ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবু সালেম হোসাইন

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে

মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। আর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে সাহায্য করেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রেখে আমাদের একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছেন। তখন নিজেদের স্বকীয়তা রক্ষা, বৈষম্যের অবসান এবং নানা ধরনের সামাজিক অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তির জন্য তাদের একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রকাঠামো প্রয়োজন; যার শাসন ও পরিচালন ভার নিতে হবে তাদের নিজেদের হাতে; এছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নেই। সে কারণে বাঙালী জাতি তথা মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তান ভূখণ্ডের পূর্ব পাকিস্তান অংশ আলাদা হয় এবং সেখানে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয় হয়। স্বাধীনতার জন্য দেশান্তরী হতে হয়ে প্রতিবেশী দেশে শরণার্থীর মানবেতর জীবনযাপন করেছিলেন প্রায় এক কোটি মানুষ। উদ্বাস্তু হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হয়ে আজও অসম্মানের জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের ত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে আছি আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা আমাদের মনে পড়ে। তাদের আদর্শে দেশপ্রেমের বীজ নিজেদের বুকে লালন করতে পারি, দেশকে এগিয়ে নিতে পারি সোনার বাংলা হিসেবে তবেই তাদের সম্মান জানান হবে। তাই দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের দাবিতে অনেক সাহসী মানুষ জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করতে কুণ্ঠিত হননি। নয় মাস যুদ্ধের পর বিজয় অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের এই দেশটাকে গড়ে তুলবে হবে। একাত্তরে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আদর্শ আজ নতুন করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। সে আদর্শে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে। অনেককে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে ঠিক এর বিপরীত কাজ করে যাচ্ছেন। যেসব কারণে বাংলাদেশের মানুষ তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েছিল এবং তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছে, সেগুলোকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলা যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লাখো শহীদের যে ত্যাগ, সেই ত্যাগের মহিমায় তরুণ প্রজন্মকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্রয়োজন। একাত্তরে বাঙালী অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই ভবিষ্যত প্রজন্মও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাময় বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সক্ষম হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের অগ্রগতি উন্নয়নে সকলকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ২০২১ ও ২০৪১ রূপকল্প নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেমে থাকল না। উঁচু প্রবৃদ্ধি ধরে রাখল। গার্ডিয়ান পত্রিকা ভবিষ্যতবাণী করেছিল, ২০৫০ সালে প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাঙালী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছিলেন যে, ‘সামাজিক অধিকাংশ সূচকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে।’ বিদ্যুত ও কৃষিখাতে সাফল্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা অসাধ্য সাধন করছেন। নতুন বছরে তাদের শ্রমে-ঘামে-স্বপ্নে তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করবে ২০ বিলিয়ন ডলার। প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশীরা নিয়মিত বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সমৃদ্ধ রাখছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সঠিক নেতৃত্বকে ক্ষমতায় আনতে হবে। ১৯৭১ সালে যে চেতনা ধারণ করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। জনগণের আত্মমুক্তির আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আর এর জন্য দরকার ভোটারদের সচেতনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমরা প্রত্যাশা করি যে, তারা উপযুক্ত নেতৃত্বকেই নিজেদের ভোট প্রদান করবেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করতে হবে স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোকদের নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন করে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের ফলে আমাদের এই দেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×