ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেট টেস্টে বিপদে বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ৫ নভেম্বর ২০১৮

 সিলেট টেস্টে বিপদে বাংলাদেশ!

মিথুন আশরাফ ॥ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে মহাবিপদে পড়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট হারের শঙ্কাই জেগে উঠেছে। যে অবস্থা তাতে জিম্বাবুইয়ের দ্বিতীয় ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে দিতে না পারলেই হারের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠবে। জিম্বাবুইয়ের ছুড়ে দেয়া বড় টার্গেট তখন অতিক্রম করতে হবে। তা নাহলে হার হবে টেস্টে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্ট স্মরণীয় করে রাখবে কি বাংলাদেশ, উল্টো নিজেরাই দুঃস্মৃতির তলে পড়ে গেছে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসেই ১৪৩ রানে গুটিয়ে গিয়ে ১৩৯ রানে পিছিয়ে পড়েছে। এরপর জিম্বাবুইয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয়দিন শেষ হওয়ার আগে ১ রান করায় ১৪০ রানে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। টেস্টের প্রথমদিনে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৩৬ রান করে ফেলেছিল জিম্বাবুইয়ে। তাতে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয়দিন এই রানের সঙ্গে আরও ৪৬ রান যোগ করতেই অলআউট হয় সফরকারীরা। ২৮২ রান করে। ৬ উইকেট নেয়া তাইজুল ইসলামের বোলিং ঘূর্ণির সামনে পড়ে বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। পিটার মুরই (৬৩*) উইকেট আঁকড়ে থাকতে পেরেছেন। তবে জিম্বাবুইয়ের ব্যাটিংয়ের পর যখন বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে খেলতে নামল, টপাটপ উইকেট পড়তে শুরু করল, সবার চোখ কপালে ওঠার অবস্থা হল। যেখানে জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা নিজেদের মেলে ধরতে পেরেছেন, সেখানে বাংলাদেশ অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরাও কিনা অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন। অভিষেক টেস্টে খেলতে নেমে আরিফুল হকাই (৪১*) বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরটি করতে পেরেছেন। ব্যাটিংয়ে যাদের নিয়ে এত ভরসা ছিল সেই লিটন কুমার দাস (৯), ইমরুল কায়েস (৫), মুমিনুল হক (১১), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (০), মুশফিকুর রহীমরা (৩১) হাল ধরতে পারলেন না। টেন্ডাই চাতারা (২/২৮), কাইল জার্ভিসের (৩/১৯) গতির সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। এরপর সিকান্দার রাজা (৩/৩৫) প্রথম ইনিংসে শেষের ধস নামান। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১৪৩ রানের বেশি করতে পারেনি। জিম্বাবুইয়ে থেকে ১৩৯ রানে পিছিয়ে থেকে ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দিনের শেষভাগে ২ ওভার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে জিম্বাবুইয়ে ১ রান করে। হ্যামিল্টন মাসাকাদজার ব্যাট থেকে রানটি আসে। আজ তৃতীয়দিনে মাসাকাদজা ও ব্রায়ান চারি জিম্বাবুইয়ের স্কোরবোর্ডকে আরও মজবুত করতে ব্যাট হাতে নামবেন। জিম্বাবুইয়ের স্কোরবোর্ডে দ্বিতীয় ইনিংসে যত বেশি রান যোগ হবে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ততই বাড়তে থাকবে। তাতে বিপদও আর বাড়তে থাকবে। জিম্বাবুইয়েকে খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে দেয়নি বাংলাদেশ। মূলত এক স্পেশালিস্ট পেসার নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। পেসার আবু জায়েদ রাহি কিছুই করতে পারেননি। অথচ জিম্বাবুইয়ে পেসারদের কি দাপট দেখা গেছে। বলগুলো যেন বুলেটের গতিতে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের সামনে এগিয়ে এসেছে। কখনও বল বাউন্স হয়েছে। সেই বাউন্সগুলোর সঙ্গে গতি মিলে এমনই অবস্থা দাঁড় হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা অসহায় হয়ে পড়েন। শুধু কি জিম্বাবুইয়ে পেসারদের দাপটই দেখা গেছে। স্পিনারদের ঘূর্ণি ফাঁদেও পড়েছেন ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে শুধু তাইজুল ইসলাম সাফল্য পেয়েছেন। ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো পঞ্চম উইকেট বা তার বেশি উইকেট শিকার করতে পেরেছেন। তাইজুলের বোলিংয়েই জিম্বাবুইয়েকে বেশিদূর এগিয়ে যেতে দেয়নি বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটসম্যানদের পালা ছিল। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা ডুবিয়ে দিলেন। এমনই খেলা খেললেন যেন লজ্জা যুক্ত হলো। দলের ১৯ রানেই চার উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ইমরুল, লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত (৫) ও মাহমুদুল্লাহ সাজঘরে ফেরেন। এরপর এক এক করে দলের ৪৯ রানের সময় মুমিনুল, ৭৮ রানের সময় মুশফিক, ১০৮ রানের সময় মেহেদী হাসান মিরাজ (২১), ১৩১ রানের সময় তাইজুল ইসলাম (৮), ১৪৩ রানের সময় নাজমুল ইসলাম অপু (৪) ও একই সময়ে রাহি (০) আউট হন। দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে এত খারাপ অবস্থা এর আগে কখনই হয়নি বাংলাদেশের। এর আগে ২০০ রানের নিচে কখনই অলআউট হয়নি বাংলাদেশ। এবারই প্রথম ১৫০ রানও করতে পারল না স্বাগতিকরা। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এর আগে দেশের মাটিতে ২০০১ সালে ১০৭ রান করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সেটি প্রথম ইনিংসে ছিল। দেশের মাটিতে সেটিই ছিল জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার বাজে রেকর্ড। এবার দেশের মাটিতে দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার বাজে রেকর্ড জমা হলো। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল যে টেস্টে কত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান তাও ভালভাবেই বোঝা গেল। প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের এমন বেহাল দশায় বাংলাদেশের হারের চিত্রই যেন ফুটে উঠতে থাকে। এখন বাঁচার পথ একটাই জিম্বাবুইয়ের দ্বিতীয় ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে দিয়ে টার্গেট যত কম নিয়ে ম্যাচ বের করা যায়। নাহলে বাংলাদেশ যে টেস্টটিতে মহাবিপদে পড়ে গেছে সেই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
×