ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাম ঝরানো জয়ে ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২১ নভেম্বর ২০১৮

 ঘাম ঝরানো জয়ে ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস

রুমেল খান ॥ প্রথমবারের মতো খেলতে এসেই ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনালে নাম লিখিয়ে তাক লাগিয়ে দিল বসুন্ধরা কিংস। তবে এ জন্য অনেক স্নায়ুক্ষয় এবং বিস্তর ঘাম ঝরাতে হয়েছে তাদের। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তারা প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় ১-০ গোলে হারায় একবারের শিরোপাধারী শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র লিমিটেডকে। ম্যাচের প্রথমার্ধে কোন দলই গোল করতে পারেনি। আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিত ৩০তম আসরের এই ফাইনালে নবাগত বসুন্ধরার প্রতিপক্ষ দশবারের ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। নির্ধারিত ৯০ মিনিটেও ম্যাচের নিষ্পত্তি না হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তারপর ১১৮ মিনিটে আচমকাই গোল করে বসে বসুন্ধরা। তাদের বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকান ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কলিনড্রেস প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে জোরালো গড়ানো শট নেন বেঙ্গল ব্লুজখ্যাত রাসেলের বক্সে। সেই বল রাসেলের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা ঠিকমতো ধরতে পারেননি। তখন সেই বল জালে জড়িয়ে দেন বদলি ফরোয়ার্ড তৌহিদুল আলম সবুজ (১-০)। একটু পরেই রেফারি জালালউদ্দিন খেলা শেষের বাঁশি বাজালে জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে বসুন্ধরা কিংস। আর হতাশা নেমে আসে রাসেল শিবিরে। ২০১২ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো আবারও ফাইনালে খেলার স্বপ্নটা ধূলিসাৎ হয়ে যায় তাদের। ম্যাচের শুরু থেকে ড্রাম বাজিয়ে গ্যালারি মাতিয়ে রাখে বসুন্ধরা কিংসের সমর্থকরা। সে তুলনায় রাসেলের সমর্থক বলতে গেলে ছিলই না। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরার সমর্থকরা নানা সেøাগান দিয়ে সমানতালে উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন। তাদের এই সপ্রতিভ-আবেগী সমর্থন বৃথা যায়নি। ম্যাচের আগেই জানা গিয়েছিল রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেসকে কড়া মার্কিং করে খেলবে শেখ রাসেল। কোচ সাইফুল বারী টিটুর কোচিং দর্শনটা বরাবরই এরকম। মাঠে সেটাই হয়েছে। এতে যথেষ্ট ভুগেছে শক্তিশালী-ফেবারিট দল বসুন্ধরা। তারা আক্রমণ করতে গেলেই বক্সের ভেতর জটলা সৃষ্টি করেছে রাসেলের খেলোয়াড়রা। ফলে জায়গা বানিয়ে খেলতে পারেনি বা শটগুলোর বেশিরভাগই ‘ছক্কা’ হয়ে গেছে বসুন্ধরার। বসুন্ধরা ‘ডি’ গ্রুপে মোহামেডানকে ৫-২ গোলে হারায়। এছাড়া শেখ জামাল ধানম-ি এবং নোফেল স্পোর্টিংয়ের সঙ্গে ড্র করে ১-১ গোলে। গ্রুপসেরা হয়ে নাম লেখায় কোয়ার্টার ফাইনালে। সেখানে তারা ৫-১ গোলে উড়িয়ে দেয় টিম বিজেএমসিকে। রাসেল ‘সি’ গ্রুপে তারা ২-০ গোলে মুক্তিযোদ্ধাকে এবং গত আসরের শিরোপাধারী ঢাকা আবাহনীকে ১-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে কোয়ার্টারে ওঠে। সেখানে তারা গত আসরের রানার্সআপ চট্টগ্রাম আবাহনীকে ১-০ গোলে হারিয়ে নাম লেখায় শেষ চারে। মঙ্গলবারের ম্যাচে বসুন্ধরা কিছুটা খর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামে। কারণ জাতীয় দলের ব্যস্ততায় কিরগিজস্তানের মিডফিল্ডার বখতিয়ারকে তারা পায়নি। ইনজুরির কারণে খেলেননি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্কোস ভিনিসিয়াসও। মজার ব্যাপারÑ এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত রাসেল ছিল একমাত্র দল, যারা কোন গোল হজম করেনি। ম্যাচে তারা একটি গোল হজম করে এবং ওই এক গোলেই বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় তাদের। দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে। রাসেল ভাল করেই জানতো কলিনড্রেসকে বোতলবন্দী করতে পারলেই বসুন্ধরাকে হারানো যাবে। সেই পরিকল্পনায় প্রায় সফলই হয়ে গিয়েছিল তারা। কড়া মার্কিংয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে কলিনড্রেসকে বল পেতে অনেক সময় অনেকটা নিচে নেমেও খেলতে দেখা গেছে। তারপরও শেষরক্ষা করতে পারেনি রাসেল। সেই কলিনড্রেসই সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ান রাসেলের জন্য। তার এ্যাসিস্ট থেকেই জয়সূচক গোলটি পেয়ে যায় বসুন্ধরা। এর আগে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের লড়াইটি সমতায় শেষ হয়। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। যখনই মনে হচ্ছিল ম্যাচ গড়াবে টাইব্রেকার নামের ভাগ্যপরীক্ষায়, তখনই ১১৮ মিনিটে সবুজের সেই পরম কাক্সিক্ষত গোলে নাটকীয়ভাবে ফাইনালের টিকেট পায় স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজেনের শিষ্যরা। আর জয়ের নায়কে পরিণত হন সবুজ। আর পার্শ্বনায়ক কলিনড্রেস।
×