ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাবার কাছে শোনা বঙ্গবন্ধুর প্রতিদিনের গল্প শোনালেন সাঈদ খোকন

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮

 বাবার কাছে শোনা বঙ্গবন্ধুর প্রতিদিনের গল্প শোনালেন সাঈদ খোকন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি বীমা কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সেখান থেকে যে টাকা তিনি ভাতা হিসেবে পেতেন তা রাজনৈতিক বিভিন্ন খাতে খরচ করে কিছু টাকা নিয়ে এসে আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে মোহাম্মদ হানিফের কাছে এনে দিয়ে বলতেন যে, এই টাকাগুলো আমার দলের সারাদেশের সকল নেতাকর্মীদের মাঝে পাঁচ দশ টাকা করে বিলিয়ে দে। কারণ তারাই বাংলাকে মুক্ত করবে ও দল পরিচালনা করবে। তারা আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধুর ঘরে পরিবার চালানোর জন্য কোন টাকাই থাকত না। এ নিয়ে অনেক কষ্ট করে বঙ্গমাতা তার সংসার সামলাতেন। সারাবছরই একটি ব্রিফকেস রেডি রাখতেন কখন বঙ্গবন্ধুকে জেলে নিয়ে যায় পাকিস্তান সরকার। তাই যখনই কোন বড় আন্দোলন শুরু হতো তখনই পুলিশ আসত বঙ্গবন্ধুর বাসায়। মোহাম্মদ হানিফ তখন দেখতেন যে, বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গেই হাসিমুখে বাংলার মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য স্বেচ্ছায় কারাগারে যেতে রাজি হতেন। এমনটাই ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার নেতৃত্বেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই দেশ নয় মাস যুদ্ধ শেষে স্বাধীন করেন। এমন করেই বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী সচিব ও অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র পিতার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিদিনের গল্প শোনার কাহিনী আবেগময় বর্ণনা করছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। একইসঙ্গে ৩০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নৌকায় ভোট দিয়ে তাকে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী করার জন্য নাগরিকদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মনার্থে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফুট রাস্তার নাম ‘মুক্তিযোদ্ধা সরণি’ করার জন্য রাজউককে প্রস্তাব দেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রবিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত রাজধানীতে বসবাসরত প্রায় সাড়ে তিন হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মেয়র সাঈদ খোকন এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাঈদ খোকন বলেন, আমার বাবা মোহাম্মদ হানিফ প্রতিদিনই বঙ্গবন্ধুর দৈনন্দিন গল্প শোনাতেন। তার উদারতা, নেতৃত্ব আর সমস্যার কথাগুলো বলতে বলতে অনেক সময় বাবা ঘুমিয়ে পড়তেন। তিনি বলতেন কিভাবে একটি মানুষ তার নিজের জীবন উজাড় করে দেশের জন্য কাজ করেছেন। তিনি জীবনের যৌবনকালের ১৪টি বছর বঙ্গবন্ধু জেলেই কাটিয়ে দেন। মেয়র বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধাদের আমৃত্যু সম্মান করব। যতদিন তারা জীবিত থাকবেন ততদিনই আমরা তাদের সহযোগিতায় কাজ করেই যাব। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের যত চাওয়া অছে তার সবকিছুই করতে চেষ্টা করব। কারণ তাদের জন্যই আজ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। মেয়র মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মনার্থে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফুট রাস্তার নাম ‘মুক্তিযোদ্ধা সরণি’ করার প্রস্তাব দেন। উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৩০০ ফুট রাস্তাটিকে মুক্তিযোদ্ধা সরণি করার প্রস্তাব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে রাখছি। আপনারা (মুক্তিযোদ্ধারা) সম্মতি দিলে আজ এটা পাস হবে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা হাত তুলে সম্মতি দেন। মেয়র অতি দ্রুত সেটি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। সাঈদ খোকন বলেন, আগে এই শহরে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং হতো। তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত থেকে আজ ১৮ হাজারে উন্নীত হয়েছে। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি তখন কিশোর ছিলাম। কিন্তু অবুঝ ছিলাম না। যারা পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত তুলে দিয়েছিল। তাদের বাড়িতে-গাড়িতে লাল-সবুজের পতাকা তুলে দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের একজন সদস্য হিসেবে লজ্জায় আমার বুক ফেটে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হয়েছে। জুরাইন কবরস্থানে মুক্তিযুদ্ধের জন্য কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের জন্য কমিউনিটি সেন্টারে চাইলে বিশেষ বিবেচনায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিল মওকুফ করা হবে বলে আশ্বাস দেন। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সিটি কর্পোরেশনের সব সেবা সহজ করে দেয়া হবে। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ পরিশোধ করতে চায়। নৌকায় ভোট চেয়ে সাঈদ খোকন বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বিজয়ের দিন। ওইদিন সারাদিন শেখ হাসিনার নৌকায় ভোট দিয়ে তাকে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী করুন। আমরা যদি আরও একটি বিজয় লাভ করতে পারি বিশ্বের বুকে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর পথ সুগম হবে। এখন সময় আমাদের, এখন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ও বাংলার স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে দোকান বরাদ্দে শতকরা ৫ ভাগ কোটা রেখেছি, সম্পূর্ণ বিনা ফি’তে কবরসহ দাফনের ব্যবস্থা করেছি। ডিএনসিসির মোট ৩৭টি সড়ক মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করেছি ও একইসঙ্গে দেশী-বিদেশী প্রায় ২ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার নামে সড়ক নামকরণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের চাকরি প্রদানসহ সার্বিক দাবি পূরণ করার আশ্বাস দেন তিনি। অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য প্রদান করেন। সংবর্ধনায় সেক্টর কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের রণাঙ্গনের বিভিন্ন স্মৃতি বর্ণনা করেন। এ সময় রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের সরাসরি ও সংরক্ষিত আসনের কমিশনারগণ উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা গুলশানের মাদানী এভিনিউকে মুক্তিযোদ্ধা সড়ক ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবি জানান।
×