ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

নির্বাচন ২০১৮, ইশতেহার ও ২০১৯-২০২৩ সময়ের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচন ২০১৮, ইশতেহার ও  ২০১৯-২০২৩ সময়ের সম্ভাবনা

নির্বাচনের মৌসুম। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, বেশকিছু সহিংসতা এবং আশা-নিরাশার দোলাচলে এগিয়ে চলেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জমজমাট প্রচার। বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমের শীর্ষ খবরে মনে হয় একতরফা প্রচারে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। তবে স্থানীয় সংবাদদাতার কণ্ঠে গাজীপুর, শেরপুর, ঢাকা ও নোয়াখালীসহ বিনা বাধায় সকল পক্ষের ভোটযুদ্ধ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানা যায়। আদালতে সাজাসহ বেশকিছু বেআইনী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কারণে বিরোধী দলের কয়েকটি প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। নির্বাচনী অফিস ভাংচুরে কেউ কারো চেয়ে কম নয়। হতের হিসাবে আওয়ামী ঘরানার দুজন আর আহতের দিকে বিএনপির বেশি। এশিয়ার অন্যান্য দেশ ফিলিপিন্স, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনে সহিংসতা এখনও কম। আর ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর প্রচ- বর্বরতা ও নৃশংস সংখ্যালঘু হত্যাযজ্ঞ, ২০০৬ সালে নির্বাচন পূর্ব নীল নক্সার অত্যাচার, নির্মমতা এবং ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিহতের বালখিল্য প্রচেষ্টায় আগুন ও গ্রেনেড, হত্যা এবং দোকানপাটসহ আর্থিক স্থাপনা পুড়িয়ে দেয়ার হঠকারিতার তুলনায় এবারের সংসদ নির্বাচনের সহিংসা এখনও যৎকিঞ্চিৎকর। নির্বাচনী ইশতেহার গত কয়েকদিনে রাজনৈতিক দলসমূহের নির্বাচনী ইশতেহার ঘটা করেই প্রকাশিত হয়েছে। সব ক’টিতেই বেশকিছু ইতিবাচকতা থাকলেও আওয়ামী লীগের ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ ভোটার মহলের নজর কেড়েছে। এর কয়েকটি মুখ্য বক্তব্য বর্তমান নিবন্ধের শিরোনামে আনা হয়েছে। তাছাড়া গ্রামবাংলায় নগর জীবনের সুবিধা বিস্তার, মেগা প্রকল্পে বিশেষ নজরদারি, নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা, সড়ক চলাচলে নিরাপত্তা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রাম এবং সন্ত্রাস সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ নির্র্মূলে অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা বলা হয়েছে। অর্জন ও সাফল্যের কিছু দৃষ্টান্ত সরকার প্রধান জনবন্ধু শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বে দেশে বিদেশে নন্দিত কয়েকটি হচ্ছে : ক) বহুল প্রশংসিত জঙ্গীবাদ সাম্প্রদায়িকতা ও সহিংসতা দমন করা। খ) অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ও সামাজিক অগ্রগতিতে দৃষ্টান্তমূলক সফলতায় কৃতিত্বের সঙ্গে জাতিসংঘের তিনটি শর্ত একযোগে পূরণ করে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার গৌরব অর্জন করা। গ) দারিদ্র্যের হার ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস করা। ঘ) শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ২৯ এ হ্রাস করা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মেয়ে ও ছেলে ছাত্রের ভর্তি জনমিতির অনুপাতে উন্নীত করা, গড় আয়ু ৭২ বছরে উন্নীত করা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩ এ সীমাবদ্ধ করা, শিক্ষার হার শতকরা ৬০ ভাগের ওপরে নেয়া, মাথাপিছু আয় ১৯৭২ সালের ৮৭২ টাকার বিপরীতে ১,৪০,৭৫০ টাকায় উন্নীত করা, শতকরা ৬৫ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা, শতকরা ৭০ ভাগ লোকের ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া, ১৯৭২ সালের উচ্চশিক্ষায় ভর্তি ৩০,০০০ এর তুলনায় ২০১৭ সালে ৩,৩,০০,০০০ এ উন্নীত করা। ঙ) ২০০৮ সালে শুরু করা ডিজিটাল বাংলাদেশের অধীনে প্রযুক্তির ব্যবহার করে গ্রামবাংলার মানুষের ঘরে কৃষি সম্প্রসারণ ও গবাদি পশু হাঁস মুরগির চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া। চ) নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ ছ) ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ৮৭ লাখ লোক অথবা জনসংখ্যার শতকরা ৫.৫ ভাগ লোককে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ে নিয়ে আসা। জ) অপ্রত্যাশিত রোহিঙ্গা সমস্যাটিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান করে বিশ^বাসীর সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভবিষ্যতে স্থায়ী সমাধানের আশার সঞ্চার করা। ঝ) ইন্টারন্যাশনার ট্রাইব্যুনাল অন দ্য ল অব দ্য সি, ইটলসের অসামান্য জয়লাভে বাংলাদেশ ১,১৮,২৫৭ বর্গকিলোমিটার সাগর এলাকা, ২০০ নটিক্যাল মাইলে সার্বভৌম কর্তৃত্ব এবং মাহীসোপানে মালিকানা লাভ করে ব্লু অর্থনীতির এক সুদূর প্রসারী দিগন্ত উন্মেচিত করেছে। কারা কী বলছেন ১৯৭২ সালে নরওয়ের হিউস্ট ফাল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের জ্যাক আর এন্ডারসন কটাক্ষ করে বলেছিলেন যে, নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে টিকে থাকলেও একটি সার্বভৌম অর্থনীতি নাও থাকতে পারে। সম্প্রতি তারাও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। নবেল বিজয়ী প্রফেসর অমর্ত্য সেন প্রায়ই বলে থাকেন যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য আর এর সামাজিক রূপান্তর চিত্তাকর্ষক। দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে। তিনি মনে করেন, মূলত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ১৯৭২ থেকে সরকারী খাতের বিনিয়োগের ফলেই সেটি সম্ভব হয়েছে। অনুরূপভাবে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীতে মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকের যৌথ প্রণেতা পাকিস্তানের ড. মাহবুবুল হক প্রথম জীবনে কট্টর বাঙালী বিদ্বেষী ছিলেন। জীবন সায়াহ্নে মৃত্যুর পূর্বে বিশেষ করে বাংলাদেশের মানব উন্নয়নের জোরদার প্রশংসা লিপিবদ্ধ করে গেছেন তিনিও। বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেছে যে, দেশের অন্তত সোয়া কোটি লোকের গড় বাৎসরিক আয় মার্কিন ডলারে ৪০০০ আর বর্তমান বিনিময় হারে টাকা ৩,৪০,০০০। দ্য ইকোনমিস্ট ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সংখ্যায় উল্লেখ করে যে, (ক) মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ ৬৮ ডলারে এগিয়ে আছে পাকিস্তানের তুলনায় (খ) ১৯৭২ সালের সামষ্টিক আয়ে শিল্প খাতের অংশ ছিল শতকরা ৭ ভাগ আর ২০১৬ সালে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগে এবং (গ) বাংলাদেশ বছরে যে পরিমাণ তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার রফতানি করে, তা ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ রফতানির চেয়ে বেশি। ২০১৮ সালের ৪ জুন করাচীর ডন পত্রিকা বাংলাদেশের উন্নয়ন রহস্যের উল্লেখ করেছে, ১৯৭২ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান দেশের একটি রুগ্ণ এ্যাপেন্ডিক্স ছিল, সেটিই এখন বাংলাদেশ হয়ে পাকিস্তানকে টপকে গেছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয় যে, সুষ্ঠু পরিকল্পনা হলে দেশটির অর্থনীতি সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতির সমকক্ষ হতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা ও উন্নয়ন নীতি কৌশল প্রণয়নকারীদের তিরস্কারের সুরে বলেন যে, ‘হামে এক এয়সা দশ সালা মনসুবা চাহিয়ে কেউকে হাম আয়েন্দা দশ সালমে বাংলাদেশ কা বরাবর হো সাকে।’ সম্প্রতি জাপানের প্রভাবশালী সাময়িকী এশিয়ান রিভিউয়ের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক গাওয়ার রবিনসন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনবন্ধু শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলেছেন যে, ‘উইথ রিমার্কেবলী লিটল ইন্টারন্যাশনাল এটেনশন বাংলাদেশ হ্যাজ অলসো বিকাম ওয়ান অব দ্য ওয়ার্ল্ডস ইকোনমিক সাকসেস স্টোরিজ।’ দ্য হংকং এ্যান্ড সাংহাই ব্যাংক তাদের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় অনুরূপভাবে বলেছে যে, কোন মহলের উচ্চবাচ্য ছাড়াই বাংলাদেশ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সর্বশ্রেষ্ঠ আসন অর্জন করেছে। যার ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালে দেশটি পৃথিবীর ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতি হয়ে উঠবে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি তাদের একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে বলেছে যে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ পৃথিবীর ২৮তম বৃহৎ অর্থনীতি হয়ে উঠবে। নারীর উত্থান এদিকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কয়েক বছর ধরেই লিঙ্গ সমতায় বাংলাদেশের চমৎকার অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। বর্তমান বছরে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১৪৯ দেশের মধ্যে ৪৮ সূচকে এশিয়ার দ্বিতীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের লিঙ্গ সমতা সূচকের চারটি ক্ষেত্র যথা- প্রাথমিক ভর্তিতে বছরে ছেলে মেয়ের সমতা, মাধ্যমিক ভর্তিতে ছেলে মেয়ের সমতা, সরকার প্রধান হিসেবে নারীর সময়কাল ও জন্মকালে ছেলে ও মেয়ে নবজাতকের সংখ্যাগত সমতায় বাংলাদেশ পৃথিবীতে সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করছে। স্মর্তব্য যে, ২০০৬ সাল লিঙ্গ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১। বর্তমানে এ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। নিঃসন্দেহে গত দশ বছরে হাসিনা সরকারের নিরলস, উদ্ভাবনীও সাহসী পদক্ষেপের ফলেই লিঙ্গ বৈষম্য ক্ষেত্রে এরকম একটি ভাবমূর্তি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে করণীয় দেশের সবচেয়ে পুরাতন ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ও এর প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গৌরব উজ্জ্বল স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অকুতোভয় ও চৌকস নেতৃত্ব দান করেছেন। সেই ঐতিহ্য অনুসরণ করে কল্যাণ রাষ্ট্রে বাঙালীর অর্থনৈতিক মুক্তি তথা জনকল্যাণে সুউচ্চ অর্জনে সদা তৎপর রয়েছে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ ও ২০১৪ সালে নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে যে সকল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা প্রায় শতভাগ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই ১১তম সংসদ নির্বাচনেও মনোগ্রাহী ও যুগোপযোগী ইশতেহারের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ রাখার সুযোগ পাবে। সে আশায় মোটা দাগে কয়েকটি করণীয় উল্লেখ করা জরুরী। এর অনেকই আওয়ামী লীগের সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১) উৎপাদনে বহুমুখিতা, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি বছরে পঁচিশ লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান করা হলে নতুন করে ২২ লাখ শ্রমজীবী শ্রমবাজারে প্রবেশকারী ছাড়াও চলমান বেকারদের তিন লক্ষাধিক চাকরি পাবেন। মূলত শিল্পায়ন মাধ্যমে উৎপাদন বহুমুখিতা সৃষ্টি করেই কর্মসংস্থান, আয়রোজগার, দারিদ্র্য নিরসন, বৈষম্য হ্রাস এবং জনকল্যাণ নিশ্চিত হবে। বৃহৎ শিল্প হিসাবে বস্ত্র উৎপাদনে কাঁচা তুলা আমদানি, সুতা কাটা, বস্ত্র বয়ন, স্থানীয় বাজারে বিক্রি ছাড়াও তৈরি পোশাকে ব্যবহার ও তৈরি পোশাক রফতানি করে বর্তমানে ১টির জায়গায় অন্তত ০৩টি রুলস অব অরিজিন মানা হবে। তাছাড়া পৃথিবীর ৭তম বস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আমদানি খরচে বছরে ৫০০ কোটি ডলারের সাশ্রয় হবে। তৈরি পোশাক খাত ৪২ দিনের ওয়েটিং পিরিয়ড থেকে পরিত্রাণ পাবে এবং সময়োচিত রফতানি যোগান দিতে বেশি পারঙ্গম হবে। ১০০টি ইকনোমিক জোন বিশেষ করে ১০টি অগ্রাধিকার জোনে বেসরকারী খাতে কয়েকটি বৃহদাকার, আধুনিক ও দক্ষ বস্ত্রমিল স্থাপনে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যাপক শুল্কছাড়, ২২০ ভোল্টের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত প্রাপ্তি, এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট সার্ভিস প্রদান এমনকি সাশ্রয়ী সুদের হার ব্যবস্থা করে শিল্পায়নে অগ্র ও পশ্চাৎ সংযোগ সৃষ্টি করা জরুরী। এছাড়া এতে তৈরি পোশাক রফতানিতে শক্তি যোগ হবে। বিনিময় হার নীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করে প্রতিযোগী দেশগুলোর সমানে সমানে লড়াই করে তৈরি পোশাক খাতে গণচীনের ছেড়ে দেয়া বাজারের বৃহত্তর অংশ দখলে নেয়া সম্ভব হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০০০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত রফতানি আয়ের পথ সুগম হবে। অতিক্ষুদ্র (মাইক্রো), ক্ষুদ্র (স্মল) ও মধ্যম (মিডিয়াম) শিল্প স্থাপনে সুস্পষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে পাঁচ বছরে অন্তত ২৫ লাখ নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে বিশেষ করে দেশজ প্রাথমিক উৎপাদন যথা দুধ, ফলমূল, সবজি, মাংস, মাছ, ভুট্টা, হ্যান্ডিক্রাফটস ইত্যাদি ব্যবহার করে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও রফতানি বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। রেফ্রিজারেটরসহ কয়েকটি বৈদ্যুতিক দ্রব্যের স্থানীয় উৎপদানের সাফল্যের পথ ধরে আসবাব নির্মাণ সামগ্রী, খেলাধুলার সরঞ্জাম, সিরামিকস, জাহাজ নির্মাণ, সাইকেল, সিএনজি, ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং চামড়া শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা, গ্যাস, বিদ্যুত বিশেষ করে ভর্তুকি মূল্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, নগণ্য সুদে ঋণ সুবিধা দিয়ে কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য নিরসন, বৈষম্য হ্রাস, দেশজ সম্পদ সৃজনে বহুমাত্রিকতা এবং ব্যাপকভাবে রফতানি আয় বাড়ানো সম্ভব হবে। দক্ষ জনশক্তির তীব্র অভাব দূর করতে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন। দেশে বিদেশে যে দক্ষতা ও পারদর্শিতার চাহিদা রয়েছে, সে অনুসারে চাকরিদাতা ও শিক্ষা প্রশিক্ষণদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে এক ছাতার পরামর্শনার নিচে এনে কারিকুলাম, হাতে কলমে শিক্ষা, কোঅপারেটিভ শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিপুল সরকারী বিনিয়োগ করা সমীচীন হবে। বিএসটিআইকে শীর্ষ বিশ^মানে নিয়ে গেলে পণ্য ও জনসেবাসহ সকল প্রকার সেবা রফতানিতে চলমান অসুবিধা ও খরচ বাঁচানো সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে পরিবারে মাতা পিতা উভয়ের চাকরি করার প্রবণতা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে তৈরি খাদ্যের চাহিদা বাড়বে। ঘটবে চাকরি সৃষ্টি। দেশে অত্যন্ত উন্নতমানের আলু বিদ্যমান; সেক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে কর্ণফ্লেক্স, চিপস ও ফ্রাই তৈরিতে গবেষণা, বিনিয়োগ ও নীতি সুবিধা দিয়ে উদ্যোক্তা আকৃষ্ট করতে হবে। চলবে... লেখক : সাবেক গবর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
×