ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে ॥ ইকোনমিস্ট

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১২ নভেম্বর ২০১৮

 বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে ॥ ইকোনমিস্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ দুই দফা ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘দি ইকোনোমিস্ট। লন্ডনভিত্তিক অর্থ ও অর্থনীতি বিষয়ক এ সাপ্তাহিক বলছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে সে কারণেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ‘কঠোরতার’ ওপর নির্ভর না করলেও চলবে। তবে প্রতিবেদনে একই সঙ্গে এও বলা হয়েছে, ‘উন্নয়নের এই চিত্র যেন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে যায় না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মূল বৈশিষ্ট্য হলো ‘পেলে সব পেতে হবে, নইলে মোটেই না’। ‘নির্বাচনের আগে হঠাৎ নমনীয় ক্ষমতাসীন দল’ এ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপের বিষয়ে। বিষয়টিকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক বলেই মনে করছে ইকোনোমিস্ট। বলা হয়েছে, এক সপ্তাহ আগেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে মানুষের চিন্তাভাবনা অন্য রকম ছিল। অনেকেই মনে করছিল, আগামী নির্বাচনে খুব বেশি ভোট পড়বে না। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবারও যেভাবেই হোক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে চাইবে। কিন্তু হঠাৎ করেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। পরিবর্তিত এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মানুষ আশা করছে, ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে। যদিও ভোট সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত অক্টোবর মাস দুটি বড় চমক নিয়ে এসেছে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে বড় দুই রাজনৈতিক দলের একটি বিএনপি তাদের দীর্ঘদিনের ডানপন্থী মিত্রদের বাদ দিয়ে তুলনামূলক উদার ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট করে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন এই জোটের নাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর চেয়েও বড় চমকটি আসে পরে। কঠোর অবস্থানে থাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হঠাৎ করেই নমনীয় হয়। তারা ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দুই দফায় সংলাপ হয়। এই জোটের দাবিগুলোর অন্যতম হলো দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সংলাপের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঐক্যফ্রন্টের দাবিগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে সংবিধান লঙ্ঘন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। ঐক্যফ্রন্ট ইঙ্গিত দিয়েছে, দাবি আদায় না হলে তারা আন্দোলন-বিক্ষোভ করবে। তবে জোরালো আন্দোলন কিংবা নির্বাচন বয়কট, কোন পথে এগোবে তা নিয়ে তারা এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। এর আগে নির্বাচন বয়কট করে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে বিএনপির চেয়ারপার্সন কিংবা দলটির কর্মী-সমর্থকদের। সংসদে দলটির অনুপস্থিতি ক্ষমতাসীনদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে মামলা-হয়রানির শিকার হয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। বিএনপির হিসাবমতে, দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার মামলা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরেই দলটির সাড়ে চার হাজারের বেশি সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৩৪টি। তার ছেলে ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের কঠোরতার ওপর নির্ভর না করলেও চলবে-এমন মন্তব্য করে ইকোনোমিস্ট বলেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নানা দিক থেকেই বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। গত এক দশকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। গত বছর তা ভারত ও পাকিস্তানকেও ছাড়িয়ে গেছে, ৭ দশমিক ৩। মোট দেশজ উৎপাদনেও (জিডিপি) বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়ে গেছে। শিশুমৃত্যুর হার কমানো এবং মাধ্যমিকে ভর্তির হার ও গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ অনেক দিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। কিন্তু উন্নয়নের এই চিত্র যেন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে যায় না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মূল বৈশিষ্ট্য হলো ‘পেলে সব পেতে হবে, নইলে মোটেই না’। কোন বিরোধই সংসদে আলোচনা বা ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে সমাধান হয় না, তা হয় দেশ অচল করে দেয়া হরতাল অবরোধে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতায় শুধু ভোট গ্রহণের দিন নিহত হয় ১৮ জন। ১শ’র বেশি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। বিরোধীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত হরতাল বা অবরোধ ডাকার লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নয়নে সরকারী দল বিরোধী জোটের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। ুরাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে বাংলাদেশের জন্যই তা মঙ্গলজনক। এর মাধ্যমেই এ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ইকোনোমিস্ট। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই ইকোনোমিস্ট এক প্রতিবেদনে ‘শেখ হাসিনা আবার নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন’ বলে আভাস দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সম্ভবত ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন, বাংলাদেশী নেতা হিসেবে পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য তিনি আবার বিজয়ী হতে যাচ্ছেন। তবে পত্রিকাটি আগেই নির্বাচনকালীন মাসগুলোকে সঙ্কটপূর্ণ বলে অভিহিত করেছিল।
×