ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতীয় ক্রিকেটে মিতালি-আলো

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২১ নভেম্বর ২০১৮

 ভারতীয় ক্রিকেটে  মিতালি-আলো

কপিল দেব, শচীন টেন্ডুলকর, বিরাট কোহলি যুগে যুগে কিংবদন্তি সব ক্রিকেটরের জন্ম দিয়েছে ভারত। মেয়েদের ক্রিকেটে যেখানে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের দাপট সেখানেও এক নারী কিংবদন্তির দেখা পায় এশিলার পরাশক্তিরা। তিনি মিতালি রাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজে চলমান টি২০ বিশ্বকাপে চিরশত্রু পাকিস্তানকে গুড়িয়ে দেয়ার দিনে ৫৬ রানের ইনিংস খেলে রোহিত শর্মাকে টপকে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি টি২০ রানের মালিক বনে গিয়েছিলেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচেই উপহার দিয়েছেন আরও একটি হাফ সেঞ্চুরি। ৫১ রান করে সাবেক ভারত অধিনায়ক ছাড়িয়ে গেছেন সব পুরুষ ক্রিকেটারকেই! পেছনে ফেলে দিয়েছেন মার্টিন গাপটিলকে। ২২৭১ রান করে এতদিন আন্তর্জাতিক টি২০তে রেকর্ড সর্বোচ্চ রানের মালিক ছিলেন কিউই ওপেনার। ৩ ডিসেম্বর ৩৬-এ পা দিতে যাওয়া মিতালিার মোট রান ২২৮৩। ভারতের নারী ক্রিকেট দলের ওপেনিং ব্যাটার মিতালি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১ রানের ইনিংস খেলেন। নারী টি২০ বিশ্বকাপে যেটা ছিল তার টানা দ্বিতীয় এবং টি২০ ক্যারিয়ারের ১৭তম হাফ সেঞ্চুরি। এই হাফ সেঞ্চুরির মাধ্যমে তিনি ভারতের টি২০ ক্রিকেট ইতিহাসে (নারী ও পুরুষ মিলিয়ে) সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৮৫ ম্যাচের ৮০ ইনিংসে মাঠে নেমে তিনি রান করেছেন ২২৮৩। ভারতের রোহিত শর্মার রান ২২০৭। বিরাট কোহলির রান ২১০২। আরেক নারী ক্রিকেটার হারমানপ্রিত কাউরের রান ১৮২৭। সুরেশ রায়নার রান ১৬০৫। আর মাহেন্দ্র সিং ধোনির রান ১৪৮৭। মিতালি ভারতের সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেও আন্তর্জাতিক টি২০তে তার সামনে এখনও তিনজন নারী ক্রিকেটার আছেন। তারা হলেন সুজি বেটিস (২৯৬১ রান), স্টেফানি টেইলর (২৬৯১ রান) ও চার্লোত্তি এডওয়ার্ডস (২৬০৫ রান)। তবে ছেলেদের টি২০ ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ মার্টিন গাপটিলকে ঠিকই পেছনে ফেলেছেন মিতালি। গাপটিলের রান ২২৭১। মিতালির রান ২২৮৩। আর ১৭তম হাফ সেঞ্চুরি করে তিনি পেছনে ফেলেছেন সুজি বেটিস, আলিসা হিলি ও পাকিস্তানের বাবর আজমকে। এক পঞ্জিকাবর্ষে তারা সবচেয়ে বেশি হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। রাজস্থানের যোধপরে জন্ম নেয়া ৩৫ বছর বয়সী মিতালি এখন টি২০তে ভারতের হয়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ রানের মালিক। হিটম্যান রোহিতের চেয়ে ২৭ রানে এগিয়ে তিনি। ৭২ ইনিংসে ২১০২ রান নিয়ে তৃতীয় স্থানে জাতীয় অধিনায়ক ও বড় তারকা বিরাট কোহলি। মিতালি কোহলিকে টপকে গিয়েছিলেন আগেই। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৪৭ বলে ৫৬ রানের ইনিংসে তিনি পেরিয়ে গেছেন রোহিতকে। সেদিনই পুরুষ দলের জাতীয় ওপেনার রোহিত শর্মাকে টপকে টি২০ ফরমেটে ভারতের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের নতুন রেকর্ড গড়েন অভিজ্ঞ এই প্রমিলা তারকা ব্যাটার। ১৯৯৯ সালে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক মিতালির। ডানহাতি টপঅর্ডার ব্যাটার ১৯৭ ওয়ানডেতে ৫১.১৭ গড়ে করেছেন ৬৬৫০ রান। সেঞ্চুরি ৭ ও হাফ সেঞ্চুরি ৫১টি। ১০ টেস্টে ৫১ গড়ে রান ৬৬৩। অনেকদিন ভারতকে নেতৃত্বে দিয়েছেন। এখন খেলছেন আরেক তারকা ব্যাটার হারমানপ্রিত কাউরের অধীনে। বয়স ৩৫Ñএর ওপরে। স্বাভাবিকভাবে এটাই হয়ত তার শেষ বিশ্বকাপ। সতীর্থরাও তাই মেয়েদের ক্রিকেটের কিংবদন্তি হয়ে ওঠা মিতালিকে শিরোপা উপহার দিতে মরিয়া। কাউরের কথাও আলাদা করে বলতে হবে। চার-ছক্কা, সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি ব্যাটিংয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক রেকর্ডই তো ভারতীয়দের দখলে। কিন্তু এতদিন নারী ক্রিকেটের টি২০ ফরমেটে দেশটির কোন সেঞ্চুরি ছিল না! সেই অপূর্ণতাই ঘুঁচিয়ে দিলেন সময়ের বড় তারকা। তার ৭ চার ও ৮ ছক্কায় তার ৫১ বলে ১০৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে চলমান নারী টি২০ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডকে ৩৪ রানে হারিয়ে শুভসূচনা করে শিরোপা প্রত্যাশী ভারত। গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে সেদিন ঝড় তোলেন হারমানপ্রিত। ৫ উইকেটে ১৯৪ রানের বিশাল স্কোর পায় ভারত। ৪৫ বলে ৫৯ রান করেন জেমিমা রদ্রিগেজ। জবাবে ৯ উইকেটে ১৬০ রানে থামলেও হারের আগে ভাল ফাইট করে কিউই মেয়েরা। মেয়েদের টি২০ বিশ্বকাপে এতদিন অস্ট্রেলিয়ার করা ৪ উইকেটে ১৯১ ছিল সর্বোচ্চ। এদিন সেই রেকর্ড ভেঙে দেয় হারমানপ্রিত-রদ্রিগেজের ভারত। আর টি২০তে ভারতীয়দের মধ্যে সেরা স্কোর ছিল আরেক তারকা মিতালি রাজের। তাঁর ছিল অপরাজিত ৯৭। সেঞ্চুরির পর প্রথম স্থানে উঠে এলেন হারমানপ্রিত। চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে এ দিন ১০৩ রান করেন হরমনপ্রিত। উইকেটের চারপাশে খেলেন মনে রাখার মতো দৃষ্টিনন্দন সব শট। মেয়েদের টি২০তে যেটি তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। তার আগে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মেগ ল্যানিং (১২৬) এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডিজেএস দেতিন (অপরাজিত ১১২)। হারমানপ্রিতের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৮টি ছয় দিয়ে। এক ইনিংসে সব চেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড দোতিনের দখলে । তিনি মেরেছিলেন ৯টি ছক্কা। হরমনপ্রিতের সমান ছক্কা আছে নিউজিল্যান্ডের এস ডিভাইনের। তাই এ ক্ষেত্রেও তিনি তিন নম্বরে। এদিন ব্যাটিংয়ে রীতিমতো ঝড় তোলেন হারমানপ্রিত। তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ২০১.৯৬। বিশ্বকাপে এক ইনিংসে ৫০ বা তার বেশি রান করার নিরিখে এটা তৃতীয় সেরা। ২৪৮.৮৮ এবং ২১২ স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রথম দুটি স্থানে রয়েছেন দোতিন। শেষের ওভারগুলিতে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন হারমানপ্রিত। শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ১৭টি বল খেলে তিনি করেন ৫২ রান। স্ট্রাইক রেট ৩০৫.৮৮। এদিন অবশ্য শুরুটা বেশ ঢিমেতালেই করেছিলেন হারমানপ্রিত। প্রথম ১৩ বলে করেছিলেন মাত্র ৫ রান। ১৪তম বলে প্রথম ছক্কাটি আসে তাঁর ব্যাট থেকে। ৩৩ বলে প্রথম পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তিনি। এরপর দ্বিতীয় পঞ্চাশ পূর্ণ করতে হারমানপ্রিত খেলেন মাত্র মাত্র ১৬ বল! নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে তার তোলে ১৯৪ রান। ২০ ওভারের ম্যাচে এটা ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। সেরা এ বছরই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে করা ৪ উইকেটে ১৯৮ রান।
×