ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মুন সিনেমার মালিককে টাকা পরিশোধের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

মুন সিনেমার মালিককে টাকা পরিশোধের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুন সিনেমা হলকে ৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে আবারও নির্দেশ দিয়েছে আপীল বিভাগ। সোমবার আলোচিত এ মামলায় মুন সিনেমা হলের মালিক ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ৩০ জুনের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অপরদিকে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। এর আগে ৮ অক্টোবর এ অর্থ পরিশোধে সম্মত হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। সেই টাকা মূল মালিককে পরিশোধের জন্য সরকারকে দুই মাস সময় দিয়েছিল আদালত। আদালত ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিষয়টি মুলতবি রেখেছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সোমবার মামলাটি আবারও আপীল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে। মামলার বিবরণে জানা গেছে, পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে এক সময়ের মুন সিনেমা হলের মূল মালিক ছিল ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হয় এবং পরে শিল্প মন্ত্রণালয় ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করে। ইতালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করলেও বিষয়টি আটকে যায়। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান একটি সামরিক ফরমান ঘোষণা করেন, যাতে বলা হয়, সরকার কোন সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে আদালতে তা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। মুন সিনেমা হলের সম্পত্তিও এর আওতায় পড়ে যায়। ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস এরপর ২০০০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যেখানে সংবিধানের ওই পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করা হয়। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট যে ঐতিহাসিক রায় দেয়, তাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনী ঘোষণা করা হয়। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে এবং ৯০ দিনের মধ্যে মুন সিনেমা হল ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেয়। এরপর দীর্ঘদিনেও মালিকানা ফিরে না পেয়ে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইতালিয়ান মার্বেল কর্তৃপক্ষ তখনকার ভূমি সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করে। সেই অভিযোগের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ১৯৭২ সালে মুন সিনেমা হল মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০০১ সালে প্রতীকী মূল্য ১ টাকা দরে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তা হস্তান্তর করে ডেভেলপারদের কাছে। ডেভেলপাররা মূল সিনেমা হলটি ভেঙ্গে বহুতল ভবন নির্মাণ করে এবং নিজেদের অংশ বর্তমান দোকান মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ অবস্থায় মুন সিনেমা হল আগের অবস্থায় ফেরত দেয়ার কোন উপায় নেই জানিয়ে জমির মূল্য ও মুন সিনেমা হলের মূল কাঠামোর মূল্য ধরে এর মালিককে দেয়া যেতে পারে বলে আদালতে মত দেন এ্যাটর্নি জেনারেল। ওই শুনানির পরই আপীল বিভাগ সিনেমা হলের জমি, স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেয়।
×