ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষক বরখাস্ত, তাদের এমপিও বাতিল

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষক বরখাস্ত, তাদের এমপিও বাতিল

গাফফার খান চৌধুরী ॥ পিতামাতাকে অপমান করার কারণে অভিমানে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তিন শিক্ষকের এমপিও বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গবর্নিং বডি ভেঙ্গে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। অরিত্রীর পিতামাতাকে বরখাস্তকৃত তিন শিক্ষকের অপমান করার সূত্রধরেই আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তেই প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করার পরেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামেনি। তারা বুধবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভকারীরা শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের ন্যক্কারজনকভাবে অপমান অপদস্ত করার প্রবণতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবি করেছে। এদিকে অরিত্রীর আত্মহত্যার মামলায় তার শ্রেণী শিক্ষক হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিক্ষোভের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ক্লাস ও পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। বুধবারের না হওয়া পরীক্ষা আগামী শুক্রবার আর বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা আগামী ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। আগামী রবিবার থেকে যথারীতি ক্লাস চলবে। দুই একদিনের মধ্যেই নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হচ্ছে। এদিকে আত্মহত্যার ঘটনায় তিন শিক্ষককে অভিযুক্ত করে অরিত্রীর পিতার পল্টন মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলাটির তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তকারী সংস্থাকে আগামী বছরের ৯ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মহানগর হাকিম বিচারক সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী। অরিত্রীকে সমাধিস্থ করা হয়েছে। অরিত্রীর পিতা মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ॥ অরিত্রীর পিতা দিলীপ অধিকারী জনকণ্ঠকে বলেন, নবম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। অরিত্রী ইংলিশ ভার্সনের ছাত্রী ছিল। গত ২ ডিসেম্বর তার ইতিহাস পরীক্ষা ছিল। নিয়ম অমান্য করে সে স্কুলে মোবাইল নিয়েছিল। মোবাইলটি জব্দ করে শিক্ষকরা অরিত্রীকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেন। গত ৩ ডিসেম্বর সকালে পরীক্ষা দেয়ার জন্য স্কুলে যায় অরিত্রী। কিন্তু তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেননি শিক্ষকরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে ও তার স্ত্রীকে ডেকে পাঠান। ভাইস প্রিন্সিপাল অরিত্রী মোবাইল ফোনে নকল করেছে বলে জানান। আমরা শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চাই। শেষবারের মত ক্ষমা করতে পায়ে ধরে অনুরোধ করি। আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বের করে দেয়। মেয়েকে টিসি (ছাড়পত্র) দেয়ারও মৌখিক নির্দেশ দেয় শিক্ষকরা। যথারীতি বাসায় যাই। মেয়ে ও স্ত্রীকে বাসায় নামিয়ে দেই। বাসা থেকে স্ত্রী জানায় অরিত্রী রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। দরজা ভেঙ্গে অরিত্রীকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে। তিনি এই প্রতিবেদককে আরও বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। অপমানের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে, মেয়ে সহ্য করতে পারেনি। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এখনও মেয়েদের আন্দোলন করার যৌক্তিকতার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আবেগ। হয়তো আমার মতো অনেকের ক্ষেত্রেই এমন ঘটেছে, তাই আন্দোলন হচ্ছে। তবে আমি এমন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আর যেন কোন শিক্ষকের কারণে এমন ঘটনা না ঘটে, আমি তেমন উদ্যোগ দেখতে চাই। তবে এক মেয়েকে হারিয়ে দ্বিতীয় মেয়ে নিয়েও বিপদে আছি। কারণ সে আর ওই স্কুলে পড়তে চাচ্ছে না। অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করার নির্দেশ ॥ বুধবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তুলে ধরেন। মন্ত্রী বলেন, অরিত্রীর আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী হিসেবে প্রাথমিক তদন্তেই ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার শিফট ইনচার্জ জিনাত আক্তার ও শ্রেণী শিক্ষক হাসনা হেনার দোষ প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য তাদের তদন্ত কমিটি বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রসঙ্গত, অরিত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক অধ্যাপক মোঃ ইউসুফকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) শাখায়েত হোসেন এবং ঢাকা জেলার শিক্ষা অফিসার বেনজীর আহমদ। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। অরিত্রীর পিতামাতাকে অভিযুক্ত তিন শিক্ষক ভয়ভীতি পর্যন্ত দেখিয়েছেন। তাদের সঙ্গে নির্মম ও নির্দয় আচরণ করেন শিক্ষকরা। যা অরিত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। এর দায় অভিযুক্ত তিন শিক্ষক এড়াতে পারেন না। এই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গবর্নিং বডিকে নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিন শিক্ষকের এমপিও বাতিল করা হয়েছে। গবর্নিং বডিও ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। প্রয়োজনে স্কুলের গবর্নিং বডি ভেঙ্গে দেয়া হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, বহুদিন ধরে ওখানে অধ্যক্ষ নেই। একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেয়া হয়েছে। বারবার তাগিদ দেয়া সত্তে¡ও নিয়ম অনুসরণ করে তারা অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়নি। এটাও একটা বড় ধরনের অনিয়ম। এছাড়া দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ বহু পুরনো। নিয়মের বাইরে তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করে। স্কুলের জন্য একটা সংখ্যা নির্ধারিত আছে। স্কুলটিতে শিক্ষার্থীকে ভর্তি করতে ১০ লাখ টাকা লাগার অভিযোগ আছে। সেটা বন্ধ করার জন্য লটারি সিস্টেম চালু করি। দেখা গেছে, ভর্তির যে অনুমতি আছে, এর চেয়ে অনেক শিক্ষার্থী বেশি ভর্তি করে ফেলে। এটা আরও বড় অনিয়ম। তারা ইচ্ছেমত শাখা খুলে। কোন শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা যাবে না। এটা অপরাধ। যারা এসব করবেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে এক মাসের মধ্যে ভিকারুননিসার অনিয়ম যাচাই করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করবেন। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য সহায়ক হয়েছে। নির্দেশ পালনের কাজ চলছে। দুই একদিনের মধ্যেই কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের একটি কপি এ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জমা দেয়া হবে। ছাত্রীদের বিক্ষোভ অব্যাহত ॥ বুধবারও এমন ঘটনার জেরে সকাল থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধসহ ৬ দফা দাবিতে ফের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয়ার পরেও সেই বিক্ষোভ থামেনি। দাবিগুলো হচ্ছে, অভিযুক্ত শিক্ষকদের পদত্যাগ করতে হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভিকারুননিসা স্কুলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। কথায় কথায় টিসির ভয় দেখানো যাবে না। মানসিক সুস্থতার জন্য শিক্ষকদের মানসিক চিকিৎসক দিয়ে কাউন্সিলিং করতে হবে। গবর্নিং বডির সবাইকে অপসারণ করতে হবে। অরিত্রী মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা ডিবিতে ॥ অরিত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় তার পিতা দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে আসামি করা হয়েছে। বুধবার রাত ১১টার দিকে উত্তরা এলাকা থেকে অন্যতম আসামি অরিত্রীর শ্রেণী শিক্ষক হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করা হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। গ্রেফতারের পর রাতে ওই শিক্ষককে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। ৯ জানুয়ারি তিন শিক্ষকের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছে আদালত ॥ অরিত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজের বেইলী রোড শাখার তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় আগামী ৯ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী পল্টন থানায় অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর করা মামলা গ্রহণ করে এই তারিখ দেন। মামলায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান শিক্ষক জিন্নাত আরা এবং শ্রেণী শিক্ষক হাসনা হেনাকে আসামি করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩০৫ ধারায় করা এই মামলায় সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। এ ধারায় সর্বনিম্ন শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড ও সেই সঙ্গে অর্থদণ্ড। তা ছাড়া আসামি বা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণিত হলে আসামিদের যাবজ্জীবন করাদণ্ড দেয়ার বিধান আছে। অরিত্রীকে সমাধিস্থ করা হয়েছে ॥ অরিত্রীর পিতা দিলীপ অধিকারী জনকণ্ঠকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে খিলগাঁও বৌদ্ধ মন্দিরের কাছের কালিবাড়ি মন্দিরের শ্মশানে অরিত্রীর মৃত্যু পরবর্তী ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন শেষ করা হয়। অরিত্রী কিশোরী বিধায় তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে। গ্রামের বাড়ি বরগুনা শহরে এবং ঢাকার নিজ বাসায় অন্যান্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে বলেও তিনি জানান। হাইকোর্টের নির্দেশ ॥ অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনা মঙ্গলবার হাইকোর্টের নজরে আসে। এরপর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পাওয়ার পর এক মাসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটিতে আরও থাকবেন একজন মনোবিদ, একজন আইনজ্ঞ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি ও একজন শিক্ষাবিদ। এছাড়াও আত্মহত্যার ঘটনা রোধে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ৫ সদস্যের একটি জাতীয় কাউন্সিলিং কমিটি গঠন এবং একটি নীতিমালা নির্ধারণে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অনিক আর হক, আনুনন নাহার সিদ্দিকা। অনিক আর হক বলেন, এ ধরনের ঘটনা দেশে প্রতিনিয়ত ঘটছে। তাই শিক্ষার্থীদের বয়ঃসন্ধিকালে তাদের কাউন্সিলিং এবং শিক্ষকদের কাউন্সিলিংয়ের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন করে কাউন্সিলর নিয়োগের পদ তৈরি এবং নিয়োগের বিষয়গুলো তুলে ধরে একটি নীতিমালা তৈরি করার প্রয়োজন।
×