ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকারের তাগিদ

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা চাই

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা চাই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে না পারলে দেশে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, সব সরকারের লক্ষ্যই দেশের উন্নয়ন। কিন্তু এই উন্নয়ন টেকসই করতে চাইলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করতে হবে। বুধবার ‘নির্বাচনী ইশতেহারে জলবায়ু পরিবর্তন : প্রেক্ষিত ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব দারিদ্র্য দূরীকরণের সকল উদ্যোগ এবং নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে। যা পরবর্তী সরকার কিংবা আন্তর্জাতিক পরিম-লে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক দেন-দরবার করতে সহায়ক হবে। এটি না হলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির মাত্রা বাড়বে, বাড়বে দারিদ্র্য। রাজধানীর ঢাকা ডেইলি স্টার সেন্টারে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এবং নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশ (এনসিসিবি)’র যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারসমূহ বিশ্লেষণ করে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কর্মরত ৪২ সংগঠনের জোট বাংলাদেশ ক্লাইমেট এ্যাকশন ফোরামের পক্ষে এনসিসি’বি এর সমন্বয়ক মিজানুর রহমান বিজয় একটি ধারণাপত্র তুলে ধরেন। ধারণাপত্রে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় যুক্ত করে অঙ্গীকার করার আহ্বান জানান। সুপরিশগুলো হলো : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ), বিসিসিএসএপি ও ‘ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন’ (এনডিসি) এর সমন^য়ে একটি ‘জাতীয় জলবায়ু নীতিমালা’ প্রণয়ন করা; জলবায়ু অর্থায়ন একটি তহবিল থেকে পরিচালনার লক্ষ্যে এবং জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে অবিলম্বে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০’ সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জলবায়ু কমিশন গঠন করা; গণঅংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে অবিলম্বে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) প্রণয়ন করা; ন্যাপ প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত কারিগরি উপদেষ্টা বোর্ড-এ জাতীয় পর্যায়ে কর্মরত এনজিও ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব এবং ‘জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি’ গঠনকালে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ আসন এনজিও ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের জন্য বরাদ্দ রাখা; ন্যাপ বাস্তবায়নে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের হাত থেকে সর্বাধিক বিপন্ন মানুষদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ‘সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনি’ গড়ে তোলার মাধ্যমে বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা’; জলবায়ু অর্থায়নে উন্নয়ন বাজেটের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করা; লস এ্যান্ড ড্যামেজ মোকাবেলায় অবিলম্বে একটি জাতীয় কাঠামো প্রণয়ন করা; জলবায়ু অর্থায়ন ও তার ব্যবহারে সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণ ও শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে; ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশকে অর্থায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ উন্নত দেশসমূহের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনে নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ সেন্টার ফর এ্যাডভান্সড স্টাডিজ-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন শুধু আমাদের সমস্যা না। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক কিছু করার আছে। দলগুলো যাতে এই আন্তর্জাতিক যুদ্ধে যুক্ত হয় সে কারণে তাদের দলিলে এই বিষয়গুলো রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলা একা করতে পারব না। তাই সরকারকে তার নিজের অঙ্গীকারের মাধ্যমে হাত শক্তিশালী করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে অবশ্যই জাতীয় ঐকমত্য থাকতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচন দেশের প্রধান সমস্যা। তাই দারিদ্র্য যাতে বৃদ্ধি না পায় সেজন্য জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করতে হবে। তাই রাজনৈতিক ইশতেহারে জলবায়ু ও পরিবেশের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে। সরকার ও বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি প্রয়োজন, অভিযোজন নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত পৃথক মন্ত্রণালয় থাকা দরকার। যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেন-দরবার করতে সহযোগিতা করবে।’ এ বিষয়ে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, রাজনৈতিক দলে জলবায়ু বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ থাকা উচিত। উন্নয়ন সম্ভব হবে না জলবায়ু বিষয় না ভাবলে। আমরা একের পর এক দুর্যোগ পাচ্ছি, যার ফলে উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো যে উন্নয়নের অঙ্গীকার করবে তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা না করে সম্ভব না। এসডিজি বাস্তবায়ন হবে না যদি আমরা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কাজ না করি। এ কারণে একটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজন। এবং ওই মন্ত্রণালয়কে শক্তিশালী একটি কাঠামো, বাজেট ও জনবল দিতে হবে। এজন্য আমাদের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ইশতেহারে এ বিষয়গুলো আসলেই যে বাস্তবায়ন হবে তা না, তবে এটি আসলে রাজনৈতিক দলগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে।’ মিজানুর রহমান বিজয় তার ধারণাপত্রে বলেন, বাংলাদেশ আর্থিক সক্ষমতার মানদ-ে এখনও কাক্সিক্ষত স্তরে পৌঁছাতে না পারায় এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন করতে না পারায় আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থ আদায় করতে পারছে না। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও সরকারকে তৎপর হতে হবে। আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনে (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম টিপু, বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান, বাপার মিহির বিশ্বাস ও উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের আমিনুর রসুল।
×