মিথুন আশরাফ ॥ ম্যাচ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে প্রথম ইনিংসের পরই এসে পড়ে। সেই ম্যাচ জেতার দ্বারপ্রান্তেও এখন বাংলাদেশ। এ জন্য জিম্বাবুইয়ের হাতে থাকা ৭ উইকেট বাংলাদেশকে তুলে নিতে হবে। সেই উইকেটগুলো আবার জিম্বাবুয়ের জিততে যে দরকার ৩৬৭ রান, তার আগেই তুলে নিতে হবে। বাংলাদেশের এখন আর সাত উইকেটের অপেক্ষা। তা টার্গেট অতিক্রম করার আগে নিতে পারলেই জিম্বাবুইয়েকে মিরপুর টেস্টে হারিয়ে দেবে বাংলাদেশ।
টেস্টে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কাছ থেকে গত সাড়ে আট বছরে কোন সেঞ্চুরি মিলেনি। অবশেষে সেই সেঞ্চুরি পেলেন মাহমুদুল্লাহ (১০১*)। তার সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুইয়ের সামনে ৪৪৩ রানের টার্গেটও দাঁড় করিয়ে দিল বাংলাদেশ। এই টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে চতুর্থদিন শেষে জিম্বাবুইয়ের স্কোরবোর্ডে ২ উইকেটে ৭৬ রান জমা থাকে। জিম্বাবুইয়ের হাতে এখন সাত উইকেট আছে। যেহেতু পেসার চাতারা ইনজুরিতে আর এই টেস্ট খেলতে পারছেন না। তাই এক উইকেট জিম্বাবুইয়ের কম নিয়েই খেলতে হচ্ছে। হাতে থাকা এই উইকেটগুলো এখন যত দ্রুত বাংলাদেশ বোলাররা তুলে নিতে পারবেন, তত দ্রুত জয় মিলবে।
জয় বাংলাদেশের হাতেই বলা চলে। জিম্বাবুইয়েকে জিততে হলে যে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হবে। ৪১৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০০৩ সালে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি টার্গেট অতিক্রম করে জেতার রেকর্ড। জিম্বাবুইয়ে ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে যে ১৬২ রানের টার্গেট পেয়ে জিতেছিল, সেটিই জিম্বাবুইয়ের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রানের টার্গেট অতিক্রম করে জেতার রেকর্ড। সাড়ে ৩০০ রানের বেশি টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে ৩৩১ রানের বেশি এখন পর্যন্ত করতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। বিদেশের মাটিতে তো টার্গেট নিয়ে খেলে ২৬২ রানের বেশি করেইনি কখনও। আজ পঞ্চমদিনে প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ব্রেন্ডন টেইলর (৪*) ও শন উইলিয়ামস (২*) ব্যাট হাতে নামবেন। এই দুইজনের পর স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সিকান্দার রাজা ও পিটার মুর রয়েছেন। এ চারজনকে দ্রুত আউট করা গেলে চাকাভা, মাভুতা, তিরিপানো, জার্ভিসের উইকেটগুলোও টপাটপ তুলে নেয়া যাবে। এখন সেই কাজটি কত তাড়াতাড়ি করতে পারে বাংলাদেশ, সেইদিকেই সবার নজর থাকছে।
বাংলাদেশের সামনে জিম্বাবুইয়েকে ইনিংসে হারানোর সুযোগ ছিল। যদি ফলোঅনে পড়া জিম্বাবুইয়েকে দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠাতো। কিন্তু সেই কাজটি করেনি বাংলাদেশ। ঝুঁকি নেয়নি। যদি জিম্বাবুইয়ে আবার বড় স্কোর গড়ে ফেলে। তাহলে ম্যাচ ঝুলে যেতে পারত। তাই নিজেরাই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে। এবার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সেঞ্চুরি হাঁকান। মাহমুদুল্লাহর অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন ২২৪ রান করে, তখন ইনিংস ঘোষণা করা হয়। জিম্বাবুইয়ের সামনে জিততে ৪৪৩ রানের টার্গেট দাঁড় হয়। এই টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে চতুর্থদিনের শেষ সেশনে ৭৬ রান করে জিম্বাবুইয়ে।
প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহীমের অপরাজিত ২১৯ রান ও মুমিনুল হকের ১৬১ রানে যখন ৫২২ রান করল বাংলাদেশ, সেখানেই মজবুত ভিত গড়া হয়ে যায়। মনে করা হয়েছিল, জিম্বাবুইয়ে নাস্তানাবুদ হবে। কিন্তু ব্রেন্ডন টেইলরের ১১০ রান ও পিটার মুরের ৮৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে জবাবটা ভালই দেয় জিম্বাবুইয়ে। ৩০৪ রান করে অলআউট হয়। তখন তৃতীয়দিনও শেষ হয়। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২১৮ রানে এগিয়ে থাকে। জিম্বাবুইয়েও ফলোঅনে পড়ে।
জিম্বাবুইয়েকে কী ফলোঅন করাবে বাংলাদেশ? আবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামাবে? সেই প্রশ্নও ওঠে। সেই প্রশ্নের উত্তর চতুর্থদিন সকালেই মিলে যায়। বাংলাদেশই ব্যাটিংয়ে নামে। স্বাভাবিকভাবেই লক্ষ্য ছিল, বড় টার্গেট দাঁড় করিয়ে ইনিংস ঘোষণা করা। যে টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে জিম্বাবুইয়েকে হারের মুখে ফেলে দিবে বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুতে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে আফসোসই হতে পারে। টপাটপ যে উইকেট পড়ছিল। জিম্বাবুইয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠালেও তাই হতে পারত। তাতে ইনিংস ব্যবধানে জেতার একটা সুযোগও কী হাতছাড়া হলো না?
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ইমরুল কায়েস (৩), লিটন কুমার দাস (৬), মুমিনুল হক (১) ও মুশফিকুর রহীম (৭) আউট হয়ে যান। জিম্বাবুইয়ে পেসাররা যেন গতির ঝড় তুলে। এমন সময় যদি বাংলাদেশ পেসাররা বল করতেন, তারাও নৈপুণ্য দেখাতে পারতেন। কিন্তু বাংলাদেশ দল আবার ব্যাটিংয়ে নামায় সেই সুযোগটি জিম্বাবুইয়ে পেসাররা পান। তাতে করে জার্ভিস ও তিরিপানো ২টি করে উইকেট তুলে নেন। বাংলাদেশও বিপাকে পড়ে। তখন যে ২৪৩ রানে এগিয়ে থাকে বাংলাদেশ। যদি ধস নামতেই থাকত তাহলে ৩০০ রানের টার্গেট দেওয়াওতো কঠিন হতে পারতো। মোহাম্মদ মিঠুন ও মাহমুদুল্লাহ মিলে হাল ধরেন। উইকেট পড়ার যে ধুম পড়েছিল, তার বিরতি ঘটান। দেখতে দেখতে দুইজন মিলে দলকে ১০০ রানে নিয়ে যান। দেড় শ’ রানের কাছাকাছিও চলে যান। জিম্বাবুইয়ের টার্গেটও বাড়তে থাকে। যখন দলের ১৪৩ রান হয়, তখন অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে আউট হন মিঠুন। আউট হওয়ার আগে ১১০ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৬৭ রান করেন। মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ১১৮ রানের জুটিও গড়েন। যে জুটি দলকে স্বস্তি দেয়। জিম্বাবুইয়ের চেয়ে দল তখনই ৩৩৬ রানে এগিয়ে যায়। মিঠুন আউটের পর আরিফুল হকও (৫) দ্রুতই সাজঘরে ফেলেন। এরপর আর কোন উইকেটই হারায়নি বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ৬৮ রান করা মিরাজ এবারও ব্যাটিং ঝলক দেখান। প্রথম ইনিংসে মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দেন মিরাজ। এবার মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যান। দ্রুত রানও তুলতে থাকেন দুইজন। প্রথম সেশনে যেখানে ৭৮ রান স্কোরবোর্ডে জমা ছিল, সেখানে দ্বিতীয় সেশনে ১৪৬ রান করে বাংলাদেশ। লক্ষ্যই ছিল, দ্বিতীয় সেশন শেষ হতেই ইনিংস ঘোষণা করবে বাংলাদেশ। এরমধ্যে যত রান তোলা যায়। মাহমুদুল্লাহতো এত দ্রুত খেললেন যে ১২২ বলেই সেঞ্চুরি করে ফেললেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি করেন মাহমুদুল্লাহ। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারির পর, সাড়ে আট বছর পর সেঞ্চুরির চেহারা দেখলেন মাহমুদুল্লাহ। সেঞ্চুরি করতেই ইনিংসও ঘোষণা করে দেয় বাংলাদেশ। ১০১ রান করে ৭৩ রানের জুটি গড়ে মিরাজকে (২৭*) নিয়ে মাঠ ছাড়েন মাহমুদুল্লাহ। যে রান এখনও করতে হবে জিম্বাবুইয়ের। তা করা কঠিন। ড্র’র চেষ্টাই করতে পারে জিম্বাবুইয়ে। কিন্তু পঞ্চম দিনের খেলা। সারাদিন খেলে ৭ উইকেট নিয়ে ড্র করাওতো কঠিন! বাংলাদেশ তাই এখন ৭ উইকেটের অপেক্ষাতেই আছে।