ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য;###;নুরুল আমিন

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ ভেজাল ওষুধ

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ ভেজাল ওষুধ

এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, ভেজাল ওষুধের রমরমা বাণিজ্য কিছুতেই কমছে না। বরং তা দিন দিন বেড়েই চলছে। মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও নিম্নমানের ওষুধে সয়লাব হয়ে উঠেছে বাজার। মানহীন এসব ওষুধ কিনে মানুষ প্রতারিত হয় এবং এসব ওষুধ সেবন করে রোগী রোগমুক্তির পরিবর্তে আরও রোগাক্রান্ত হয়। ভোগান্তির শিকার হয়। এমন কী ভেজাল ওষুধের কারণে অকালে থেমে যায় জীবনের স্নিগ্ধ সমীরণ। যা কখনও মেনে নেয়ার মতো নয়। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম অঞ্চলের ফার্মেসিগুলোতে দিব্যি বিক্রি হচ্ছে ভেজাল ওষুধ। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা এ ওষুধগুলো বাজারজাত করে। ভালমানের কোন ব্র্যান্ডের ওষুধের লেবেল হুবহু নকল করা হয়। অনেক অসাধু বিক্রেতা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ পরিবর্তন করে ভেজাল ওষুধ দিয়ে থাকেন। এতে রোগ ভাল হয় না। বরং জটিলতা বাড়ে। ডাক্তারেরও দুর্নাম হয়। কিন্তু নগদ অর্থ লাভ হয় বিক্রেতার। অধিকাংশ ফার্মেসির লাইসেন্স নেই এবং ওষুধ বিক্রেতার প্রশিক্ষণ নেই। শিক্ষিত বেকাররা ফার্মেসি খুলে বসে এবং এরা ওষুধ বেচতে বেচতে ডাক্তার হয়ে ওঠে। ভেজাল ও নকল ওষুধে লাভ বেশি বিধায় এগুলো বিক্রির প্রতি এদের আগ্রহ রয়েছে। রোগ ও ওষুধ সম্পর্কে এদের তেমন ধারণা না থাকলেও লাভের অঙ্কটা বোঝে ঠিকমতো। যা কখনও সুখকর নয়। দিন দিন ভেজাল ওষুধ বাণিজ্য বেপরোয়া হয়ে ওঠছে। জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। দেখার যেন কেউ নেই। কোন প্রতিকার নেই, প্রতিরোধ নেই। মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হলেও কাজের কাজ তেমন কিছুই হয় না। কিছু কিছু চিকিৎসক রয়েছেন যারা অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপত্রে ভুঁইফোড় কোম্পানির মানহীন ওষুধ লিখে থাকেন। যা খুব হতাশাজনক। মিটফোর্ড এলাকায় ওষুধ তৈরির সবধরনের কাঁচামাল পাওয়া যায় এবং এখানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ডাম্পিং করার ব্যবস্থা আছে। নকলবাজরা এখান থেকে কাঁচামাল কিনে ভেজাল ওষুধ তৈরি করে। মিটফোর্ডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরির কারখানা রয়েছে। এগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ না নেয়ার কারণ রহস্যজনক। এছাড়া কোন ওষুধ তৈরির পর সেটি বাজারজাত করার আগে ওষুধটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ব্যবস্থা গ্রহণ না করাও উদ্বেগজনক। ভেজাল ওষুধ রোধে কোন ধরনের অবহেলা কাম্য নয়। ভেজাল ওষুধ বন্ধ করতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। যেমন -ফার্মসিগুলোকে নজরদারির আওতায় আনতে হবে, লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি বন্ধ বা সিলগালা করতে, ওষুধ বিক্রেতার প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, নিয়মিত বাজার তদারকি করতে হবে, ভেজাল ওষুধবিরোধী অভিযান ঘনঘন দিতে হবে, বিশেষ অনুমতি ব্যতীত যার তার কাছে ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি বন্ধ করতে হবে, ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করণ বন্ধ করতে হবে, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে ইত্যাদি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেজাল ওষুধ রোধে জনস্বার্থে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন আশা করি। লালমোহন, ভোলা থেকে
×