ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দগ্ধ ডানার আগুনপাখি, বেদনাবিধুর ফ্ল্যাশব্যাক

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২১ নভেম্বর ২০১৮

দগ্ধ ডানার আগুনপাখি, বেদনাবিধুর ফ্ল্যাশব্যাক

মোরসালিন মিজান ॥ ঠিক চলচ্চিত্র এটি নয়। চলচ্চিত্রের ভাষায় বলা। প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। ডকুমেন্টারি ফিল্ম। এই ধারার চলচ্চিত্রে বাস্তবে যা, যা সত্য, তা-ই তুলে ধরা হয়। অভিন্ন প্রয়াসের নাম ‘হাসিনা : আ ডটার’স টেল।’ মুক্তি পাওয়ার আগে থেকেই আলোচনায়। এখন সিনেমা হলে দেখানো হচ্ছে। সিনেমা হলে বসে ব্যক্তির জীবনালেখ্য দেখছেন দর্শক। এবং হাউসফুল। এবং টিকেট নিয়ে কাড়াকাড়ি! কারণটি এই যে, ডকুফিল্মের মূল চরিত্র হয়ে এসেছেন হাসিনা। সেই হাসিনা যার পিতার নাম শেখ মুজিব। আর মুজিব মানেই তো বাংলাদেশ। কন্যার হাতে এই দেশ দিয়ে গেছেন তিনি। শেখ হাসিনা দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দীর্ঘ জীবন। অভিজ্ঞতা? অভিঘাত? জীবনকেও ছাড়িয়ে গেছে। ঘটনার কত যে ঘনঘটা। সবই বাংলা নামের দেশটির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। ছবির মূল চরিত্রটি ঘিরে যে গল্প, গল্প আসলে নয়, মর্মন্তুদ ইতিহাসের বিস্তৃতি, সেখানে সিনেমার ট্র্যাজেডিও হার মানে। নাটকের চেয়ে অধিক নাটকীয়তা। স্টোরি টেলিংয়ের ধরনটা দর্শক ধরে রাখার মতো। পরিচালক রেজাউর রহমান খান পিপলু নিজের মতো করে কিছু দৃশ্যকল্প তৈরি করতে পেরেছেন। নতুন ব্যঞ্জনা দিতে পেরেছেন। বেদনাবিধুর ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে নিঃস্ব-একাকী হাসিনাকে পাওয়া হয় না শুধু, ইতিহাসের ঘাতপ্রতিঘাতগুলো চিহ্নিত করে। নতুন করে সবার সামনে তুলে ধরে। মাত্র ৭০ মিনিটের তথচিত্র। কতটুকু আর তুলে ধরা যায়? বিষয় নির্বাচনও জরুরী ছিল। পরিচালক বেশ উৎরে গেছেন। ডক্যুফিল্মটিতে সূর্যালোকের মতো কিছু সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। সামনে এসেছে পুনরায়। পুনরায় বলার কারণ- এই ইতিহাসের কথা, অহর্নিশ সংগ্রামের কথা অজানা নয় কারও। তবে গভীরে, আরও গভীরে যাওয়ার সুযোগ হলো এবার। ধুলো জমা ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখল সমকাল। কুড়িয়ে নিল পিতা-মাতা, ভাই, আত্মীয়-পরিজন হারানো শেখ হাসিনার একান্ত ব্যক্তিগত বিষাদ। দুঃসহ স্মৃতি। ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম। সবই ফ্রেমবন্দী করা হলো। এখানে টুকরো টুকরো অতীত ও বর্তমানকে পাজেলের মতো করে সাজানো হয়েছে। মূল চরিত্র হাসিনা তার নিজের পরিবেশে নিজেকে মেলে ধরেছেন। কবিতার প্রিয় পঙ্ক্তির মতো, শিল্পীর আঁকা ক্যানভাসের মতো সেগুলোকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। একই অনুভূতি অভিন্ন সংগ্রাম বোন শেখ রেহানার। এ কারণে তথ্যচিত্রে অনিবার্য হয়ে এসেছেন তিনি। অপেক্ষাকৃত কম শোনা কণ্ঠ হলেও, এখানে বেশ জোরালো। বিশ্বস্ত শোনায়। হাসিনা চরিত্র বুঝতে রেহানা চরিত্রটি সহায়ক হয়ে ওঠে। এবস্ট্রাক্ট ফর্মের ব্যবহার খুব লক্ষ্যণীয়। কোন কোন জায়গায় পরিচালক যারপরনাই বিমূর্ত। কথা বলেছেন রূপকের আশ্রয়ে। এতে দর্শকের ভেতরে যে বোধের জন্ম হয়, যে অনুভূতির সৃষ্টি করে তা অনেকদিন দেখা যায়নি। তথ্যচিত্রে ৩২ নম্বরের দুঃখ : বাড়ি, বুলেটবিদ্ধ বই, ছবি থেকে খসে পড়া ফ্রেম, সাহায্য চেয়ে ব্যর্থ হওয়া টেলিফোন কথা বলে। কান্নার জল হয়ে অবিরাম ধারায় ঝরে শ্রাবণের বৃষ্টি। শেকড় কাটার কষ্টে কাঁপে হিজলের বন। সব হারিয়ে নিঃস্ব কন্যা হাসিনা। তাঁর সংগ্রামের সাক্ষ্য দেয় বেলজিয়াম ও জার্মানির বর্ডার। পত্রপল্লবহীন বিবর্ণ বৃক্ষরাজি আতঙ্ক ছড়ায়। ভারতে নাম- পরিচয়হীন বেঁচে থাকার স্মৃতি, ইন্দিরা গান্ধীর মাতৃসম আদর দর্শকেরও চোখ ভিজিয়ে দেয়। রূপালী পর্দায় কথা বলে টুঙ্গিপাড়ার উর্বর ভূমি। ভরা নদী, নদীর তীর, জলের কাছে এসে নুইয়ে পড়া সবুজ ভূমিপুত্র শেখ মুজিবের বন্দনা করে। আর এই মুজিবেরই বড় কন্যা শেখ হাসিনা। ডকুফিল্মের নামকরণে তিনি শুধু ‘হাসিনা’ হয়ে এসেছেন। এর মধ্য দিয়ে মূল চরিত্রটির সামান্যীকরণ করার চেষ্টা হয়েছে বটে। দিন শেষে তিনি আরও অসাধারণ হয়ে ওঠেন। ভালবাসায় হৃদ্ধ হন। ছবিতে ইতিহাসের যে বিবরণী পাওয়া যায় তা ধারাবাহিকভাবে আসেনি। বর্তমানের অবস্থানে থেকে অতীতের স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা। বিচ্ছিন্ন স্মৃতিকথাকে পুরনো ভিডিও ফুটেজ আলোকচিত্র পেন্টিঙের মাধ্যমে বিশিষ্টার্থক করা হয়। শৈশব থেকে শুরু করে বর্তমানের খুঁটিনাটি বলে যান হাসিনা। জানান, তার কাছে টুঙ্গিপাড়া পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। দূর গ্রাম থেকে বহুকাল আগে নৌকোয় করে ঢাকায় এসেছিলেন। নদীপথে ঢাকায় আসার ভিজ্যুয়াল দেখে মন ভরে যায়। নৌকোটি কোথাও নেই। জানালা দিয়ে দেখা দৃশ্যাবলী মায়ায় ফেলে দেয়। একটি পেছনে পড়তেই আরেকটি। পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। স্ক্রল করতে করতে এগিয়ে যায়। এভাবে টুঙ্গিপাড়ার নয় শুধু, বাংলার গ্রামীণ জীবন ও নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার অকৃত্রিম রূপ ক্যামেরাবন্দী হয়। ঢাকায় আসার পরও নানা চড়াই-উতরাই। পিতা শেখ মুজিব জেলেই কাটান বেশিরভাগ সময়। মায়ের মেয়েটি তাই সামনে চলে আসে। হাসিনা জানান, মায়ের সঙ্গে তাঁর বয়সের ব্যবধান কম ছিল। দু’জন তাই বন্ধুটি হয়েছিলেন। এ সময় মায়ের কিশোরবেলার একটি ফটোগ্রাফ হাতে নিয়ে দেখান তিনি। আহ, কী সরলা সে মুখচ্ছবি! রেহানা মায়ের সঙ্গে তাঁর বড় মেয়ের সম্পর্কের আকর্ষণীয় বর্ণনা দেন। গোপন তথ্য পরিবেশন করে বলেন, আজকের ব্যস্ততম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শৈশবে ছিলেন ‘অলসের কারখানা’। তার সব করে দিতেন মা। জামা-কাপড় গুছিয়ে দেয়া, বন্ধুদের দাওয়াত করে খাওয়ানো কোনটিই মায়ের হাত না লাগলে হতো না। শেখ মুজিবেরও রেণু ছিল ভরসা। একটি ভিডিও সাক্ষাতকারে ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতার হওয়ার কথা বর্ণনা করছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেখানে রেণু প্রেমের মহা অনুভূতি নিয়ে সামনে আসেন। মুজিবকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামছেন তিনি। হঠাৎ সর্বক্ষণিক সঙ্গী পাইপ নেয়ার জন্য উপরে ওঠেন। যেখান থেকে নেমে গিয়েছিলেন সেখানে পৌঁছে তিনি দেখতে পান ঠিক অপেক্ষা করে আছেন তার রেণু! হাতে পাইপ আর সুটকেসটি ধরা। কিন্তু হায়! এমন সোনার সংসার লন্ডভন্ড হয়ে যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বেদনাবিধুর ফ্ল্যাশব্যাকে যায় ক্যামেরা। তখন দেখা যায়, ৩২ নম্বরের বাড়ি ঘিরে থাকা অন্ধকার ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। প্রথমে দূর থেকে ভেসে আসা একটি-দুটি গুলির শব্দ। ক্রমে তা আরও স্পষ্ট আরও ঘন হতে থাকে। গুলির বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে অন্তরাত্মা। পর্দায় ভায়োলেন্স দেখানো হয় না। দৃশ্যমান করা হয় না রক্ত স্রোত। সবই অনুভবের হয়ে যায়। দর্শক ফিল করতে থাকেন। কোন্ বুলেটে নারীর প্রাণ গেল, কোন্ বুলেটে বিদ্ধ হলো শিশু, অনুভব করা যায়। পিতা লুটিয়ে পড়ছেন সিঁড়িতে, বাংলাদেশকে অনিরাপদ রেখে চলে যাচ্ছেন তিনি। কল্পনার চোখে দেখা যায়। এর সঙ্গে যোগ হয় শ্রাবণের বারিধারা। কাঁদো বাঙালী কাঁদো...। হলে বসা দর্শক কান্না থামাতে পারেন না। পরের কথাগুলো তোলপাড় করা সঙ্গীতে। জনকের বার বার শোনা গানটি- এ পৃথিবী ভালবাসিতে জানে না/যেথা আছে শুধু ভালবাসাবাসি/সেথা যেতে প্রাণ চায় মা/আমার সাধ না মিটিল/আশা না পুরিল/সকলি ফুরায়ে যায় মা...। সোনার বাংলা গড়ে তোলার সাধ অপূর্ণ রেখেই চলে যেতে হয় অবিসংবাদিত নেতাকে । আদরের হাসিনা তখন বিদেশে। বেলজিয়ামে তার সঙ্গে ছোট বোন রেহানাও। তার স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, কিছুক্ষণ আগের ক্যান্ডেল লাইট ডিনার মুহূর্তেই চির অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল। ছোট বোন সহ্য করতে পারবে না ভেবে রেহানার কাছ থেকে ঢাকার ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করেন হাসিনা। রেহানা আড়াল করেন হাসিনার কাছ থেকে। এতকাল পর জানা যায়, দু’জন প্রায় একই সঙ্গে সত্যটা জেনেছিলেন! এভাবে একের পর এক বেদনার মুহূর্ত তৈরি হয় পর্দায়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া হাসিনা ও রেহানার শোক আর সংগ্রাম হাত ধরাধরি করে চলে। ব্রাসেলসের বাসা আশ্রয়হীন অবস্থায় তাঁদের ছুটে চলার মুহূর্তটিকে বিশেষ নির্মাণ করতে পেরেছেন পরিচালক। আগস্টের আতঙ্ক বহু দূরের দেশে থাকা কন্যাদ্বয়কে কীভাবে তাড়া করেছিল, অনেকেই সেদিকে তাকিয়ে দেখার সুযোগ পাননি। প্রামাণ্যচিত্রে যথেষ্ট সফলভাবে তা দেখানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বন, পাহাড় পেরিয়ে ছুটে চলা একটি গাড়ি, গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখা পরিপার্শ্ব বদলে যাওয়া সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে। হাসিনা ও রেহানা বেলজিয়ামের বর্ডার অতিক্রম করে জার্মানি, জার্মানি থেকে ২৫ আগস্ট ভারতে। হাসিনা জানান, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মায়ের মমতায় তাকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন। নিজ হাতে চা করে খাইয়েছেন। জানতে চেয়েছেন, তোমার মুখ এত শুকনো কেন? খাওনি কিছু? দুর্লভ এই ভালবাসার কথা জেনে আবারও চোখ আর্দ্র হয় দর্শকের। রেহানা খুব সম্ভবত প্রথমবারের মতো জানান, সেখানে ছদ্মনামে বাস করেতেন তারা। এক পর্যায়ে লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি। দুই বোনের বিচ্ছেদের কথা রেহানা এভাবে বলেন : আপাকে একা ফেলে অনেকটা স্বার্থপরের মতোই আমি চলে গিয়েছিলাম। এর কিছুকাল পর হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে নিজ দেশে ফেরেন। সে সময়ের আলোকচিত্র ভিডিও ফুটেজে তাঁর ভগ্ন স্বাস্থ্য। বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ। মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ সব অর্জন বিসর্জন দিয়েছে। এ অবস্থায় শেখ হাসিনার কামব্যাকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ। কাজটি সহজ ছিল না। কয়েক দফা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাঁকে। তথ্যচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। আন্দোলনের প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় শেখ হাসিনাকে। বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে দেখা মেলে তাঁর। এবং তিনিই হন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। পিতা-মাতা, ভাই-পরিজন হত্যার বিচার সম্পন্ন করেন। এ জায়গায় এসে ডকুফিল্ম ফিল্মকে ছাড়িয়ে যায়। সিনেমা হলে এখানেই শেষ হতে পারত গল্প বলা। কিন্তু ‘হাসিনা : এ্যা ডটার’স টেল’, আগেই বলেছি, বেশি কিছু। এখনও তাই সংগ্রাম চলছে। চলছে আক্রমণও। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ভিডিও ফুটেজে মুহূর্তটি এখনও তাজা। নির্ভয় হাসিনার অহর্নিশ সংগ্রামের প্রামাণ্য হয়ে আছে। ততদিনে রেহানাও দেশে স্থায়ী হয়েছেন। ওই দিনের একটি আলোকচিত্রে দেখা যায়, অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা বাসায় ফিরে এক হাতে ছোট বোন রেহানার হাতটি শক্ত করে ধরে আছেন। অন্য হাতে ফোন। ছবিটি দুই বোনের একে অন্যকে আগলে রাখার স্মারক হয়ে তথ্যচিত্রে স্থান পায়। বর্তমানে এসে দেখা যায়, ব্যস্ততম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ব্যস্ত। এর পরও ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের সঙ্গেও অদ্ভুত এক বন্ধুতা গড়ে তুলেছেন। অবলীলায় তাদের হাসি-খেলার সঙ্গী হন তিনি। পরিচালকের ক্যামেরা তাঁকে অনুসরণ করে এমন বেশ কিছু বন্ধুতার গল্প তুলে এনেছে। পরিচালক নাতি- নাতনিদের গল্প থেকে ফ্ল্যাশব্যাক করেন। পর্দায় দৃশ্যমান হয় তাদেরই বয়সী শেখ রাসেল। শিশু ভাইটিও সেদিন রক্ষা পায়নি। তার কথা ভেবে এখনও চোখ মুছেন বড় বোন। প্রতি ১৫ আগস্ট ৩২ নম্বরে ছুটে যান। ভেতর বাড়িতে কীভাবে কাটান তারা? জানার সুযোগ সাধারণের হয় না। তথ্যচিত্র অদেখা ছবিটা সামনে আনে। আহা রে, কী ভাঙা বুক! শূন্যতা! সিঁড়িতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিতে দিতে ব্যথিত কন্যাকে এ সময় বলতে শোনা যায়Ñ এখান থেকেই তো আব্বার আত্মাটা বের হয়ে গিয়েছিল! রেহানার কণ্ঠে ফিরে পাওয়ার আকুতি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, এখনও মনে হয় সব যদি স্বপ্ন হতো। যদি বনানীতে গিয়ে বা-মাকে চিঠি লিখে বলতে পারতাম, দেখ তোমার অলসের কারখানা এখন দিন-রাত মানুষের জন্য কাজ করে চলেছে। ফিরে পাওয়ার এই আকুতিকে আরও জোরালো করে দর্শকের মাঝে ছড়িয়ে দেয় রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী সুরÑ আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়। মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়...। এখানেই শেষ হয় ‘হাসিনা : এ্যা ডটার’স টেল।’ সিনেমা শেষ হয়। আসন ছেড়ে উঠতে ভুলে যান দর্শক। এক ধরনের নিস্তবদ্ধতা নেমে আসে প্রেক্ষাগৃহে। আরও একবার জলে ভেসে যায় চোখ। তবে জলই শেষ কথা নয়। ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তাটিও দেয়া হয়। তথ্যচিত্রে বারে বারেই আগুনপাখি হয়ে আসেন শেখ হাসিনা। খা খা বিরান ভূমি থেকে, কারবালার রক্তাক্ত প্রান্তর থেকে উড়ে আসে আগুনে পোড়া পাখি। তার দগ্ধ ডানা আকাশে মেলে ধরতেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ! ডকুফিল্মের সিনেমাটোগ্রাফি সর্বত্রই প্রশংসিত হয়েছে। এখানেই বড় চেঞ্জটা। চ্যালেঞ্জটাও। আরও বেশকিছু চ্যালেঞ্জে দারুণভাবে সফল হয়েছেন পরিচালক। বার বার পরীক্ষিত দেবজ্যোতি মিশ্র’র সঙ্গীতায়োজন পিপলুর কাজটিকে সহজ করেছে। আর যে কথাটি না বললেই নয়, সেটি হচ্ছে, পরিচালক বিষয়টি নিয়ে কাজ করার অনুকূল পরিবেশ পেয়েছেন। এবং সে সুযোগ ব্যর্থ হতে দেননি তিনি। তাই প্রত্যাশা বাড়ল। এ ধারার আরও অনেক সিনেমা, ডকুমেন্টারি ফিল্ম হওয়া জরুরী। হতে পারে। হতে যে পারে, পিপলু সেটি করে দেখিয়েছেন। ধন্যবাদ পেতে পারেন তিনি। ধন্যবাদ পেতে পারে প্রযোজনার কাজ করা সিআরআই ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
×