ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আসন নিয়ে জোটে জট

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২০ নভেম্বর ২০১৮

আসন নিয়ে জোটে জট

উত্তম চক্রবর্তী/শরিফুল ইসলাম/রাজন ভট্টাচার্য ॥ আসন বণ্টন নিয়ে জট বেঁধেছে মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। জোট-মহাজোটে চলছে শেষ মুহূর্তের দর কষাকষি। বড় দলগুলো চাচ্ছে কত কম আসন ছাড় দিয়ে ছোট দলগুলোকে সঙ্গে নেয়া যায়। আর ছোট দলগুলো চাচ্ছে সর্বোচ্চ সুযোগ। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়াকে কেন্দ্র করে ঘরে-বাইরে ত্রিমুখী সঙ্কটে পড়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগ এবং প্রধান বিরোধী পক্ষ বিএনপি। শরিক আর নিজ দলের নেতাদের খুশি করার পাশাপাশি দলের ভেতরের কোন্দল দমন করে তিন শ’ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করাই বড় এই দল দুটির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ রয়েছে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে। নির্বাচনী আদর্শিক জোট ১৪ দলে আসন বণ্টন নিয়ে তেমন কোন চাপ নেই আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে। তবে প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি এবং নতুন জোটে আসা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় যুক্তফ্রন্টের চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটিকে। তবে আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটের শরিকদের ৬০ থেকে ৬৫ আসন ছেড়ে দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে আসন বণ্টন নিয়ে চরম বেকায়দায় রয়েছে বিএনপি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দল এবং ২০ দলীয় জোটের বিপুল চাহিদা নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছে দলটির নীতিনির্ধারকদের। একদিকে একেকটি আসনের বিপরীতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রায় ১৫ জন করে। অন্যদিকে শরিক দলগুলোর দেড় শতাধিক আসনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে চরম বেকায়দায় পড়তে হয়েছে দলটিকে। কেউ কাউকে ন্যূনতম ছাড় দিতে নারাজ। দলটির আশঙ্কা, শরিকদের বিপুল পরিমাণ আসনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে দলের চেইন অব কমান্ডই ভেঙ্গে পড়তে পারে। বিপুলসংখ্যক আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বিএনপি। সবকিছু সামাল দিয়ে একক প্রার্থী ঘোষণা বিএনপির সামনে পাহাড় সমান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিএনপিও শরিকদের ৬০ থেকে ৬৫ আসন ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছে। শরিকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খুব একটা সুখে নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও। জোট-মহাজোটে চলছে শেষ মুহূর্তের দর কষাকষি। আসন বণ্টন নিয়ে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা এখনও হয়নি। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় যুক্তফ্রন্টের চাহিদা মেটাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটিকে। অন্যদিকে শক্তিশালী প্রার্থী না থাকলেও নিবন্ধন বজায় রাখার স্বার্থে ১৪ দলের কিছু শরিক দলের একটি করে হলেও আসন দাবি এবং কিছু ইসলামী দলের বেশ কয়েকটি আসনের দাবি নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই দলটি। জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটের শরিক দলগুলোর চাহিদা বেড়েছে। গত সংসদ নির্বাচনে সব মিলিয়ে ৬০ থেকে ৭০টি আসন ছাড় দেয়া হয়েছিল। এবার শুধুমাত্র জাতীয় পার্টিই ৬০-৭০ আসনে তাদের প্রার্থীর তালিকা দিয়েছে। যুক্তফ্রন্ট দিয়েছে অর্ধশতাধিক প্রার্থীর তালিকা। জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি-জেপি, তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপসহ বিভিন্ন জোটের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে তাদের চাহিদার কথা জানিয়েছে আওয়ামী লীগকে। সব মিলিয়ে দেড় শতাধিক আসন চাচ্ছে শরিকরা। জোটের শরিকদের চাহিদা মেটাতে গেলে আওয়ামী লীগকে নিজ দলের প্রার্থীদের নিবৃত্ত করতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করতে আসা ছোট ছোট জোটগুলো চাইছে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুযোগ আদায় করে ক্ষমতার অংশীদার হতে। শরিক আর নিজ দলের নেতাদের খুশি করার পাশাপাশি বড় দুই জোটের অধিক আসনের দাবি পূরণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির। জাতীয় পার্টি চাইছে গত নির্বাচনে যে কটি আসন ছাড় দেয়া হয়েছিল এবার এর চেয়ে বেশি আসন ছাড় দিতে হবে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা বেশকিছু আসনও দাবি করছে তারা। অন্যদিকে যেসব আসনে শরিক দলের প্রার্থী আছেন সেসব আসনেও দলের নেতারা মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। সবকিছু সামাল দিয়ে প্রার্থী ঘোষণাই দলটির সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্পষ্টই করেই বলেছেন, শরিক দলগুলোর জন্য ৬৫ থেকে ৭০ আসনে ছাড় দেয়া হবে। কিন্তু সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, জাতীয় পার্টি ও জাতীয় যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগের কাছে দেড় শতাধিক আসন দাবি করেছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, যেসব আসনে আওয়ামী লীগের এমপি রয়েছে, সেগুলোতে কোন ছাড় দেয়া হবে না। তবে বেশি শক্তিশালী প্রার্থী পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিতে সম্মত হবে আওয়ামী লীগ। শরিকদের চাহিদা ও মাঠের বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই এবার তাদের প্রার্থীদের ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। তবে কে কত আসন দেয়া হবে তা নিয়ে দু’একদিনের মধ্যে শরিক দল, জাতীয় পার্টি ও জাতীয় যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। শরিক দলগুলোর চাহিদা নিয়েই সেখানে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। ইতোমধ্যে দলের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। সেখানে স্থান পাননি বিতর্কিত কিছু এমপি ও মন্ত্রিসভার সদস্য। যুক্ত হয়েছেন দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত এবং ক্লিন ইমেজের কিছু নতুন মুখ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব টিম, দলীয় জরিপ, কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার একাধিক জরিপের ভিত্তিতেই সারাদেশে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর সেই জরিপের ভিতিতেই জোটের শরিকদেরও আসন ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই এবার কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না আওয়ামী লীগ। এ কারণে যেসব আসনে শরিক দলের শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে, বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শুধুমাত্র সেসব আসবেই ছাড় দেবে দলটি। জোটের স্বার্থ বিবেচনা করতে গিয়ে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই এমন কোন প্রার্থীকে কোনভাবেই ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। তবে দলটির সংসদীয় বোর্ডের নেতারা বলছেন, আসন বণ্টন নিয়ে কোন অসুবিধা হবে না। আসন বণ্টন নিয়ে সঙ্কটে বিএনপি ॥ একদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও আরেক দিকে ২০ দলীয় ঐক্যজোট। এ দুই জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে নিয়ে বিএনপি এখন চরম সঙ্কটে। সঙ্কট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এ নিয়ে চলছে দফায় দফায় মিটিং-সিটিং। কিন্তু সমাধানের পথ খুঁজে পাচ্ছে না দলীয় হাইকমান্ড। তবে নিজ নিজ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার শেষে জোটের বৈঠকে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করা হবে। সূত্র মতে, একদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও অন্যদিকে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট। কাউকেই অখুশি করতে চায় না বিএনপি। আবার এমন কিছু আসন রয়েছে যেখানে অন্য দলকে ছাড়ও দেয়া যায় না। তবে জোটের সব দল ধানের শীর্ষ মার্কায় নির্বাচন করায় বিএনপি হাইকমান্ড আসন বণ্টনে অনেকটাই ছাড় দিচ্ছে। তারপরও জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে দর কষাকষি করে যত বেশি সংখ্যক আসন বিএনপির জন্য রাখার চেষ্টা চলছে। প্রথমে ২৬০ আসনে নির্বাচন করার বিষয়ে অটল থাকলেও এখন আরও কিছু আসন ছাড় দেয়ার বিষয়ে নমনীয় অবস্থানে বিএনপি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে আরও ৩ রাজনৈতিক দল যোগ দেয়ায় এটি এখন কার্যত ২৩ দলীয় জোট। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আসম আব্দুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ও বিএনপিকে নিয়ে গঠিত হয়েছে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩ দলের পাশাপাশি শীর্ষ রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যেফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে এখন চলছে চরম জটিলতা। অর্ধশতাধিক আসনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী জোটের শরিক দল। কেউ কাউকে আসন ছাড়তে চাচ্ছে না। এ নিয়ে চলছে ধারাবাহিক দেনদরবার। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার শেষে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক করে আসন বণ্টন জটিলতা দূর করে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চায় বিএনপি হাইকমান্ড। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় থাকা বিএনপি এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। এ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে তারা দলীয় চেয়ারপার্সনের মুক্তি নিশ্চিত করতে চায়। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দলে যে দুরাবস্থা চলছে তাও কাটিয়ে ওঠতে চায়। আর এ নির্বাচনে দলের ভাল ফলের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এ জন্যই নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে জোটের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে চায় না। জোটের যেখানে ভাল প্রার্থী আছে সেখানেই ছাড় দিতে চায়। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা এ ব্যাপারে ছাড় দিতে নারাজ। মূলত এ কারণেই আসন বণ্টন নিয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছে বিএনপি। ঢাকা-৩ আসনে অতীতেও নির্বাচন করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এবারও তিনি এই আসন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু একই আসনে নির্বাচন করতে চান গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য মোস্তফা মহসিন মন্টু। এই আসনের পাশাপাশি ঢাকা-২ আসনেও নির্বাচন করতে চান মোস্তফা মহসিন মন্টু। কিন্তু এ আসন থেকে আগেও নির্বাচন করেছেন এবারও করতে চান বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক ডাকসু ভিপি আমানউল্লাহ আমান। বর্তমানের ঢাকা-২ ও ঢাকা-৩ আসন ২টি আসন যখন ১টি আসন ছিল তখন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সেখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তাই ঢাকা-৩ ও ঢাকা-২ এ ২টি আসন থেকেই মন্টু এবার নির্বাচন করতে চান। এ নিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমানউল্লাহ আমান চরম ক্ষুব্ধ। আবার মন্টুও বিএনপিকে ছাড় দিতে নারাজ। এ পরিস্থিতিতে এ ২টি আসন বণ্টন নিয়ে চরম সঙ্কটে বিএনপি। চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি নিয়ে চলছে চরম সঙ্কট। এই আসনটিতে লড়তে চান ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমদ। আগেও তিনি এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এবার এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী রয়েছে। জামায়াত এবার কিছুতেই এ আসন ছাড়বে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ আসনে জামায়াতের ২ জন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে। এরা হলেনÑ সাবেক সাংসদ শামসুল ইসলাম ও শাহজাহান চৌধুরী। এ দ’জনের একজনকে জামায়াত প্রার্থী করতে চায়। আবার একই আসন থেকে নির্বাচন করতে চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রভাবশালী নেতা ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। তাই এ আসন পাওয়া নিয়ে চলছে ত্রিমুখী রশি টানাটানি। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান মান্না চাইছেন ঢাকা-১২ আসনটি। এই আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে চান যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শাহাব উদ্দিন। সাইফুল আলম নীরব তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। আবার শাহাব উদ্দিন বিএনপির একজন ভাল ডোনার। তাই এ ২ জনকে ওবারটেক করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে এ আসনটি দেয়া বিএনপির পক্ষে দুষ্কর। আবার এ আসনের পরিবর্তে মান্নাকে বগুড়া-২ আসনটি দিতে চেয়েও জামায়াতের তোপের মুখে পড়েছে বিএনপি। কারণ এ আসনটি হচ্ছে জামায়াতের ঘাঁটি তাই তারা কিছুতেই এ আসন ছাড়বেন না বলে বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছেন। চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপির তিনজন ভাল প্রার্থী থাকলেও আসনটি জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। কিন্তু একই আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে চান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জিয়া পরিবারের আস্থাভাজন নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। দলের সাবেক সহ-কোষাধ্যক্ষ ও বিজিএমইএয়ের সাবেক সভাপতি এএসএম ফজলুল হক এবং জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাও এ আসনে নির্বাচন করতে চান। এ নিয়ে চলছে নানান জটিলতা। লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে এবার নির্বাচন করবেন জেএসডি সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আসম আব্দুর রব। এ আসনে ১৯৯৬ সালে আসম আব্দুর রব বিজয়ী হলেও ১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হন। এ আসনে আসম রবের পাশাপাশি বিএনপির সাবেক হুইপ আশরাফ উদ্দিন নিজান ও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাাদক শফিউল বারী বাবুও মনোনয়ন চান। তবে আসম রব বলে দিয়েছেন তিনি এ আসন থেকেই নির্বাচন করবেন। কুমিল্লা-৪ আসনে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আব্দুল মালেক রতন প্রার্থী হতে চান। একই আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান সাবেক এমপি দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মনজুরুল আহসান মুন্সী। তাই এ আসন বণ্টন নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। পাবনা-১ আসনটি ছিল জামায়াতের আমির ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর। এখন এই আসনে নির্বাচন করতে চাইছে জামায়াত নেতা ডাঃ বাসেত খান। নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন ও এখান থেকে নির্বাচন করতে চান। একই আসন থেকে নির্বাচন করতে চান কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমানও। আবার বিএনপির প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের। তাই এ আসন নিয়েই চলছে চরম জটিলতা। পিরোজপুর-২ আসনে মনোনয়ন চান ২০ দলের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। একই আসনে জামায়াতের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী। আর বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে চান সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের ছেলে আহমেদ সোহেল মঞ্জুর। এ রকম আরও অনেক আসনে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর জটিলতা দেখা দিয়েছে। মৌলভীবাজার-২ আসনে এবার নির্বাচন করতে চান জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস খান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট আবেদ রাজা। কিন্তু একই আসন থেকে নির্বাচন করতে চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও সাবেক ডাকসুর ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর কিছুতেই এ আসন ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), আবদুল করিম আব্বাসী (নেত্রকোনা-১) ও শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১) আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ (ভোলা-১) ও তার ছোট ভাই ভোলা-২ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এসব আসনে বিএনপিরও প্রার্থী রয়েছে। এ ছাড়া ২০ দলীয় জোটের শরিক জাগপা থেকে এ দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান (পঞ্চগড়-২), প্রয়াত মসিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের সভাপতি রীটা রহমান (নীলফামারী-১) ও মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার ম-লও (যশোর-২) থেকে নির্বাচন করছেন। এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের নেতারা আরও ক’টি আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এসব আসনে বিএনপিরও প্রার্থী রয়েছেন। তাই প্রার্থিতা পাওয়া নিয়ে চলছে নানান জটিলতা। ৭৬ আসন চায় জাতীয় পার্টি ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে ফিরছে পুরনো মিত্র জাতীয় পার্টি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপা মিলে মহাজোটে নির্বাচন করে। ২০১৪ সালের নির্বাচন হয় যার যার মতো। এবারের নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাটছড়া বাঁধবে জাপা। এই বিবেচনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আসন বণ্টন নিশ্চিত করতে চান এরশাদ। আসন বণ্টনের জন্য বৈঠকের সময় চেয়ে প্রধানমন্ত্রী কাছে চিঠিও দিয়েছেন শনিবার। এরপর দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কাছে ৭৬ জন সংসদ সদস্যের প্রার্থী তালিকাও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আজ ২০ নবেম্বর থেকে মনোনয়ন সংগ্রহকারীদের সাক্ষাতকার নেবেন এরশাদ। সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আসন বণ্টন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হতে পারে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা দ্রুত চান জাপা নীতিনির্ধারকরা। মোট কত আসন জাপাকে ছেড়ে দেয়া হবে এবং কী কৌশলে হবে, তা ঠিক করতে দুই দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনায় বসতে চান। ৫ জানুয়ারির ১০ম সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২১টিসহ ৩৪টি আসনে জেতা জাপার বর্তমান এমপিদের সবার মনোনয়ন নিশ্চিত নয়। বৃহত্তর রংপুরের ২১টি আসনের সাতটি এখন জাপার দখলে। এ ছাড়াও গাইবান্ধা-২, ৩ ও ৫, লালমনিরহাট-৩, রংপুর-২, ৪ এবং রংপুর-৫ আসনে জোটের মনোনয়ন পেলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করেন দলটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি। তিনি জানান, এককভাবে ভোট করলে এগুলোতে ভাল করা কঠিন। গত নির্বাচনে জাপা জামালপুর-৪, ময়মনসিং-৫, ৭ ও ৮, কুমিলা-২ ও ৮, লক্ষ্মীপুর-২, কক্সবাজার-১, বগুড়া-২, ৩, ৬, ৭, ঢাকা-৪ ও৬, চট্টগ্রাম-৯, পটুয়াখালী-১ আসনে জয়ী হয় জাপা নেতারা। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে এককভাবে নির্বাচন করে ৩৫ ও ৩২টি আসন পায় এরশাদের জাপা। ২০০১ সালে পায় ১৪টি আসন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে জয়ী হয় ২৯টি আসনে। সেবার জাপা ৪৯ আসনে ভোটে লড়ে। এর মধ্যে ৩১টিতে আওয়ামী লীগের সমর্থন পায়। বাকি ১৮টিতে ছিল নৌকার প্রার্থী। জাতীয় পার্টি ৭৬ আসন চাইলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শরিকদের জন্য ৬৫ থেকে ৭০ আসন ছাড় দিতে চান তারা। ১৪ দল ছাড়াও শরিকদের মধ্যে রয়েছে, যুক্তফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোট, নাজমূল হুদার জোটসহ আরও কয়েকটি ছোট দল ১৪ দলীয় জোটে যোগ দিতে পারে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি এবারের নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৪০টি আসন পেতে পারে। জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আসন বণ্টনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ আমাদের প্রতি ইতিবাচক বিবেচনা করবে এই প্রত্যাশা সকলের। আমরা যেন কোন ভাবেই কষ্ট না পাই সে বিষয়টি খেয়াল রেখেই আসন বণ্টন হবে। তবে আওয়ামী লীগের প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। ইসলামী দলের চাওয়া ॥ এদিকে ইসলামী ঐক্যজোট প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে চারটি আসন চেয়ে তালিকা পাঠিয়েছে এগুলো হলো মাওলানা আবুল হাসানাত-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ বা ৩, মুফতি ফয়জুল্লাহ-চট্টগ্রাম-৪, আলতাফ হোসাইন-কুমিল্লা-১ এবং আবদুল লতিফ নেজামী-নরসিংদী-৩। মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ১৬ দল নিয়ে গঠিত ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক এ্যালায়েন্স চারটি আসন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে। এগুলো হলো লক্ষ্মীপুর-১ তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল এমপি। এ্যালায়েন্সের কো চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। মিছবাহুর রহমান চৌধুরী এই আসনটি পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়াও ফরিদপুর-৪ আসনে জাকের পার্টির চেয়ারম্যান আটরশির পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সল মোজাদ্দেদী, চাঁদপুর-৪ ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদেদ্দী। এ ছাড়াও শরিক দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারী চট্টগ্রাম-২ ও ঢাকা-১৪ আসন চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের চেয়ারম্যান হাফেজ মওলানা জিয়াউল হাসান ঢাকা-১৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে মনোনয়নপত্র জমা এবং সাক্ষাতকার দিয়েছেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছে। এদিকে এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের সহকারী দফতর সম্পাদক আবদুল হেকিম জানিয়েছেন, জোট প্রধানের কাছে দলের পক্ষে ৪৮ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। জোটের চেয়ারম্যান যেহেতু ঘোষণা দিয়েছেন মহাজোট থেকে ভোট করবেন তাই আমরা আশাবাদী মহাজোট থেকে ৫ থেকে ৬টি আসন আমাদের ছেড়ে দেয়া হবে। ১৪ দলের অনেক আশা ॥ আসন বণ্টন নিয়ে ইতোমধ্যে ১৪ দলের শরিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শরিক নেতাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ বিবেচনা করবেন। যাদের মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হবে না তাদের পরবর্তীতে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেবেন তিনি। যদিও সোমবার রাতে গণভবনে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি বৈঠকের কথা আছে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ব্যাপারে শরিক নেতাদের কাছ থেকে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকরা নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবেন এমন সিদ্ধান্ত আগেই নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। মহাজোটের সঙ্গে যুক্ত হতে দরকষাকষি করছে বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টও। তারাও নৌকা চড়ে সংসদ নির্বাচন করতে আগ্রহী। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে সর্বোচ্চ ৪৫টি, ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৪-৫টি, জাসদ দুই অংশকে সব মিলে ৫টি, তরিকতকে ১টি, জেপিকে সর্বোচ্চ ২টি, যুক্তফ্রন্টকে ৩-৪টি, জাকের পার্টিকে ১টিসহ অন্যান্য দলকে ২টি আসন ছাড় দেয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। মহাজোট শরিকদের কত আসন দেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেত্রী যেটা বলেছেন তা হলো ৬৫ থেকে ৭০টি আসন শরিকরা পাবেন। আলোচনা করে যদি মনে হয় উইনিবল প্রার্থী তাদের বেশি তাহলে সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে। বর্তমানে সংরক্ষিত মিলিয়ে ১৪ দলের ১৭টি আসন রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গণতন্ত্রী পার্টির ২৭, ওয়ার্কার্স পার্টির ৩০, জাসদ-ইনু-৩০সহ প্রায় শতাধিক আসনের তালিকা তৈরি করেছে ১৪ দলীয় দলীয় জোটের শরিক দলগুলো। দু’পক্ষের আলোচনায় শেষ পর্যন্ত কত আসনে শরিকদের ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ তাই এখন দেখার বিষয়। চাওয়ার শেষ নেই ঐক্যফ্রন্টের ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক মোর্চা ঐক্যফ্রন্ট। ইতোমধ্যে রাজনীতিতে আলোচনার ঝড় তুলেছে নতুন এই জোট। গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে এই জোট গঠন হয় ১৩ অক্টোবর। চারটি দল ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠন করা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মধ্যে তিনটি দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত। নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটের প্রদান দল বিএনপির চাওয়া অনেক বেশি। জানা গেছে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব) ২৫, গণফোরাম-৪৫, নাগরিক ঐক্য-১৫, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ-১০ ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে আরও ৫ জনকে মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন ১০ বিশিষ্ট নাগরিককে নির্বাচনে আনতে চান। এই তালিকাও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, হোসেন জিল্লুর রহমান, রেজা কিবরিয়া, আইনজীবী শাহদীন মালিক, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আসিফ নজরুলসহ আরও কয়েকজন। তবে কৌশলগত কারণে তাদের নাম প্রকাশ করছেন না কামাল হোসেন। ইতোমধ্যে গণফোরামের মনোনয়নপত্র বিক্রি শেষ হয়েছে। ১৫০টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে গণফোরামের। ড. কামাল হোসেন নির্বাচন করবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। তিনি বলেছেন, এমপি বা মন্ত্রী হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই তার। রাষ্ট্রপতিও হতে চান না। গণফোরামের পক্ষ থেকে ঢাকার একটি আসনে কামাল হোসেনের পক্ষ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করা হয়েছে। যুক্তফ্রন্ট ॥ এবার আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করবে বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট। ইতোমধ্যে যুক্তফ্রন্ট ছোট বড় মিলিয়ে ৭৭টি রাজনৈতিক দল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর অব. আব্দুল মান্নান। ২২ নবেম্বর পর্যন্ত দলের মনোনয়ন দেয়া হবে বলে জানা গেছে। তবুও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে ফ্রন্টের পক্ষ থেকে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কাছে কমপক্ষে ৩০টি আসন চায় যুক্তফ্রন্ট। তবে তালিকা হয়েছে ৪০জনের। বি চৌধুরী ২০০১ সালের নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। এবার তিনি মুন্সীগঞ্জ-১ অথবা তিন আসনে মনোনয়ন চাইবেন। মাহী বি চৌধুরীকে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে দেয়া হতে পারে। এছাড়া শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসন ও আব্দুল মান্নান নোয়াখালী-৪ ও ঢাকা-১০ আসনে নির্বাচন করতে পারেন।
×