ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ওয়ানডে আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ওয়ানডে আজ

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ। মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে আজ অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ১টায় শুরু হবে ম্যাচ। এই ম্যাচটি শেষে মঙ্গলবার একই স্টেডিয়ামে, একই সময়ে দ্বিতীয় ওয়ানডেটিও হবে। এরপর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। এমন সময় খেলা হচ্ছে, দিবারাত্রিতে ম্যাচ হবে। আর এই সময়ে ম্যাচ মানেই শিশির নিয়ে দুইদলের মধ্যে রাজ্যের ভাবনা তৈরি হওয়া। থাকারই কথা। পরে ব্যাটিং করা দলের যে সুবিধা মিলে। যে দল আগে ব্যাটিং করে তারা বিপদেই থাকে। স্কোরবোর্ডে রান অনেক বেশি না জমা করতে পারলেই যে হারের সম্ভাবনা থাকে। শিশিরে যে বোলিং করা খুবই কঠিন। ব্যাটসম্যানদের জন্যই কৃত্রিম আলোতে সুবিধা বেশি থাকে। এই ভাবনা নিয়েই আজ দুই দলকেই প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামতে হচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে দাঁড়াতে চায়। দলের অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল যেমন বলেছেন, ‘আমরা এখন আর টেস্ট সিরিজের দিকে মনোযোগ রাখছি না। আমরা এখন সাদা বলের ক্রিকেটে মনোযোগী। ছেলেরা বেশ অনুপ্রাণিত এবং আত্মবিশ্বাসী আর আশা করছি আমরা সম্ভবপর সেরা ফল পাব। আমার মনে হয় বাংলাদেশকে হারানোর জন্য আমরা যথেষ্ট ভাল দল। আমরাও পূর্ণ শক্তির কাছাকাছিই আছি। খুবই রোমাঞ্চকর সিরিজ হবে।’ শিশির নিয়ে মনে হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যেই ভাবনা বেশি। তাইতো পাওয়েল বলেছেন, ‘এখানে এটা অনেক বড় বিষয়। আমি এখানে বিপিএল খেলে দেখেছি শিশিরের ভূমিকা। আমরা এটা বিবেচনায় রেখেই আজ (কাল) রাতে কিংবা কাল (আজ) সকালে সিদ্ধান্ত নেব।’ প্রস্তুতি ম্যাচে যে হাল দেখা গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের, তাতে ক্যারিবীয়দের সবদিক দিয়েই ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর তাতে বাংলাদেশেরই জেতার সম্ভাবনায় আছে। আবার খেলা বাংলাদেশের মাটিতে। এখানেতো অপ্রতিদ্বন্দ্বী দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তিনটি ম্যাচই জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে সাকিব, লিটন, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মুস্তাফিজ, মিরাজরা খেলেননি। এশিয়া কাপের পর আবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেই সেঞ্চুরি করা তামিম ও সৌম্যের সেঞ্চুরিতেই জিতে গেছে বিসিবি একাদশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৩১ রান করেও জিততে পারেনি। তাতেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের ব্যাটিং গভীরতা কতটা বেশি। সেরা দলই আছে বাংলাদেশের। শুরুটা এখন ভাল হলেই হয়। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও তাই বোঝাতে চেয়েছেন। বলেছেন, ‘প্রথম ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাসল পাওয়ার অনেক বেশি। এই ধরনের ফরমেটে একজন দুইজন কিন্তু গেইম চেইঞ্জ করে। এই জায়গাটায় ওদের কয়েকজন আছে এমন, ধ্বংস করতে পারে। আমাদের ওদের বিপক্ষে এই দিকটা খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ওদের জন্য ফরমেট যত ছোট হবে ততবেশি সুট করবে। আমার কাছে মনে হয় প্রথম ম্যাচের দিকে ফোকাস থাকাই বেটার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রস্তুতি ম্যাচে যেটা আত্মবিশ্বাস দরকার ছিল, যা যা দরকার ছিল করতে পেরেছে। এখন আসল কাজ শুরু কাল (আজ) থেকে। প্রথম ম্যাচটা আসলে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার পরেরটা পরে ভাবা যাবে।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এর আগে তিনবার ওয়ানডে সিরিজ জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে প্রথমবার সিরিজ জেতার সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশও করেছে বাংলাদেশ। সেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেই। এরপর ২০১২ সালে দেশের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে জিতেছে। এ বছর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে আবার ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮ বার ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। তিনবার জেতার বিপরীতে পাঁচবার হেরেছে। তবে সর্বশেষ সিরিজে বাংলাদেশেরই জয় হয়েছে। দুই দলের মধ্যকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সর্বশেষ সিরিজে এবং বাংলাদেশের মাটিতে সর্বশেষ সিরিজে বাংলাদেশই জিতেছে। বাংলাদেশের মাটিতে অবশ্য ২০১২ সালের পর দুই দলের মধ্যকার আর কোন ওয়ানডে সিরিজই হয়নি। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ এমন সময়ে বাংলাদেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে আসল, যখন দেশের মাটিতে ওয়ানডেতে ভয়ঙ্কর দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। টেস্টেই বাংলাদেশের বিপক্ষে কুলিয়ে উঠতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডেতে তাহলে কী হবে? ৩-০ কী সম্ভব? সেই প্রশ্ন উঠছে। অধিনায়ক মাশরাফি ২০০তম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামবেন আজ। বাংলাদেশের হয়ে ১৯৮তম ম্যাচ খেলবেন। আর এশিয়া একাদশের হয়ে খেলেছেন দুটি ম্যাচ। মাশরাফি মধুর সমস্যাতেই পড়েছেন। ওপেনিংয়ে কাকে ছেড়ে কাকে নামাবেন। তামিম ইকবাল আছেন। সঙ্গে শেষ পর্যন্ত লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকারকে পেছনে ফেলে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচের দুটিতেই সেঞ্চুরি করা ইমরুল কায়েসই ওপেনিংয়ে নামতে পারেন। এরপর সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ থাকছেন। সৌম্য অথবা লিটন থাকতে পারেন ছয় নম্বরে। আবার ওপেনিংয়ে এই দুইজনের একজনকে নামিয়ে ইমরুলকেও এই পজিশনে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ছয় নম্বরে সৌম্য, লিটন, ইমরুলের যে থাকবেন, সাত নম্বরে এই তিনজনেরই একজন থাকতে পারেন। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি, মুস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন থাকতে পারেন। ব্যাটসম্যান, স্পিনার ও পেসার মজবুত করেই নামবে বাংলাদেশ দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হোপ, হেটমায়ার, ব্রাভো, ব্রেথওয়েট, পাওয়েল, স্যামুয়েলসরা ব্যাটিংয়ে আর বোলিংয়ে রোচ, থোমাস, চেস, বিশুরা আতঙ্ক হয়ে ধরা দিতে পারেন। তাই সেরা একাদশ নিয়েই নামতে হবে বাংলাদেশকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ২৫টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। ৯টি ওয়ানডেতে জিতেছে বাংলাদেশ। হেরেছে ১৫টি ওয়ানডেতে। একটি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। তবে ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত যে বাংলাদেশ কখনই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ওয়ানডে জিততে পারেনি, এখন চিত্র পাল্টে গেছে। ২০০৯ সাল থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৭টি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। ৯টিতেই জিতে বাংলাদেশ। হারে ৮টিতে। বাংলাদেশেরই জেতার সংখ্যা বেশি। এবার যদি ৩-০তে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো যায় তাহলে জয় সংখ্যা হয়ে দাঁড়াবে ১২। সেই আশাই করছেন সবাই। ক্রিকেটাররাও সেই আশাতেই আছেন। এখন আজ প্রথম ওয়ানডেতেই জিতে যদি সিরিজে এগিয়ে যাওয়া যায় তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজ হারানো এবং হোয়াইটওয়াশ করার পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
×