা, কৃষিশিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, আরবি, সংস্কৃত পালি বিষয়সমূহ ধারাবাহিক মূল্যায়ন (ঈড়হঃরহঁড়ঁং অংংবংংসবহঃ) এর আওতায় আনা হয়েছে। এ বিষয়গুলো স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন করে এবং প্রাপ্ত ফল একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টে উল্লেখ থাকে। আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যাান অধ্যাপক মুঃ জিয়াউল হক বলছিলেন, ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হওয়ায় এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় বোর্ডের ফল প্রক্রিয়াকরণে চতুর্থ বিষয় বিবেচনা করা হয়নি। এ কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছরের ফলে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। চতুর্থ বিষয় ব্যতীত গত বছরের পরীক্ষায় জিপিএ -৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থী ও এ বছরের পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ-৫ পরীক্ষার্থী সংখ্যায় তেমন পার্থক্য নেই । পাসের হারে বরিশাল, জিপিএতে শীর্ষে ঢাকা ॥ জেএসসিতে এবারও বরিশালে পাসের হার সবচেয়ে বেশি, সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এবার বরিশাল বোর্ডে সবচেয়ে বেশি ৯৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, এবং সিলেট বোর্ডে সবচেয়ে কম ৭৯ দশমিক ৮৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। অন্যদিকে মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে এবার ৮৯ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। ঢাকা বোর্ড থেকে এবার সবচেয়ে বেশি ২২ হাজার ৩৩৪ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর মাদ্রাসা বোর্ডে পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৯৮৭ জন। এছাড়া রাজশাহীতে পাস করেছে ৯৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ জিডিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ৬৩৮ জন। কুমিল্লা বোর্ডে অংশ নিয়েছিল দুই লাখ ৯২ হাজার ৮১১ জন। পাস করেছে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৭২৫ জন। পাসের হার ৮৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৬২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ৭৪২ জন, গত বছর যা ছিল আট হাজার ৮৭৫ জন। যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল দুই লাখ ৩৫ হাজার ৮২২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে এক লাখ ৯৯ হাজার ৫৩৬ জন। এ বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৪ দশমিক ৬১ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। যশোর বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে সাত হাজার ২৫৬ জন, গত বছর যা ছিল ১৪ হাজার ৬১২ জন। চট্রগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল দুই লাখ দুই হাজার ৪৫৫ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৩৮ জন। গড় পাসের হার ৮১ দশমিক ৫২ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮১ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে পাঁচ হাজার ২৩১ জন, গত বছর যা ছিল ১০ হাজার ৩১৫ জন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৮৫৭ জন। এর মধ্যে পাস করেছে এক লাখ ১১ হাজার ৪৬৯ জন শিক্ষার্থী। বরিশালে এবার গড় পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৯৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৯০৬ জন, গত বছর যা ছিল আট হাজার ৪৩১ জন। সিলেট শিক্ষা বোর্ড থেকে অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৪৯ হাজার ৯৪ জন শিক্ষার্থী। উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ৬ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৬৯৮ জন, গত বছর যা ছিল সাত হাজার ৬২১ জন। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ৩৮৯ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে দুই লাখ দুই হাজার ৭৫৬ জন শিক্ষার্থী। গড় পাসের হার ৮১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দিনাজপুরে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৩০৩ জন, গত বছর যা ছিল ২০ হাজার ৬২ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তিন লাখ ৮২ হাজার ২০৮ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে পাস করেছে তিন লাখ ৪০ হাজার ৩১১ জন। গড় পাসের হার ৮৯ দশমিক ৪ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। মাদ্রাসায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৯৮৭ জন, গত বছর যা ছিল সাত হাজার ২৩১ জন। ৪৩ প্রতিষ্ঠানের সবাই ফেল ॥ এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শূন্য পাস করা বিদ্যালয়ের সংখ্যা কমেছে। ৪ হাজার ৭৬৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব পরীক্ষার্থী পাস করেছে। আর ৪৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করতে পারেনি। গত বছর জেএসসি- জেডিসিতে ৫ হাজার ২৭৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছিল। আর ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী ফেল করেছিল। এই হিসেবে এবার শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫১০টি কমেছে। শূন্য পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ১৬টি। ঢাকা বোর্ডের ৪১৩টি, রাজশাহীর ৯১২টি, কুমিল্লার ১৫৮টি এবং যশোর বোর্ডের ২৭৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছে। চট্টগ্রামের ৮৯টি, বরিশালে ৮২১টি, সিলেটে ৭১টি, দিনাজপুর বোর্ডের ৩০২টি এবং মাদ্রাসা বোর্ডের এক হাজার ৭২৭টি প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। মাদ্রাসার ২০টি, দিনাজপুরের ১১টি, ঢাকার ৫টি, রাজশাহীর ২টি এবং যশোর ও চট্টগ্রামের একটি করে প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থী জেএসসি- জেডিসিতে অংশ নিয়েও পাস করতে পারেনি। বিদেশের নয় কেন্দ্রে পাস ৯৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ ॥ জেএসসি পরীক্ষায় বিদেশে নয়টি কেন্দ্রের ৯৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৬ জন। গত বছর বিদেশের কেন্দ্র থেকে ৯৩ দশমিক ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। সেই হিসেবে এবার বিদেশের কেন্দ্রে পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ পয়েন্ট। এবার দেশের বাইরের নয়টি কেন্দ্রে ৫৪১ জন শিক্ষার্থী জেএসসিতে অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৫৩০ জন। ৫টি কেন্দ্রের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। জেএসসি-জেডিসিতে এবার সম্মিলিতভাবে ৮৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৮ হাজার ৯৫ জন।
×