ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় যাওয়া হলো না ৩০ হাজারের বেশি কর্মীর

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 মালয়েশিয়ায় যাওয়া হলো না ৩০ হাজারের বেশি কর্মীর

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়া যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মীর ভাগ্য অনিশ্চিত। এই কর্মীদের মালয়েশিয়ার সরকার ৩০ নবেম্বরের মধ্যে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট তাদের মালয়েশিয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠাতে পারেনি। এদিকে, মালয়েশিয়া সরকার হঠাৎ করে বিদেশী কর্মী নিয়োগে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে অনীহা প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশ, নেপালসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে নতুন করে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেছে। দেশটির সরকার অবৈধ কর্মীদের সমস্যা দূর করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। দেশ থেকে অবৈধ কর্মী সমস্যা দূর না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কর্মী নিয়োগ দেবে না। এ কারণে প্রতিনিয়ত অবৈধ কর্মী আটকের জন্য পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মী পাঠাতে না পারলে চাহিদাপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। অপেক্ষায় থাকা ৩০ হাজারের বেশি কর্মীর চাহিদাপত্র মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ ৩০ নবেম্বর বাতিল করে দিয়েছে। এখন তারা আর মালয়েশিয়া যেতে পারবেন না। তাদের এক এক জনের কাছ থেকে চার থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে সিন্ডিকেট অনেক আগেই নিয়েছে। এখন তারা দেশটিতে যেতে না পারলে সিন্ডিকেটের হাত থেকে টাকাও তুলে নিতে পারবেন না। বেঁধে দেয়া সময়ও শেষ হয়েছে ৩০ নবেম্বর মধ্য রাতে। মালয়েশিয়ার এজেন্ট, অপেক্ষমাণ কর্মী, ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সি ও মধ্যস্বত্বভোগীসহ অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। যদিও অপেক্ষমাণ কর্মীরা দ্রুত দেশটিতে যেতে পারবেন বলে ১০ সদস্যের সিন্ডিকেট দাবি করেছে। দশ সদস্যের সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। এসব কর্মীর নামে কলিং ও মেডিক্যালসহ সবকিছুই সম্পন্ন হয়েছে। তারপরও যেতে পারছেন না। ঢাকায় মালয়েশিয়ার হাইকমিশন থেকে ঠিকমতো স্ট্যাম্পিং দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। ১৫-১৬ নবেম্বর থেকে স্ট্যাম্পিং বন্ধ রেখেছে মালয়েশিয়া হাইকমিশন। পাসপোর্টও জমা নিচ্ছে না। কি কারণে তারা জমা নেয়া বন্ধ করেছে তাও জানায়নি। তবে নতুন করে যদি মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে সময় বাড়িয়ে না নেয়া যায় তাহলে এসব কর্মীর যাওয়া অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে সিন্ডিকেট জানিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৩০ হাজার কর্মী যাতে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেন তার জন্য মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা যেন জরুরী ভিত্তিতে ‘স্পেশাল সেল’ খোলে। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে বলা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর অতিরিক্ত সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলাম বলেছেন, যাদের কলিং হয়েছে এবং ভিসা স্ট্যাম্পিং হয়েছে তারা মালয়েশিয়ায় নিয়োগ পাবেন। কয়েক দিনের মধ্যে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। উচ্চপর্যায়ের ওই বৈঠকে দুই দেশের কর্মকর্তারা এবার অল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী নিয়োগের ওপর বেশি গুরুত্ব দেবে। এছাড়া সব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করা ও এজেন্সিগুলোর মানসম্পন্ন ট্রেনিং সেন্টার থাকা ছাড়াও কর্মী সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এদিকে, মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ দেশ থেকে অবৈধ কর্মী দূর করার জন্য নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলসেগারান বলেছেন, বর্তমানে অবৈধ বিদেশী কর্মীদের বিষয়ে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে কবে নাগাদ তারা কর্মী নিয়োগ চালু করবে তা ঠিক হয়নি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং হংকংয়ের মতো দেশ যখন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে তখন তাদের শর্ত দেয়া হয়েছে, কর্মী প্রেরণ করতে ইচ্ছুক দেশগুলোর সরকার তাদের অবৈধ কর্মীদের ফিরিয়ে নিতে কঠোর অবস্থান নেবে। কিন্তু কয়েকটি দেশ এই শর্ত মানছে না। তিনি বলেন, আমরা যা বলছি তা খুবই সহজ, যদি আপনি আমার দেশে কর্মী পাঠাতে চান তাহলে অবৈধ কর্মীদের ফেরত নেন।’
×