ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শচীন দেববর্মণ সঙ্গীত উৎসব শুরু

কেন এমন হয় তুমি আর নেই সে তুমি...

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

কেন এমন হয় তুমি আর নেই সে তুমি...

মোরসালিন মিজান ॥ শুধুই শচীন দেববর্মণের গান। কালজয়ী গান নিয়ে তিন দিনের উৎসব। যে কোন বিবেচনায় আয়োজনটি চমৎকার। উপভোগ্য। গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ এই উৎসবের আয়োজন করে আসছে সাংস্কৃতিক সংগঠন বহ্নিশিখা। আর শুক্রবার থেকে শুরু হলো পঞ্চম আসরের। জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে দারুণ ‘গুন গুন গুন’ করে চলেছেন শচীন কর্তা। বাংলাদেশের শিল্পীরা একক ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করছেন। ভারত থেকেও এসেছেন স্বনামধন্য কয়েকজন। তাতেই মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতা। এই গান পুরনো হয় না। হৃদয়ের তন্ত্রীতে নতুনের মতোই বাজে। বাজে যে, সেটা উৎসবের প্রথম দিনেই বেশ বোঝা গেল। উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় মূল আয়োজন। নৃত্যের পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরা। প্রথমেই সম্মেলক গান। আয়োজক সংগঠনের শিল্পীরা একই রকম পোশাক পরে মঞ্চে আসেন। তাদের কণ্ঠে ছিল: জানি না জানি না কেন এমনও হয়/তুমি আর নেই সে তুমি...। চিরকালের এই গানের সঙ্গে কেমন যেন একটা হাহাকার বেজে ওঠে। পরের গানটি সবসময়ই মুখে মুখে ফেরে। হ্যাঁ, ‘নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক/পায়েলখানি বাজে/মাদল বাজে সেই সংকেতে/শ্যামা মেয়ে নাচে...।’ বারবার শোনা গানটি শুনে একরকম দোলে ওঠে মিলনায়তন। তবে বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন চন্দনা মজুমদার। খ্যাতিমান শিল্পীর কণ্ঠে শচীন দেব শুনে সত্যি মন ভরে যায়। অন্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন তানসেন রহমান ও সন্দীপন। ভারতের আসাম থেকে এসেছিলেন মঞ্জুশ্রী দাস ও বিধান লস্কর। এ দুই শিল্পীও চমৎকার গান করেন। মুগ্ধ হয়ে তাদের গান শুনেন শ্রোতা। আসামের শিলচর থেকে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন মঞ্জুশ্রী দাস ও বিধান লস্কর। শচীন কর্তার গানের চমৎকার দুই কণ্ঠ। একক ও যুগল কণ্ঠে কয়েকটি জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন তারা। যেটুকু পরিবেশনা, দারুণ উপভোগ করেছেন শ্রোতা। অনুষ্ঠান শুরুর প্রাক্কালে ব্যাকস্টেজে কথা হচ্ছিল মঞ্জুশ্রী দাসের সঙ্গে। এই প্রজন্মের গায়িকা বলছিলেন, আমাদের কাছে শচীন দেববর্মণ অনেক বড় শিল্পী। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে ভীষণই জনপ্রিয়। অল্প পমিাণে হলেও, তাঁর গানের চর্চা হয় গোটা ভারতবর্ষেই। আমাদের করিমগঞ্জ শিলচরের কথা যদি বলি, উনার গান নিয়ে অনেক অনুষ্ঠান হয়। শিল্পীদের কেউ নিয়মিতভাবে শচীন দেবের গান করেন। কেউ কেউ দুটি একটি করে হলেও গান। নিজের গাওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলছিলেন, এই গানগুলো গাওয়া অতো সহজ নয়। শোনার সময় মনে হতে পারে জলের মতো সহজ। আসলে তা নয়। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, শচীন দেববর্মণ লোকসঙ্গীত করেছেন বটে। সেইসঙ্গে ক্লাসিক্যালের চমৎকার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। গানগুলো তাই ইউনিক। সঠিকভাবে না শিখলে কেউ গাইতে পারবে না। দুই বাংলায়ই শচীন দেবের গানের চর্চা হচ্ছে। কোন অংশের কী বৈশিষ্ট্য? আলাদা কিছু চোখে পড়ে কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেমন কোন পার্থক্য আমার চোখে পড়ে না। কেউ গাওয়ার সময় একটু বেশি কাজ করছেন। কেউ হয়ত কাজ না করেই গাইলো। কিন্তু মন প্রাণ দিয়ে যে গানটি গাওয়া হয় সেটিই হচ্ছে আসল গান বলে মন্তব্য করেন তিনি। একই দিন আসাম থেকে আসা সৌমিত্র শংকর ও তার দলের নৃত্য পরিবেশনা উৎসবের আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। এর আগে শচীন দেববর্মণ সঙ্গীত উৎসবের আয়োজন সম্পর্কে উৎসব আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ বলেন, লোকসঙ্গীত আমাদের প্রাণের সঙ্গীত। এই ধারার সঙ্গীতে সাধারন মানুষের হাসি কান্না আনন্দ বেদনা লড়াই সংগ্রামের প্রকাশ ঘটে। আর এ লোকসঙ্গীতের প্রবাধ পুরুষ শচীন দেববর্মণ। কিংবদন্তি শিল্পীর জন্মভূমি কিন্তু বাংলাদেশ। এ জায়গা থেকে দেখলে ভাললাগাটা আরও বেড়ে যায়। একই কারণে আমরা বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে তাঁর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন করেছিলাম। তারই বর্তমান রূপ শচীন দেববর্মণ সঙ্গীত উৎসব। তিন দিনের উৎসব রবিবার পর্যন্ত চলবে বলে জানান তিনি।
×