ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও বেতনের আওতায় মহিলা ফুটবলাররা

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২১ নভেম্বর ২০১৮

 আবারও বেতনের আওতায় মহিলা ফুটবলাররা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ লুকোচুরির অভ্যাসটা এখনও গেল না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে)। বছরখানেক আগে জাতীয় দলের (বয়সভিত্তিক দলগুলোসহ) মহিলা ফুটবলারদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল বাফুফে। চুক্তি অনুযায়ী খেলোয়াড়রা বেতনের আওতায় এসেছিল। তবে তাদের মাসিক কত টাকা করে দেয়া হচ্ছে সেটা গোপন রেখেছিল দেশীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। চুক্তিতে বিস্তারিত কি আছে সেটাও পরিষ্কার করে জানতে দেয়া হয়নি মেয়েদের। এমনকি চুক্তির মূল কপি বাফুফের কাছে গচ্ছিত থাকলেও সেটার কোন অনুলিপি কোন মেয়েকেই বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। এক বছর পর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। অথচ বেশিরভাগ ফুটবলারই চুক্তি অনুযায়ী পুরো টাকা বুঝে পাননি এখনও। বাফুফের একটি সূত্র থেকে জানা গেছেÑ এখনও চার মাসের মতো বকেয়া আছে মেয়েদের। ফলে শুরু থেকেই মেয়েরা ছিল অনেকটা অন্ধকারে। আছে এখনও। এই যেমন মঙ্গলবার ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন (মহিলা ফুটবলের নতুন পৃষ্ঠপোষক ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর) ডেকে বাফুফে জানালো আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে আবারও নতুন করে বেতনের আওতায় আনা হচ্ছে নারী ফুটবলারদের। ৪৫ ফুটবলারকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে বেতন দেয়া হবে। এছাড়া তাদের দেয়া হবে শিক্ষা, খাদ্য এবং পোশাক খরচও। এত তথ্য দেয়া হলো অথচ বাফুফে একবারও জানাতে রাজি হয়নি মেয়েদের কত টাকা করে বেতন দেয়া হবে। ফলে তাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রমের ধরন নিয়ে রহস্য ও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে টাকার অঙ্কই যদি না জানানো হয় আর সেটা যদি গোপন রাখা হয় তাহলে খামোখা প্রেস কনফারেন্স ডেকে কি লাভ? তাছাড়া প্রশ্ন উঠেছেÑ আবারও কেন বাফুফের এই লুকোচুরি? অতীতের মতো আবারও বকেয়া থাকবে না তো মেয়েদের বেতন? অতীতের এসব বঞ্চনা-ধোঁয়াশার কারণেই কি মঙ্গলবারের প্রেসমিটে আসা নারী ফুটবলারদের মোটেও সপ্রতিভ মনে হয়নি? নতুন করে বেতনের আওতায় এসে কোথায় তাদের চেহারায় ফুটে উঠবে উৎফুল্লভাব, তা না, উল্টো তাদের প্রত্যেকের চেহারায় যেন ছিল বিষণœতা এবং অজানা শঙ্কার ছায়া। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় দলের মহিলা ফুটবলারদের জন্য চার বছর মেয়াদী এক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সেটা ছিল ৫০ ফুটবলারকে নিয়ে আবাসিক ক্যাম্প হবে। এ জন্য প্রতি বছর তিন কোটি টাকা করে চার বছর ব্যয় হবে ১২ কোটি টাকা। বছরে ১০-১৫টি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলবে মেয়েরা এবং ২০১৮ থেকে আবারও শুরু হবে মেয়েদের ক্লাব লীগ। এই বছরের ডিসেম্বর আসতে আর বেশি বাকি নেই। হিসেব মেলাতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে বাফুফের ক্যাম্পে ৫০ নয়, আছে ৪৫ ফুটবলার। এই এক বছরে বাফুফে মেয়েদের পেছনে কত খরচ করেছে, সেটা তারা প্রকাশ করেনি। জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দল মিলে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছিই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। তবে ২০১৮ সালে পেশাদার বা ঘরোয়া ক্লাব ফুটবল লীগ অনুষ্ঠিত হয়নি। হওয়ার কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বেতনভুক্ত হলেন আপনারা। কেমন লাগছে? এই প্রশ্নের উত্তরে দীর্ঘশ্বাস নিলেন এক ফুটবলার। একটু পর বললেন, ‘বেতনটা যেন নিয়মিত পাই। তাহলেই খুশি।’ বাংলাদেশের ফুটবল মানেই এখন মেয়েদের ফুটবল। গত চার বছরে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক আসরে এ পর্যন্ত তারা জিতেছে আটটি শিরোপা। অথচ এই নারী ফুটবলারদের প্রায় শতভাগই এসেছে একেবারে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। ফুটবল খেলে বাফুফে থেকে যা পান তার পুরোটাই তারা তুলে দেন পরিবারের হাতে। কিন্তু এই যৎসামান্য টাকা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। কোন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবর্ধনা দিয়ে মেয়েদের হাতে চেক তুলে দিয়েছেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছিল মেয়েদের সাহায্যে। কিন্তু মাসিক কোন বেতন তারা পাননি। দুই বছর আগে বেতন চালু করেও আট মাস দিয়ে বাকি চার মাস আর দেয়নি বাফুফে। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনও, ‘জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে ক্যাটাগরিভিত্তিক মেয়েদের বেতন দেয়া হবে। যাতে তারা খেলাধুলায় মনোযোগ দিতে পারে। শুধু তাই নয়, তাদের জন্য পড়ালেখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিন বিষয়ের শিক্ষক এসেছেন। সামনে আরও নেয়া হবে। তারা কঠোর পরিশ্রম করে, সে জন্য ভালমানের খাদ্যের প্রয়োজন। আমরা সেটারও ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে পোশাকও দেয়া হবে।’ সংবাদ সম্মেলনের রুমে থাকা মেয়েরাও শুনলেন বাফুফে সভাপতির প্রতিশ্রুতির কথা। নতুন করে বেতনভুক্ত হওয়ায় তারাও রোমাঞ্চিত। আবার না পাওয়ার শঙ্কাও আছে, ‘এর আগেও আমাদের বেতনের আওতায় আনা হয়েছিল। চুক্তিটা ছিল এক বছরের। দ্বিতীয়বারের মতো আবারও বেতনভুক্ত হচ্ছি। এটা আমাদের জন্য ভাল সংবাদ। তবে আরও বেশি খুশি হব যদি বেতনটা নিয়মিত পাই’Ñ বললেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী ফুটবলার। ২০১১ ও ২০১৩ সালে হয়েছিল মেয়েদের ফুটবল লীগ। গত পাঁচ বছর আর লীগ হয়নি। ছেলেদের মতো লীগ চালু করলে আর্থিকভাবে মেয়েরাও লাভবান হবে। পরিবারকে বেশি করে সাহায্য করতে পারবে। লীগ না করতে পারার জন্য ফুটবলবোদ্ধারা দায়ী করছেন ফেডারেশনকে। তবে বাফুফে সভাপতির কাঠগড়ায় ক্লাব, ‘লীগ করতে পারছি না এটা আমাদের ব্যর্থতা না। ক্লাবগুলো এখনও প্রস্তুত নয়। ২-৩টা ক্লাব রাজি। কিন্তু আমার তো প্রয়োজন ৮-১০টি ক্লাব। আমি চাই আপনারাও ক্লাবগুলোকে বলেন।’
×