ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাজী সেলিম

শেখ হাসিনা সরকারকেই পুনর্নির্বাচিত করা উচিত

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

শেখ হাসিনা সরকারকেই পুনর্নির্বাচিত করা উচিত

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের একাদশতম নির্বাচন আগামী ৩০ ডিসেম্বর (২০১৮) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে গোটা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ইতোমধ্যেই উৎসবমুখর পরিবেশ ধারণ করছে। গত ১৪ নবেম্বর পল্টনের বিএনপির কার্যালয়ের সম্মুখে সপ্তাহব্যাপী প্রধান ব্যস্ততম সড়ক অবরোধ করে বিএনপির নির্বাচনী প্রার্থীর ফরম বিক্রি করার সময় পুলিশের দুটি গাড়ি অগ্নিসংযোগসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং ১০/১২ পুলিশ সদস্যকে মারাত্মকভাবে আহত করে বিএনপি-জামায়াত-ড. কামাল-ফখরুল-মান্না-রব গংয়ের জঙ্গী বাহিনী। এই ঘটনায় জানিয়ে দেয়া হলো, ২০১৩-১৪ সালের দেশব্যাপী পেট্রোলবোমা ব্যবহার ও অগ্নিসংযোগ করে মানুষ ও পুলিশ হত্যার নায়ক ও সন্ত্রাসী বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের সন্ত্রাসীদের পুনঃপ্রস্তুতির কথা। ২০১৪-১৫ ধ্বংসাত্মক, হত্যাকা-ের প্রাথমিক শোডাউন প্রদর্শন করল ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদের আসন্ন নির্বাচনের দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ প্রস্তুতি চলাকালীন মুহূর্তে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণে বঞ্চিত বিভিন্ন দল, গ্রুপ ও ফ্রন্টের বিভিন্ন নামে ও বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি সম্মিলিত এক গাদা নির্বাচনী ওয়াদা প্রস্তুত করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার বিভিন্ন ফর্মূলা প্রণয়ন করে বাংলাদেশের বিজ্ঞ, চতুর, শান্তিপ্রিয়, বুদ্ধি বিবেকসম্পন্ন ভোটারদের মন জয় করার বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির, বক্তব্য বিবৃতি হুমকি-ধমকি প্রকাশ করে, দেশের একটি স্থিতিশীল জনপ্রিয় সরকারকে উৎখাত করার জন্য হঠাৎ আবির্ভূত হয়েছেন ড. কামাল হোসেন। যিনি দেশের জাতীয় দুর্যোগ ও ক্রান্তিকালে সর্বদা অনুপস্থিত তিনি বাংলাদেশের বর্তমান জনপ্রিয় গণবান্ধব, সরকারবিরোধী হিসেবে দেশ ও জাতির মালিকানা পুনঃউদ্ধার ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার এক মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন! বয়সের ভারে ন্যুব্জ লাঠির ভরে চলাচলকারী নাদুসনুদুস, হৃষ্টপুষ্ট ড. কামালের এই দুরভিসন্ধি, মতলববাজি নেতৃত্বে গঠিত ঐক্যফ্রন্টের বহুরূপী নেতা-পাতি নেতার কার্যকলাপে দেশবাসী উদ্বিগ্ন ও নতুন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বোমাবাজি, হত্যাকা-ের ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় শঙ্কিত। ড. কামাল হোসেনের বাংলাদেশে নেই কোন নির্বাচনী এলাকা। মূল আদিবাসী ঠিকানাও বাংলাদেশে নয়। বাংলা ঠিকমতো উচ্চারণ করতেও অপারগ। ড. কামাল হোসেন যিনি একজন ফ্লাই ইন এবং ফ্লাই আউট, বিদেশ যাত্রী হিসেবে সপ্তাহে ও মাসে বিদেশে অবস্থান করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে ব্রিফকেস ভর্তি করে দেশে ফিরে আসেন। দেশবাসী জানে না যে, তিনি কি তার বিদেশে প্রাপ্ত অর্থের হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনআরবির কাছে প্রকাশ করেন কিনা। সুইস ব্যাংক অথবা বিদেশে সব কর ফাঁকি করে গোপন অর্থ জমাদানকারী কোন্ নিরাপদ ভা-ারে জমা করেন? তিনি আজ দেশের মালিকানা জনগণকে ফেরত প্রদান করে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করে এক মহা-ইতিহাস সৃষ্টি করার অশুভ পরিকল্পনা নিয়ে স্যুট কোট টাই পরিহিত অবস্থায় আত্মপ্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের জনগণ তার ও তার নেতৃত্বের তথাকথিত ঐক্যফ্রন্টের অপর বহুরূপী সুবিধাবাদী ভিলেনদের সকাল-সন্ধ্যার প্রলাপে সন্দেহপ্রবণ ও প্রায় হতবুদ্ধি। জনগণের প্রশ্ন, ঐ সব হঠাৎ আত্মপ্রকাশকৃত বিলাসবহুল জীবন যাপনের কিছু কথিত অঢেল টাকা-পয়সা, ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকারী এবং বাকি কিছু চাঁদাবাজি মস্তান লালিত নেতা ভিলেন গং দেশের মালিকানা ও গণতন্ত্র কোথা থেকে কিভাবে পুনঃউদ্ধার করবেন কোন্ বিশেষ কারণ ও উদ্দেশে? বাংলাদেশের মালিকানা তো বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবেও ক্ষমতাবলে দেশের জনগণই রয়েছেন। নতুন করে কি তাহলে বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে মালিকানা ছিনতাই করে তার শ্বশুরের দেশ তথা ’৭১-এর পরাজিত ঘাতক পাকিস্তানীদের হাতে তুলে দেবেন? বাংলাদেশে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার অবাধ প্রয়োগ ও ব্যবহার বেশ প্রখরতার সঙ্গেই বিদ্যমান। দেশের বিদ্যমান সব বিরোধী দল, গ্রুপ সকাল-সন্ধ্যা, রাজপথে প্রেসক্লাবের ভেতর ও বাইরে সমবেত হয়ে, তাদের দাবি-দাওয়া, মতামত নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রকাশ ও প্রচার করছেন। দেশের বিদ্যমান বেশ কয়েকটি প্রাইভেট চ্যানেল প্রতি মধ্যরাত ও কাকডাকা ভোর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ও সরকার প্রধান, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদ, তার সরকার, নেতা ও দলীয় সাংসদদের বিরুদ্ধে টিভি চ্যানেলগুলোতে হাজির হয়ে কুৎসা কাসুন্দীতে ভরপুর সব সমালোচনার তীক্ষèতা ছুড়ে তাদের মধ্য রাতের জন প্রাণহীন ‘টকশোরকে প্রাণবন্ত করার ও মধ্যরাতে গভীর নিদ্রায় মগ্ন বাংলাদেশের মানুষের নিদ্রার বিঘœ সৃষ্টি করে যদিও তাদের টেলিভিশনের সম্মুখে হাজির করতে ব্যর্থ হয়ে থাকেন। দেশের শতাধিক দৈনিক পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন বর্ধিত কলবরে দৈনিক ও সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সব সঠিক ও নিঃসর্গবাদী কার্যক্রম, পরিকল্পনা, বাস্তবায়নকৃত অর্জনকে স্বীকার না করে, অস্বীকারসূচক বল্গাহীন মন্তব্য করে থাকে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত দল বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিজভী তো ঘরবাড়ি, স্ত্রী (যদি থাকে), সন্তান পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসব্রত হয়ে, পল্টনের কার্যালয়ে খায়দায়, বাথরুম সেরে ঘুমায়, আবার প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠেই মধ্যরাত পর্যন্ত বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে হিটলারের গোয়েবলসের কায়দা ও অনুকরণে অত্যন্ত তীক্ষè ও আগ্রাসী ভাষায় ভুয়া ও মিথ্যা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে অবিরামভাবে। তাকে তো সরকারী কোন সংস্থা বা ব্যক্তি তার ঐ সন্ন্যাসব্রত অবস্থান থেকে সরকার ও দলবিরোধী বিদ্বেষপূর্ণ ও কুরুচি মন্তব্য ও বল্গাহীন কথাবার্তা বন্ধ করার লক্ষ্যে, পল্টনে তার ভুয়া প্রচারের আশ্রম থেকে উচ্ছেদ বা উৎখাত করেনি। মধ্যরাতের টকশোতে টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়ে থাকে একশ্রেণীর পথভ্রষ্ট, সুবিধাবাদী, সুযোগ-সন্ধানীর তারতম্য ও মূল্যহীন কথোপকথন, যখন বাংলাদেশের কর্মজীবী জনগণ গভীর নিদ্রায় মগ্ন থাকেন। টকশোর অংশগ্রহণকারী বক্তাগণ তখন দিনের সুখস্বাচ্ছন্দ্য, আরাম ও স্বপ্নের ঘুম সম্পন্ন করে গুলশান-বনানীর নামী-দামী রেস্তরাঁয় নৈশভোজসম্পন্ন করে, টলটলায়মান হয়ে ঐসব মধ্যরজনীর টিভি টকশোতে আবির্ভূত হয়ে থাকেন। তারপর সরকারের বিরুদ্ধে তাদের মনগড়া অভিযোগ, আক্রমণ, সমালোচনার তীক্ষèতা নিক্ষেপ করে মনের প্রশান্তি নিয়ে, আত্মতৃপ্তিতে দিশেহারা হয়ে যখন গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন সড়ক ও রাজপথের ন্যাড়া পরিত্যক্ত কুকুরগুলো তাদের ব্যবহৃত গাড়ির হেডলাইটের তীক্ষè আলোর রশ্মিতে তাদের ঘুম ও প্রশান্তির বিঘœ ঘটানোর প্রতিবাদে প্রচ-ভাবে ঘেউ ঘেউ করে প্রতিবাদ জানায়। ঐসব মতলববাজ টকশোর প্রবক্তাদের মুখে কখনওবা কোনদিনই বর্তমান সরকারের কোন একটি দেশ ও জাতির কল্যাণে সমাপ্ত বা সম্পাদিত উন্নয়নের বা কার্যক্রমের বিন্দুমাত্র প্রশংসা উচ্চারিত হয়নি বা হয় না। তাদের মূল টার্গেটই ধার্য করা থাকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের খুঁটিনাটি, ভুল-ভ্রান্তির কথা অবশ্যই সেটা তাদের বলার সুযোগ বা অধিকার আছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিশাল অর্জনে এসব মতলববাজ তখন মুখে কলুপ এঁটে নির্বোধ আহম্মকের ন্যায়, উল্টাপাল্টা যুক্তিতর্ক দ্বারা দর্শকদের মনোযোগ ও দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করে থাকে। এদের জীবন বৃত্তান্ত অতীব অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে হয়তবা পাকিস্তান-জামায়াত-শিবিরপন্থী পরিবার ও শিক্ষা-দীক্ষায় দীক্ষিত নয়ত বা কোনকিছুর বিনিময়ে প্রাপ্ত হয়ে, সত্যকে মিথ্যা প্রচারে দায়িত্বরত। ঐসব টকশোয় অংশগ্রহণকারীদের প্রতি অনেকেই কঠোর দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে তাদের বিরক্তকর ঘৃণা ও বিদ্বেষকে প্রকাশ করে থাকে। কখনও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের কাউকেও ঐসব টকশোর প্রবক্তাদের অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখেনি। তাহলে ড. কামাল হোসেন গং কোন্ গণতন্ত্রকে কোথা থেকে উদ্ধার করে জনগণকে কোন্ মোড়কে ফিরিয়ে দেবেন। সদ্য আত্মপ্রকাশকারী গণতন্ত্র ও জনগণের মালিকানা উদ্ধারের সংকল্প ঘোষণাদানকারী ঐসব বহুরূপী বহু চরিত্রের লেবাসধারীদের সম্পর্কে বাংলাদেশের জনগণ খুব ভালভাবেই অবগত ও সজাগ। বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যমান সংবিধানিক ধারা মোতাবেক, আওয়ামী লীগ সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে অধিষ্ঠিত থেকে দেশ পরিচালনা করবে। নির্বাচনকালীন এই সরকার কোন জাতীয় ও বৈদেশিক নীতি-নির্ধারণী কর্মসূচী গ্রহণ বা বাস্তবায়ন করবে না। সংবিধানের নির্ধারিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে মাত্র। সরকারের চলমান ও বিদ্যমান সকল ব্যবস্থাই তার নিজস্ব গতিতে চলমান থেকে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে। বাংলাদেশের প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটারগণ দেশের পরবর্তী সরকার নির্বাচন করবেন তাদের ইচ্ছা, পছন্দ ও বিবেক মোতাবেক। তাদের সে ইচ্ছা, বিবেক, পছন্দ ও বুদ্ধির সঠিক ও বাস্তবভাবে প্রয়োগ করে। পরবর্তী ভবিষ্যতের দেশ পরিচালনায় সক্ষম, সৎ ও নিষ্ঠাবান, দেশ পরিচালনায় পূর্ব ব্যাপক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দেশপ্রেমিক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্বের অধিকারীকেই নির্বাচিত করতে সহায়ক হিসেবে অনুপ্রেরণা যোগাবে। চলবে...
×