ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দুই এমপি পদপ্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়ায় দুই পথচারী নিহত

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১১ নভেম্বর ২০১৮

দুই এমপি পদপ্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়ায় দুই পথচারী নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকায় আওয়ামী লীগের এমপি পদে দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর নেতাকর্মীদের শোডাউনকালে পিকআপ চাপায় দুই যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা পিকআপ নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আবার অনেকেই বলেছেন, নিহত যুবকরা প্রার্থীদের মিছিলে ছিলেন। তবে কার পক্ষের মিছিলে ছিলেন তা নিশ্চিত নয়। আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। এদিকে ঢাকার মোহাম্মদপুর ও আদাবরে শনিবার আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গাড়িচাপায় দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দুই দিনের মধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, আজকে (শনিবার) অনাকাক্সিক্ষত-অনভিপ্রেত একটা ঘটনা ঘটে গেছে আদাবরে। সে ব্যাপারে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তার নির্দেশনা জানিয়ে দিতে। দুই দিনের মধ্যে এই ঘটনা তদন্ত করে রিপোর্ট জানতে চান। একটি চমৎকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কেন অনাকাক্সিক্ষত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল-এ ব্যাপারে যারাই দায়ী হোক তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। শনিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে রাজধানীর আদাবর থানাধীন লোহারপুল এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা হচ্ছেন, আরিফ (১৮) ও সুজন (২০)। নিহত সুজন নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। তিনি নবীনগর হাউজিংয়ের ১০ নম্বর রোডের বাসিন্দা নুরুল আমিনের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসনে এমপি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও একই আসনে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। সাদেক খানের নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা উপলক্ষে শোডাউন করতে যাচ্ছিল। গাড়িবহরটি মোহাম্মদপুর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ের সামনে লোহারপুল এলাকায় গেলে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আগে যাওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এ সময় দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় মিছিলের মধ্যে পড়া নিহত দুই যুবক পিকআপ থেকে লাফিয়ে পড়ে নিরাপদ জায়গার যাওয়ার চেষ্টা করেন। চালক নিজেও নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার জন্য দ্রæত গাড়িটি ঘোরানোর চেষ্টা করেন। দ্রæত ঘোরানোর সময় গাড়ি চাপায় অন্তত ১৭ জন আহত হন। আদাবর থানার ওসি কাওসার আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, পিকআপের চাপায় আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় সুজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও আরিফকে শ্যামলীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় কোন পক্ষ বা কেউ মামলা করতে চাইলে তারা মামলা নিবেন। তবে পুলিশ বাদী হয়ে মারামারি ঘটনায় কোন মামলা দায়ের করবে না বলেও জানান ওসি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত দুই তরুণ আওয়ামী লীগের দুই গ্রæপের মিছিলের মধ্যে ছিলেন। তবে তারা মিছিল করার উদ্দেশ্যেই সেখানে গিয়েছিলেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। নিহতরা কোন গ্রæপের সদস্য কিনা সে সর্ম্পকেও কোন তথ্য মেলেনি। স্থানীয়রা জানান, নিহত দুই যুবক বেড়াতে বের হয়েছিলেন। তারা মিছিলর মধ্যে পড়ে হতভম্ব হয়ে পড়ে। তারা দ্রæত এলাকা ত্যাগ করতে পিকআপে চড়ে বসেন। দুই গ্রæপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে যুবকরা পিকআপ থেকে নেমে দ্রæত নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ওই সময় পিকআপের চাপায় তারা আহত হয়ে মারা যান। নিহত দুই যুবক পরিস্থিতির শিকার। নিহত আরিফের পিতা ফারুক সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, সাদেক খানের সমর্থকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। ওই সংঘর্ষে তার ছেলের মৃত্যু হয়। যদিও সাদেক খান সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতাকর্র্মী সমর্থকদের হামলায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে আদাবর থানা যুবলীগের আহŸায়ক আরিফুল ইসলাম তুহিন। ঘটনাটি নিয়ে দুই এমপি প্রার্থীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে। যদিও আদাবর থানা যুবলীগের আহŸায়ক আরিফুল ইসলাম তুহিন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে সাংবাদিকদের বলেছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর জনকণ্ঠকে জানান, পুরো এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকার ওপর বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে। এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। নিহতদের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রয়েছে। সুরতহাল করার পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা যায়নি। এমনকি যে পিকআপের চাপায় দুই জনের মুত্যুর কথা বলা হচ্ছে, সেই পিকআপটিও জব্দ করা যায়নি। তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে। মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ঘটনার নেপথ্যে আরও কোন কাহিনী আছে কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে। সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা হয়নি। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই মামলা দায়ের করা হবে।
×